মানব সমাজে দেশ থেকে দেশান্তর সৃষ্টির শুরু থেকেই চলে আসছে। প্রতিটি ধর্মের ধর্ম প্রবর্তক ও ধর্ম প্রচারকগন ধর্ম প্রচারে, রাজা বাদশাহদের দ্বারা পার্শ্ববর্তী বা দূরবর্তী দেশ দখল করে সাম্রাজ্য বিস্তারে কিংবা পরিব্রাজকরা পদব্রজে, বণিকদের দেশে দেশে বিচরণে, আবিষ্কারের নেশায় সাগরে জাহাজ ভাসিয়ে, যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে, দেশ ভাগের নিমিত্তে বা ধর্ম,বর্ণ, জাতিগত সন্ত্রাস ও দাঙ্গাজনিত কারণে, জনসংখ্যার চাপে, ভারসাম্যহীন পরিবেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ ও অভাবের কারণে কিংবা ভাগ্যোন্নয়নে উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় মানুষ দেশান্তরিত হয়। মানুষের দ্বারা মানুষের জন্য পরিচালিত চলমান এই প্রক্রিয়া মূলত: দূরবর্তী অঞ্চলে বা ভিন্নদেশে কখনো একাকী কখনো পরিবারসহ কখনো পূরো গোত্র বা পূরো জনগোষ্ঠী সহকারে অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আগমন নির্গমনের প্রক্রিয়াটি আবহমান কাল ধরে চলে আসছে। আনন্দ ভ্রমন-সেতো সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়।
বিদেশে আনন্দ ভ্রমন ও প্রবাস গমন:
আমাদের বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার আলোকে গ্রাম বা শহরের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি মোটামুটি অবস্থাপন্ন লোকজনদের বিদেশ ভ্রমন ‘গরীবের ঘোড়ারোগ’ বলে সমাজের উপর তলার স্বঘোষিত তথাকথিত কিছু লোককে ঠাট্টা-মশকরা করে বলতে দেখা যায়। যে কোন মানুষের শখ ও আকাঙ্খার বিষয়টি আবহমান কাল ধরে মানবসমাজের জন্মলগ্ন থেকেই শুরু। আনন্দভ্রমন বা বিদেশ ভ্রমন সেরকম একটি শখ। অনেকের সাধ থাকলেও সাধ্য থাকেনা। শখ, সাধ আর গন্তব্য বলতে কুয়াকাটা, জাফলং, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি,পতেঙ্গা কিংবা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বেলাভূমি হচ্ছে বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষের আনন্দ ভ্রমনের অন্যতম স্থান। তবে নিকট অতীত আর বর্তমানে এরাই সহায় সম্বল বিক্রী করে জীবন জীবিকার প্রয়োজনে পরিবার বা স্বজনদের সহযোগীতায় প্রবাস গমন করে স্থিতিশীল হলে-তথাকথিত স্বঘোষিত এলিট শ্রেনীর দাবীদারদের অনেককেই এদের আশ্রয়ে থেকে যে কোন ধরনের সহায়তা নিতে দ্বিধা বা কুন্ঠাবোধ করতে দেখা যায়না। বিশেষত রাষ্ট্রীয় কর্মে সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরা, সামরিক, বেসামরিক আমলারা ও কূটনৈতিক মিশনের সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গ জনগনের অর্থে বিদেশ ভ্রমনের বিষয়টি সকলেই জানে।
