পাকিস্তান শাসিত কাশ্মিরে ভারতের সেনাবাহিনীর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ এর পর দুই পক্ষ নতুন করে হামলা-পাল্টা হামলার আশঙ্কা করলেও গতকাল রবিবার সীমান্তে নতুন করে গোলাগুলির খবর পাওয়া যায়নি। সীমান্তে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দুই দেশই তাদের সামরিক বাহিনীকে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রেখেছে। বিনা উস্কানিতে যেকোনো ধরনের হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে উভয় দেশ।
এদিকে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মিরে ভারতের দাবিকৃত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক মিথা প্রমাণে ব্যস্ত পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এজন্য গণমাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে তারা। শনিবার দেশটির ৪০ সাংবাদিকের একটি দলকে নিয়ন্ত্রণরেখায় নিয়ে যাওয়া হয় ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ হয়নি তা দেখানোর জন্য। এ সময় পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ বিভাগের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল অসীম বাজওয়া বলেছেন, উসকানিমূলক শব্দ ব্যবহার করে ভারতই উত্তেজনা ও যুদ্ধপরিস্থিতি তৈরি করছে। তবে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মাধ্যমে ভারতীয় সেনারা বিশ্বকে তাদের সাহস দেখিয়েছে।
অন্যদিকে, গুজরাট উপকূলের কিছু দূর থেকে ৯ পাকিস্তানি নাগরিকসহ একটি সন্দেহজনক পাকিস্তান নৌকা আটক করেছে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী। আরব সাগর থেকে আটক হওয়া এই নৌযানটিকে গতকাল গুজরাটের পোরবন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে। কী উদ্দেশে পাকিস্তানি নৌকাটি গুজরাট উপকূলের কাছাকাছি এসেছিল, তা খতিয়ে দেখার জন্য পোরবন্দরেই নাবিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আর লাহৌরে লো ফ্লাইং জোনে বিদেশি বিমানের চলাচল নিষিদ্ধ করেছে পাকিস্তান। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিমানগুলি আকাশে খুব অল্প উচ্চতায় উড়ে, তাই সেগুলির মহড়া বা আগামী দিনে বৃহত্তর প্রয়োজনে সেগুলির ব্যবহারের জন্যই হয়তো এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে পাকিস্তানে। খবর:এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার পত্রিকা ও ডনের।
ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দাবিকে মিথ্যা প্রমাণে কাজ করছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। কারণ ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ এখন দুই দেশের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা-আত্মমর্যাদার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার সরেজমিনে ঘটনা দেখার জন্য ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের একটি দলকে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনা কর্তৃপক্ষ। পাকিস্তানের আইএসপিআর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল অসীম বাজওয়া বলেন, ঘটনাস্থলে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কোনও আলামত পাওয়া যায়নি। আর তাতে প্রমাণ হয় ভারতীয় দাবির সত্যতা নেই।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়, দেশি-বিদেশি ২০টি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিত্বকারী ৪০ জন সাংবাদিকের একটি দলকে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিস্থিতি যাচাইয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আঞ্চলিক কমান্ডার ও সেনামুখপাত্রের ব্রিফিং ছাড়াও সাংবাদিকরা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। স্থানীয়রা তাদের এলাকায় বৃহস্পতিবার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক কিংবা অন্য তত্পরতার কথা অস্বীকার করেছে বলে জানায় ডন।
এদিকে, ভারতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং গতকাল রবিবার বলেছেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মাধ্যমে ভারতীয় সেনারা তাদের সাহসিকতার নজির সারা বিশ্বকে দেখিয়েছেন। তাদের অভিযান ভারত গর্ব বোধ করে। নয়াদিল্লিতে তিনি সাংবাদিকদের আরো বলেন, সারা বিশ্ব সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা জেনেছে। এই অভিযান পরিচালনা করে সেনারা আমাদের গর্বিত করেছে। ভারত এখনো অভিযানের ভিডিও বা ফুটেজ প্রকাশ না করায় পাকিস্তান অভিযান নিয়ে যে সন্দেহ পোষণ করছে সে বিষয়ে রাজনাথ সিং বলেন, একটু অপেক্ষা করুন, দেখতে পাবেন।
No comments:
Post a Comment