দেশের নৌবাহিনীতে প্রথমবারের মতো যুক্ত হলো সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ। চীনের কাছ থেকে পাওয়া দুটি সাবমেরিন রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবহরে যুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাবমেরিন দুটির নাম দেয়া হয়েছে নবযাত্রা এবং জয়যাত্রা। চট্টগ্রামের বিএনএস ঈসা খাঁ নৌ জেটিতে ঘটা করে যার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় তিনি বলেন, আমরা কারো সাথে কখনো কোন যুদ্ধে লিপ্ত হতে চাইনা। কিন্তু যদি কেউ আমাদের আক্রমণ করে তাহলে আমরা যেন তার সমুচিত জবাব দিতে পারি সেই প্রস্তুতি আমাদের সবসময় থাকবে। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা যা যা করণীয় তা করে যাচ্ছি।
নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ঠিক এমনটাই প্রস্তুত থাকাটাই তাদের উদ্দেশ্য। এই একই ধরনের ডুবোজাহাজ ব্যবহার করে চীনের নৌবাহিনী আর তাদের কাছ থেকেই ব্যবহৃত দুটো সাবমেরিন কিনেছে বাংলাদেশ।
সংস্কারের পর গত বছরের শেষের দিকে সেটি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নৌবাহিনীর রিয়ার এডমিরাল এএসএমএ আউয়াল বলছেন, আগে স্থল ও আকাশ পথে হুমকি মোকাবেলার সক্ষমতা আমাদের ছিলো। এ দুটি সাবমেরিন যুক্ত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের নৌবাহিনী জল, স্থল ও আকাশপথ তিন ক্ষেত্রেই সক্ষমতা অর্জন করলো।
নৌবাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দুটো সাবমেরিনই ডিজেল-ইলেকট্রিক চালিত। সাবমেরিন দুটি টর্পেডো এবং মাইন দ্বারা সুসজ্জিত যা শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনকে আঘাত করতে সক্ষম। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ১৭ নটিক্যাল মাইল। প্রতিটি ডুবোজাহাজে থাকছেন ৫৭ জন কর্মকর্তা ও ক্রু।
প্রতিরক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল জেনস ডিফেন্স উইকলি বলছে, এই সাবমেরিনের এর ক্রয় মূল্য ২০৩ মিলিয়ন ডলার। যদিও ক্রয় মূল্য সরকারের তরফ থেকে কিছু জানা যায়নি।
কিন্তু ঠিক কী ধরনের হুমকি মোকাবেলায় এই বিপুল অর্থ ব্যয় করা হলো?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এহসানুল হক বলছেন, বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে কোন হুমকি না থাকলেও এর গুরুত্ব আসলে কৌশলগত।
তিনি বলছেন, মায়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমা নির্ধারণের পরে বাংলাদেশ বিশাল একটি সমুদ্র এলাকার নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের দায়িত্বও বেড়ে গেছে অনেক, বিশেষ করে নৌবাহিনীর। বাংলাদেশের নৌবাহিনী অনেক দুর্বল অবস্থানে ছিলো। সেই প্রেক্ষাপট থেকে তার সক্ষমতা আগের থেকে বাড়ানোর দরকার ছিলো।
অন্যদিকে রিয়ার এডমিরাল আউয়াল বলছেন, বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্য মূলত চলে সমুদ্রে পথে। আর সেই সাথে সমুদ্রে গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানে বাংলাদেশের যে পরিকল্পনা সেই কার্যক্রমের নিরাপত্তা দেয়াও একটি উদ্দেশ্য।
চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর একটি। কূটনৈতিক দিক দিয়েও খুব গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এই সাবমেরিন ক্রয়কে।
তবে সম্ভবত এই অঞ্চলে বাংলাদেশের সক্ষমতা জানান দেয়াটাও একটি উদ্দেশ্য।
সূত্র: বিবিসি
No comments:
Post a Comment