অন্যান্যরা যেমন বৈধ ও অবৈধ উপায়ে যেভাবেই হোক না কেনো-বেশ কিছু বিত্তশালী,অসাধু ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, ঘুষখোর বা পুকুর চুরি করা কিছু অসাধু সরকারী কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমন করতে দেখা যায়। এদের বিদেশ গমনের পেছনে আনন্দ ভ্রমন বা চিকিৎসা গ্রহন একমাত্র কারন নয় বলে সাধারন প্রবাসীদের ফিসফিস করে কথা বলতে দেখা যায়। যেমন বিদেশে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের বিষয়টি সুনিশ্চিত করা। এসব কালো টাকার মালিকদের কেউ না কেউ কোন না কোন দেশে বিভিন্ন পরিচয়ে অবস্থানের বিষয়টি খেটে খাওয়া প্রবাসীদের কাছে এখন জলবৎ তরলং। কালো টাকা পাচার, বিদেশে অসামান্য দামে বাড়ী-ঘর কেনা, সন্তান-সন্ততির লেখাপড়া, কনভেনশনে যোগদান, ব্যবসা বা নানা ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্টতার অজুহাতে এদের আনন্দ ভ্রমন সাধারন প্রবাসীদের নিত্যদিনের আড্ডার মুখরোচক খবরের অংশ বটে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া দিন এনে দিন খাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রফেশনাল কাজে নিয়োজিত লোকজন ডলার পাউন্ড রিয়াল কামাই করে যেখানে বছর শেষে সঞ্চয়ের পরিমান আগে থেকে নির্ধারিত থাকে-সেখানে এরকম লোকজনদের কর্মকান্ড স্বাভাবিকভাবেই প্রবাসীদের ভাবিয়ে তোলার কথা। এদের অহমিকা,আত্মগরিমার এতো বেশী নির্লজ্জ প্রকাশ দেখে নৈতিকচরিত্র সম্পন্ন প্রবাসীদের দশহাত দূরে থাকতে দেখা যায়। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। সকলকে একই নিক্তিতে মাপা বা দোষারূপ করা মারাত্মক অন্যায়। নৈতিকতার মানদন্ডসম্পন্ন ভ্রমনপিপাসুদের প্রবাসীরা কদরদান করতে কখনো দ্বিধাবোধ করেনা। উজাড় করা ভালোবাসা দিতে প্রবাসীদের কার্পণ্য করতে দেখা যায় না। নৈতিক চরিত্র সম্পন্ন এসব লোকজন দেশে-বিদেশে সর্বত্র শ্রদ্ধেয়।
প্রবাস গমনে ঝক্কিঝামেলা-আহাজারি:
কর্মসংস্থানের নিরিখে পারিবারিক সামাজিক বা পারিপার্শ্বিকতার চাপ কিংবা বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত বাংলাদেশের তরুন, যুবক ও মধ্যবয়সী দক্ষ-অদক্ষ,শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত লোকজন যে কোন মূল্যে বিদেশ গমন করে সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। কয়েক যুগ ধরে বলা হলেও বিষয়টি কোন না কোনভাবে এখন সর্বজনস্বীকৃত বা সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশের জনগনের ট্যাক্সের অর্থে লালিত মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে স্কলারশীপ নিয়ে গমন, লটারী জিতে আমেরিকা গমন কিংবা বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোনদের মাধ্যমে বৈধ উপায়ে অনেকেরই বিদেশ গমন এখন প্রায়শ চোখে পড়ে। কিন্তু সবকিছু বৈধ হওয়া স্বত্ত্বেও টিকেট ক্রয় থেকে শুরু করে চারিত্রিক সনদ,পুলিশ রিপোর্ট, পাসপোর্ট বানানো, বিভিন্ন এ্যাজেন্সির কর্মকান্ড ছাড়াও নানাধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বিদেশী দূতাবাস সমূহের ঝক্কিঝামেলার বিষয়টি কেবলমাত্র ভূক্তভোগীরাই জানে।
