বিমান অন্য। তার যাত্রীরাও ভিন্ন। তবু দুটি বিমানযাত্রা কেমন এক সুতোয় মিলিয়ে দিল শাপেকোয়েনসের অতীত ও বর্তমানকে!
গত বছরের ২৮ নভেম্বর এমন করেই বিমানে চেপেছিলেন ব্রাজিলের ক্লাবটির ফুটবলাররা। কোপা সুদামেরিকানার ফাইনাল খেলতে যাচ্ছিলেন কলম্বিয়ার অ্যাটলেটিকো ন্যাসিওনালের মাঠে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা সেই বিমানযাত্রাটিকে শাপেকোয়েনসের কাছে বানিয়ে দিল শাপের মতো। বিমানের ৭৭ জন যাত্রীর ৭১ জনই প্রাণ হারিয়েছেন, তাতে শাপেকোয়েনসের খেলোয়াড়-কোচও ছিলেন ১৯ জন!
দুঃস্বপ্নের সেই অধ্যায়ের তিন মাস পর আবারও ব্রাজিলের বাইরে কোনো দেশের বিমানে চড়লেন শাপেকোয়েনসের খেলোয়াড়েরা। এবার গন্তব্য ভেনেজুয়েলা, উদ্দেশ্য দেশটির জুলিয়া ক্লাবের সঙ্গে কোপা লিবার্তাদোরেসের প্রথম লেগ খেলা। বাংলাদেশ সময় আজ সকাল ৬.৪৫ মিনিটে হবে ম্যাচটি। তবে ম্যাচ ছাপিয়েও এখানে বড় হয়ে উঠছে শাপেকোয়েনসের নতুন দিনের স্বপ্ন।
স্বপ্ন ছিল শাপেকোয়েনসের আগের বিমানযাত্রার যাত্রীদেরও। রূপকথা লেখার স্বপ্ন। মাত্র সাত বছরের মধ্যে ব্রাজিলের ফুটবলের চতুর্থ স্তর থেকে উঠে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলা—চাট্টিখানি কথা তো নয়। তবে রূপকথা ছাপিয়েও সেবার বড় হয়ে ওঠে শোকগাথা।
একটু ভুলই হলো। শাপেকোয়েনস ঠিকই জিতেছে কোপা সুদামেরিকানা। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ অ্যাটলেটিকোই কনমেবলকে অনুরোধ করেছিল ট্রফিটা ব্রাজিলের ক্লাবটিকে দিয়ে দিতে। সেই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন বলেই অবশ্য আজ কোপা সুদামেরিকানার ম্যাচটি খেলতে পারছে শাপেকোয়েনস।
পরশু বিমানে ওঠার আগে, বিমানে উঠে ছবি তুলেছেন শাপেকোয়েনসের ফুটবলাররা। ঠিক আগেরবারের মতো। ক্লাবের ইতিহাস নতুন করে লেখার স্বপ্নই তাঁদের চোখে। হতে পারে এঁদের ২২ জনই এবার নতুন এসেছেন ক্লাবে, নভেম্বরে দুর্ঘটনাটা না ঘটলে এঁদের বেশির ভাগই এখানে থাকার কথা ছিল না। তবু নতুন ক্লাবের পথচলায় এই অল্প কদিনেই পা মিলিয়ে নিয়েছেন দলটির ‘নতুন’ খেলোয়াড়েরা। এই মৌসুমেই দলে আসা স্ট্রাইকার তুলিও দে মেলো যেমন এই ম্যাচের আগে বললেন, ‘সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব যেন স্বর্গে থাকা সঙ্গীরা আমাদের নিয়ে গর্ব করতে পারে। আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা অনেক। টুর্নামেন্টে যতটা সম্ভব এগোতে চাই।’
শাপেকোয়েনসের প্রতিপক্ষ জুলিয়ার জন্যও ম্যাচটা ঐতিহাসিক। এটিই ক্লাবটির ইতিহাসে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ম্যাচ! তবু আলোটা যে এই ম্যাচে শাপেকোয়েনসের ওপরই থাকবে, সেটি জানেন জুলিয়া কোচ ড্যানিয়েল ফারিয়াস, ‘জানি পুরো বিশ্বেরই মনোযোগ এই ম্যাচটার দিকে থাকবে, সবাই শাপেকোয়েনসকেই সমর্থন করবে। অনেক আবেগের একটা ম্যাচ হবে এটি।’ জুলিয়া গোলকিপার রেনি ভেগাও বললেন, ‘এটা অনেক বিশেষ একটা ম্যাচ। দুর্ঘটনার কারণে, আর ওই খেলোয়াড়দের কারণে যাঁরা দুর্ভাগ্যবশত আর আমাদের সঙ্গে নেই।’
তবে শোক ছাপিয়েও ফুটবলেই প্রেরণা খুঁজছেন ভেগা। তাঁর চোখে, শাপেকোয়েনসকে সম্মান জানানোর সবচেয়ে ভালো উপায়ই হলো, ‘দুর্দান্ত একটি ম্যাচ আর তাতে ভালো খেলে দলের জয়!’ আবেগকে পাশ কাটিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজেই মেতে উঠতে চান, ‘দুর্ঘটনাটা অন্য গল্প। মাঠে নামার পর শুধু ৯০ মিনিট আর তিনটি পয়েন্টই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে।’
শাপেকোয়েনস নিশ্চয়ই সেটিই চায়। শোকগাথা ভোলা তো সম্ভব নয়, তবে সেটিকে শক্তি বানিয়ে নতুন রূপকথা লেখার যাত্রাই হোক না এটি! এএফপি।
No comments:
Post a Comment