তাছাড়াও বিদেশে গমনের নামে সহায়-সম্পদ বিক্রী করে দালালদের খপ্পরে অসংখ্য মানুষ সর্বশান্ত হওয়ার খবর পত্রিকান্তরে অহরহ নজরে পড়ে। তারপরেও সোনার হরিণের আশায় বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো অসংখ্য মানুষ জীবনের মায়া তুচ্ছ করে বঙ্গোপসাগরে, ভূমধ্যসাগরে, আন্দামান-নিকোবারে, থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে বা উপকূলে, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ইউরোপের সমুদ্রের পানিতে কিংবা উপকূল সংলগ্ন এলাকায়, মধ্যপ্রাচ্যে কিংবা আফ্রিকার মরুভূমির মরিচীকায় হাজারো মানুষের করুন কাহিনী ও মৃত্যুর বিষয়টি গনমাধ্যমে সারাদেশে বেশ আলোচনা সমালোচনার বিষয়টি কমবেশী দেশের সাধারন মানুষ অবগত। তবুও সোনার হরিণ হাসিল করার মিছিল থেমে নেই।
১৯৭৫’ পরবর্তি সময়ে জাসদের অধিকাংশ ও আওয়ামী লীগের কিছু মেধাবী ও ত্যাগী কর্মীদের নিরুপায় হয়ে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহন করার কথা বাদ দিলে বৈধ-অবৈধ উপায়ে জলপথ, স্থলপথ বা আকাশপথে বিদেশে কর্মোপলক্ষে কতো চড়াই উৎরাই আর প্রতীক্ষার প্রহর পেরিয়ে অবশেষে ভাগ্যবান হলে শেষ পর্য্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টি ভূক্তভোগী আর ভূক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরাই জানেন। এসব কাহিনী বড়োই করুন। এদেরও অনেকের বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতার কথা বাদ দিলে সরকারী সহযোগীতা বা অর্থানুকুল্যের বিষয়টি নিতান্ত হাস্যকর।এদের সহযোগীতার ক্ষেত্রে আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলোর চরম ব্যর্থতার বিষয়টি দেশে-বিদেশে পত্রিকান্তরে আলোচিত সমালোচিত হতে দেখা যায়। অনেককে বিদেশ থেকে দালালদের কর্তৃক ভুয়া কাগজপত্র ও নকল পাসপোর্টের কারনে কিংবা সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের আইনের বেড়াজালে আটকে পড়ে দেশে ফেরত পাঠানো হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও পরিবারের আহাজারি, আর্তনাদ, করুন দশা ও পরিনতি কত ভয়াবহ হতে পারে-তা শুনলে যে কোন পাষান হৃদয়কেও চুর্ণবিচুর্ণ হতে দেখা যায়। এ ধরনের কাহিনী এখন নিত্যনৈমিত্তিক অহরহ দেখা যায়।
মৃত্যুর মিছিল,আহাজারী এখন কাউকে কাঁদতে দেয় না। চতুর্দিকে কেন যেন এক ধরনের গা ছমছম করা নীরবতা। বাংলাদেশের কুটনৈতিক মিশনগুলোর মাধ্যমে কিংবা সরকারী পর্যায়ে এ ধরনের ব্যক্তি ও পরিবারকে ধ্বংসোম্মূখ অবস্থা থেকে অর্থনৈতিকভাবে পরিত্রানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় বা সেক্টরগুলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতার বাইরে কোন ওয়ান ষ্টপ সার্ভিস কিংবা পথ ও পন্থা অবলম্বনের কার্য্যকরী ব্যবস্থার কথা তেমন শুনা যায় নি। অনেককে আফসোস করে পরবাসী জীবনকে উদ্বাস্তুদের জীবন বলে অভিহিত করতে দেখা যায়।
দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অতঃপর:
দীর্ঘদিনের ত্যাগ আর সংযমের দেয়াল পেরিয়ে পরিবার বা স্বজনদের সহায়তায় সহযোগীতায় কিংবা বিশেষ ক্ষেত্রে পরিবারের শেষ সম্বলটুকু বিক্রী করে অনাগত দিনগুলোতে সুখের আশায় এরা পরবাসী। সময়ের আবর্তন বিবর্তনে যে যে দেশে যে অবস্থায় অবস্থান করে-সে অবস্থান থেকে সামান্য কিছু লোকজনদের বাদ দিলে (এদের বেশীর ভাগ জনগনের ট্যাক্সের অর্থে শিক্ষিত পেশাদার গুটিকয়েক লোক) সকলেই পরিবার, সমাজ ও জাতির ভাগ্যোন্নয়নে লিপ্ত। স্বাধীনতা পরবর্তি গত পঁয়তাল্লিশ বছরে এক কোটিরও অধিক বাঙালী জনগোষ্ঠী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন বসবাস করার কথা প্রচার ও গনমাধ্যমে আলোচিত হতে দেখা যায়।
দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বিভিন্ন দেশে যে যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে থাকে-সে সেখানে ধীরে ধীরে বসতি স্থাপনের চেষ্টা করে। কেউ কেউ কাজের সন্ধানে একই দেশের এক শহর থেকে অন্য শহরে হিযরত করতে থাকে। কর্মসংস্থানের স্থায়িত্ব বিধান না হওয়া পর্যন্ত চক্রাকারে প্রক্রিয়া চলমান থাকে। এটি সংগ্রামের প্রাথমিক স্তর। বাঙালিরা বিভিন্ন সিটিতে জানাশুনা লোকজনের পাশাপাশি দলবদ্ধ হয়ে অবস্থান করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। যারা বৈধভাবে অবস্থান করে-তারা যথাসম্ভব কিছুদিনের মধ্যেই একটা সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছালেও যারা অবৈধভাবে অবস্থান করে -তাদের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান ও আবাসনের বাইরে বৈধতার নিশ্চয়তা পাওয়ার বিষয়টিও একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। বৈধ কাগজপত্রের অভাবে অনেককে বিভিন্ন দেশগুলিতে মানবেতর জীবনযাপনের কথা আজকাল কাহিনী আকারে পত্রিকান্তরে দেখা যায়। গনমাধ্যমেও বেশ আলোচিত সমালোচিত। তথাকথিত সমাজপতিদের মুচকি হাসি মশকরা করতে দেখা যায়।
যেভাবে যাত্রা শুরু:
কর্মসংস্থান আর আবাসনের পর পরই সংগ্রামের মূল পর্ব শুরু। পরিবারের সকলের ভাগ্যোন্নয়নের প্রচেষ্টা,শিক্ষা-দীক্ষায় ভাইবোন, গরীব আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্য করার নিরলস প্রচেষ্টা, সর্বোপরি পরিবারের জন্য দালানকোঠা তৈরী করার প্রানান্তকর প্রচেষ্টা। এককথায় দেশে স্ব স্ব পরিবারের জন্য প্রবাসীদের আত্মনিবেদন মূলত মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়। জীবন সংগ্রামের অমোঘ আহ্বানে একপর্যায়ে বিয়েশাদী করে লিঙ্গভেদে স্বামী বা স্ত্রীকে আনার ব্যবস্থা সম্পন্ন করা জরুরী হয়ে পড়ে।
নিউজিল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও নর্থ আমেরিকায় অবস্থানকারী অভিবাসীরা অতঃপর চলমান আইনের আওতায় বাবা-মা, ভাইবোনদের নিয়ে আসার প্রক্রিয়ায় সামিল হতে থাকে। ধারাবাহিকভাবে তাদের কর্মসংস্থান ও আবাসন প্রক্রিয়াও অনেকটা চক্রাকারে অব্যাহত থাকে। জাপান, কোরিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যথানিয়মে স্বামী বা স্ত্রীকে নিয়ে আসা, আত্মীয় স্বজনদের কর্মক্ষম ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করা ছাড়াও সন্তান-সন্ততিদের উপযুক্ত শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য বাঙালিদের আত্মনিবেদনের বিষয়টি দস্তুরমতো বিস্ময়কর। ধর্ম পালনের মতো। নিকট অতীত ও ইদানিং বিভিন্ন দেশগুলিতে বৈধ ও অবৈধভাবে আসা লোকজনদের সাহায্য ও সহযোগিতার বিষয়টি এখন প্রবাসে সামাজিক নৈতিক কর্তব্য ও দায়িত্বের বিষয় হিসাবে দাঁড়িয়ে গেছে বলে শুনা যায়।
আদর্শ কর্মীর স্বীকৃতি; দেশ ও প্রজন্মের স্বার্থে:
বাংলাদেশ থেকে আগত প্রবাসী অভিবাসী দক্ষ অদক্ষ কিংবা পেশাজীবী সকলেই নিবেদিত বিশ্বস্ত ও কঠোর পরিশ্রমী কর্মী হিসাবে সর্বত্র স্বীকৃত। কোন কোন সিটিতে প্রবাদের মতো। বিশেষ করে ছোট ছোট শহরগুলোতে। পরিশ্রমী জীবনযাপনের পরেও দেশের সাথে এদের নাড়ীর বন্ধনের তীব্রতা উষ্ণতার বিষয়টি আবেগতাড়িত। বাঙালি প্রবাসী সমাজ সন্তান সন্ততির স্বার্থে ছোট বড় শহরগুলিতে প্রায় প্রতি সাপ্তাহান্তে দু’দশ পরিবার মিলে কারো না কারো ঘরে মিলনমেলার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায়না। সন্তান সন্ততিদের মধ্যে পরস্পর পরস্পরের সাথে মেলবন্ধন ছাড়াও দেশীয় খাদ্য আর সংস্কৃতির সাথে যোগসুত্র তৈরীর বিষয়টিও প্রবাসী অভিবাসীদের জন্য একটি চলমান প্রক্রিয়া। শুধু তাই নয়- ঈদ,পূঁজাপার্বন, ক্রীসমাস, বৈশাখী সহ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ন জাতীয় দিবসগুলো সন্তানসন্ততিদের সমভিব্যহারে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকে। দেশ,মা ও মাটির সাথে সন্তানসন্ততিদের আত্মার বন্ধন গড়ে তোলার জন্য এটিও চলমান প্রক্রিয়া। তাছাড়াও পিঠা উৎসব সহ প্রতিমাসে বিভিন্ন উৎসবের উছিলায় কালচারাল অনুষ্টানের আয়োজন দেখার মতো। বিশেষ করে মনেপ্রাণে নতুন প্রজন্মের সন্তানদের বাঙালী ও বাংলাদেশের শেকড়কে চেনাজানার জন্য, গড়ে তোলার জন্য বাঙালী সংস্কৃতির সকল উপাদানে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রতিটি বাবা মায়ের প্রানান্তকর অন্তহীন প্রচেষ্টা স্মরন করার মতো। ছেলেমেয়ের বিয়ের বয়স হওয়ার আগে থেকেই বাবা মায়ের অস্থিরতার বিষয়টি ভূক্তভোগীরাই জানে।
কূটনৈতিক মিশন ও সাধারণ প্রবাসী:
আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবময় অধ্যায় সূচিত হয় ১৯৭১’ সালের ১৬’ই ডিসেম্বরে বিজয় অর্জনের পর। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধারাবাহিকভাবে কূটনৈতিক মিশনসমূহে আমাদের জাতীয় পতাকা উড়ছে। অযুত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীন স্বার্বভৌম স্বত্তার প্রতিনিধিত্ব করছে কূটনৈতিক মিশনগুলো। তবে এখনো পর্য্যন্ত আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলো দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যানে যেভাবে নিবেদিত থাকার কথা, দেশপ্রেমিক দক্ষ কূটনীতিক যেভাবে গড়ে উঠার কথা-তা নিয়ে প্রচার মাধ্যমগুলোতে এখনো আলোচনা সমালোচনা দেখা যায়। এদের কর্মকান্ড প্রায় সময় দেশ থেকে মন্ত্রী, সাংসদ বা সচিবরা আসলে তাদের থাকা-খাওয়ার পেছনে বেশী সময় ব্যয় করা কিংবা বিভিন্ন ভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় সাধন করা। পত্রিকার সব সংবাদ কতটুকু সঠিক -তা বলা যাবে না। কারন হলুদ সাংবাদিকদের দৌরাত্ম।
তবে অনেক সৎ ও দেশপ্রেমিক দক্ষ কূটনীতিক এখনো আছে। দেশ মাতৃকার তরে অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও অনেকে নিবেদিত। তবে বিভিন্ন মহল থেকে যতটুকু শুনা যায়-তাতে কে এম শিহাবউদ্দীন, হোসেন আলী, আমজাদুল হক, আবুল ফতেহ, ফারুক রশীদ চৌধূরী, মাহমুদ আলী, আনোয়ারুল করিম চৌধূরী, মহিউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ও হুমায়ূন কবিরদের মতো দেশপ্রেমিক দক্ষ কূটনীতিক তেমন একটা গড়ে উঠতে দেখা যায়নি। এঁদের বেশীর ভাগ প্রয়াত। কয়েকজন এখনো বেঁচে আছেন। এঁরা সকলেই আমাদের মহান জনযুদ্ধের অগ্রসৈনিকও বটে। কূটনৈতিক মিশনগুলোর দু’একজন কর্মকর্তাকে বাদ দিলে অধিকাংশ কর্মকর্তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট দেশের সাধারন প্রবাসীদের সাথে তেমন কোন আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। সাধারন প্রবাসীদের সাথে অসহযোগীতা কিংবা কখনো কখনো অসদাচরণের খবর পত্রিকার পাতায় দেখা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলিতে এমন সেক্টর খুবই কম-কোন না কোন জায়গায় এখন বাংলাদেশের লোকের সাক্ষাৎ মেলে। শুধু কর্মক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ না থেকে বাংলাদেশকে বিভিন্ন দেশের জনমানষে ও সেক্টরগুলোতে এরা তুলে ধরছে। অনেক নিভৃতচারী প্রবাসীদের দেশের তরে সমর্পিত হওয়ার খবর মাঝে মাঝে দেখা যায়। অনেকে বিভিন্ন দেশের মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহন করে বাংলাদেশের মর্যাদা বর্ধন করছে। বিদেশের বড় বড় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে কিংবা সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে প্রচেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। এটা এখন দিবালোকের মতো সত্য যে, প্রবাসী অভিবাসীদের সাথে সংশ্লিষ্ট দেশের নেতা নেত্রী ও কর্মকর্তাদের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে কূটনৈতিক মিশনগুলোর সদস্যদের কাজকর্ম এখন আগের চাইতেও সহজ। তবে এসব সূযোগকে কাজে না লাগানোর খবরও প্রবাসীদের মধ্যে আলোচিত হতে দেখা যায়। এটা সবাইকে দেশে বিদেশে এখন বলতে দেখা যায় যে, প্রবাসী অভিবাসীরা কূটনৈতিক মিশনের বাইরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে আমাদের দেশের এক একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিক প্রতিনিধি।
হৃদয়ে মা-মাটি; বিনিয়োগ; প্রতারনা:
প্রবাসীরা শুধু রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা কিংবা সমৃদ্ধ করে তোলার কথা বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সরকারের আমলে রিজার্ভের কথা জোরগলায় বলতে দেখা যায়। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্সের টাকায় কৃতিত্ব জাহিরের বিষয়টি বাদই দিলাম। তবে প্রবাসীরা এখানেই থেমে থাকেনি। বিশ্বের বাঙালি অধ্যূষিত শহরগুলোতে বাংলাদেশের মাছ, তরিতরকারী, ফলমুল থেকে শুরু করে বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত পন্য আমদানী করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদানের বিষয়টি তেমন আলোচিত হতে দেখা যায় না। কোন কোন দেশে বা শহরে বাঙালি খাদ্য এখন খুব জনপ্রিয় বলে শুনা যায়।
এসব কিছুর বাইরে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে প্রবাসীদের বিনিয়োগের বিষয়টি আলোচিত হতে তেমন একটা দেখা যায়নি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা, চাঁদাবাজদের, ফড়িয়াদের দৌরাত্মের জন্য জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে গিয়ে প্রবাসীদের অনেককে সর্বস্ব খূুইয়ে চলে আসার খবর শুনা যায়। অনেকে এসব প্রতিবন্ধকতার কারনে শুরুতেই নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে আসার কথা প্রবাসে বলাবলি করতে দেখা যায়। দেশের অর্থনীতির জন্য যা অশনীসংকেত। দেশ, মা-মাটির প্রতি নিবেদিত থেকে এমনকি দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের, স্বজনদের জন্য নিজেদের বিলিয়ে দেয়ার পরও অনেকে স্বজন ও পরিবার কর্তৃক প্রতারিত ও প্রত্যাখ্যাত হওয়ার খবর মেলে। তবুও মা মাটি দেশকে হৃদয়ে ধারন করে এরা বেঁচে থাকে। এদের যন্ত্রনার কথা কোথাও আলোচিত হয় না।
শেকড়ের অস্তিত্ব ধারনে, প্রজন্মের বিনিয়োগে আলোকিত দিনের স্বপ্নে:
বিদেশে না আসলে মা মাটি ও দেশের প্রতি মায়া, টান, মমত্ববোধকে কেউ উপলব্ধি বা অনুভব করতে পারে না বলে দেশে বিদেশে আলোচিত ও স্বীকৃত একটি বিষয়। দেশপ্রেমের আবেগতাড়িত এই দিকটি প্রবাসীদের একান্ত নিজস্ব। প্রবাসে জন্ম নেয়া সন্তান ও তাদের মধ্য দিয়ে পরবর্তি আগত জমানার প্রজন্মদের মাধ্যমে বিনিয়োগ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলাদেশের এক উজ্জ্বল আলোকিত দিনের স্বপ্নও প্রবাসীরা হৃদয়ে লালন করে। কারন গবেষনা ও নানা সমীক্ষায় দেখা যায়-শেকড়ের সন্ধানে স্বতপ্রনোদিত হয়ে প্রবাসীদের প্রজন্ম ও তৎপরবর্তি প্রজন্ম যে যে দেশেই জন্মগ্রহন করুক না কেনো-শেকড়ের অস্তিত্বকে ধারন করে বাপ দাদার দেশের মঙ্গল ও কল্যানে সময় সুযোগ পেলেই কিছু না কিছু করার তাগিদের বিষয়টি এখন আর উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে এখন তা নিত্যদিনের খবর। দেশের দূর্যোগময় মুহুর্তে প্রবাসীদের প্রেরিত সাহায্য ও সম্মিলিত সহযোগিতা ছাড়াও বিভিন্ন দেশগুলিতে অবস্থানরত প্রবাসীরা যার যার এলাকায় বা দেশের জনগুরুত্বপূর্ন স্থানে স্কুল-কলেজ, দাতব্য চিকিৎসালয়, নানাধরনের সেবামূলক প্রতিষ্টানসমূহ দেশ ও জাতির মঙ্গলাকাঙ্খায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে গড়ে তোলার খবর প্রায়শ দেখা যায়, শুনা যায়।
প্রবাসের যন্ত্রনা,বেদনাবোধ অবশেষে মূলধারার রাজনীতি:
রোগব্যাধি জনিত কারনে চিকিৎসার সমূহ ব্যবস্থা থাকা স্বত্তেও আপনজনদের সান্নিধ্যের অভাবের যন্ত্রনায় একধরনের অসহায়ত্ব প্রবাসীদের পেয়ে বসে।স্বাস্থ্য বীমার অভাবে বেশ কিছু দেশে প্রবাসীদের সীমাহীন দূর্ভোগ ও দুর্দশার কথা ভূক্তভোগীরাই বলতে পারে। হঠাৎ করে কর্মহীন হলেতো কথাই নেই। অসহায়ত্বের সেই করুন চিত্র প্রবাসী ভূক্তভোগীরাই জানে। কয়েক যুগ ধরে বসবাসকারী অনেককে দুর্দিনে অনুতাপ করে বলতে শুনা যায়-‘পূর্বজনমের পাপের জন্যই প্রবাস জীবন।’ অবশ্য এরাই তাদের সুদিনের দিনগুলিতে দিনরাত মা মাটি দেশের তরে,মানুষের জন্য নিরলস প্রত্যয়দীপ্ত আকাঙ্খায় উদ্ভুদ্ধ থাকতে দেখা যায়। অনেক ত্যাগ অনেক যন্ত্রনা বুকে ধারন করেও দেশে বিদেশে কিছু নির্লজ্জ লোকদের কটাক্ষ উপেক্ষা করে এদের টিকে থাকার সংগ্রাম থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি নেই। সংখ্যালঘুদের মর্ম পীড়া, যন্ত্রনা, বেদনাবোধকে প্রবাসীদের মতো কেউ ধারন করার কথা নয়। বেশীর ভাগ দেশে আইনের যথাযথ প্রয়োগে এরা টিকে থাকার অনুপ্রেরনা লাভ করে। বিদেশে প্রবাসীদের দুঃসময়ে কি পরিবার কি সমাজ কি সরকার কাউকেও এগিয়ে আসার খবর তেমন শুনা যায়না। রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ না হয়েও দেশ, জাতি ও সাংস্কৃতিক বন্ধনকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরাই একজন আরেকজনের কল্যানে আপনজনদের মতো এগিয়ে আসে। প্রবাসীদের অনেকের দুঃসময়ের দিনগুলোতে দেশের আপনজন ও পরিচিতজনদের সমবেদনার পরিবর্তে কানাঘুষা, ঠাট্টা মশকরা করতে অনেককে দেখা যায়। প্রবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট মন্ত্রনালয় থাকা স্বত্তেও দেশ, জাতি, সমাজ আর পরিবারের জন্য ত্যাগের চরম পরাকাষ্টা স্বত্তেও প্রবাসীদের বিবিধ সমস্যার সমাধান এখনো অমিমাংসিত। লোক দেখানো ছাড়া তেমন কোন অর্জন নেই বলে প্রবাসীদের বলতে দেখা যায়। অবশ্য কি সরকারী বা বেসরকারী কিংবা জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে উঠা লাভজনক বা অলাভজনক নানা ধরনের নামসর্বস্ব সংগঠন এমনকি বিরোধী দলগুলোও কথামালার ফুলঝুরি ছড়ালেও জাতীয় ও সামাজিকভাবে প্রবাসীদের নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে উঠতে দেয়া হয়নি। তবে বিদেশে এসব রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা এসে প্রবাসীদের সামগ্রিক ঐক্য সহমর্মিতা ও পারস্পরিক সম্মিলনীর বিপরীতে নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য, মাগনা থাকা-খাওয়ার জন্য, প্রবাসীর কষ্টার্জিত অর্থে স্ত্রী পুত্র কন্যাদের জন্য বিলাস সামগ্রী সহ বাক্সপেটরা ভর্তি করার জন্য দেশীয় আদলে প্রবাসে পারস্পরিক গ্রুপিং, বিভাজন, হানাহানি, মারামারির মতো শিষ্টাচার বিরোধী এমন কোন কিছু বাকী নেই-যা আমদানী করেনি কিংবা নেপথ্যে কাজ করেনি। অবশ্য প্রবাসের গুটিকয়েক কায়েমী স্বার্থসংশ্লিষ্ট লোকজনও দায়ী। গনহারে কাউকে দায়ী করা যাবে না। প্রবাসে সংশ্লিষ্ট দেশের মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহন করে দেশ ও জাতির বেশী মঙ্গল সাধনের বিষয়টি কূটনৈতিক, বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ মহলে সর্বত্র স্বীকৃত। প্রবাসে দেশীয় রাজনীতি আদৌ বৈধ কিনা কিংবা চর্চার কুফল,পারস্পরিক হৃদ্যতা ও বন্ধন ছিন্নকরনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে এখনো অনেকে মুখে বলেই শেষ। কোনধরনের সচেতন কার্য্যক্রম গড়ে উঠেনি। অবশ্য তা নিরসনে দেশের সরকারী ও বিরোধী দলকে দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থে সকলকে বিদেশে দেশীয় রাজনীতি নিষিদ্ধকরনে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।পরিবার,সমাজ,দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন ও কল্যানে অন্য কোন বিকল্প নেই।
(তথ্যসূত্র: ফেসবুক,অনলাইন পত্রপত্রিকা, বিভিন্ন ওয়েবসাইট।)
No comments:
Post a Comment