সৌদি জোটের অবরোধের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে গ্য্যাস উত্তোলন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে কাতার। কাতার প্রেট্রোলিয়ামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সা’দ শারিদা আল কাবি বছরে ১০০ মিলিয়ন টন গ্যাস উৎপাদনের ঘোষনা দিয়েছেন। যেখানে বর্তমানে বছরে ৭৭ মিলিয়ন টন গ্যাস উৎপাদিত হয়। বিশ্বের তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি’র সবচেয়ে বড় উৎপাদক দেশ কাতার। এমনকি তেল রপ্তানিতেও অন্যতম বৃহৎ দেশ কাতার। এসময় সা’দ শারিদা আল কাবি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, যত বড় অবরোধই আসুক না কেন কাতার তার অবস্থান পরিবর্তন করবে না।
অন্যদিকে, কাতারের সরবরাহ করা গ্যাসের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দেশ আরব আমিরাত। তবে আপাতত কোন দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের ইচ্ছা কাতারের নেই বলেও জানিয়েছেন সা’দ শারিদা আল কাবি। কাতারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী সরকারি বিনিয়োগ তহবিলসহ কাতারের রিজার্ভ এখন ৩৪ হাজার কোটি ডলার। ধারনা করা হচ্ছে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা বজায় থাকলেও এই সংকট কাটাতে পারবে কাতার।
কাতার প্রবাসী এম. এ সালাম জানান, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ চলছে। কিন্তু তারপরও গ্যাসসমৃদ্ধ উপসাগরীয় ছোট্ট এই দেশটিতে অবরোধের চিহ্ন খুব কমই চোখে পড়ছে। শপিংমল থেকে বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে তাকালে বোঝার উপায় নেই যে কোন অবরোধ চলছে। যদিও এক মাসের বেশি সময় ধরে কাতারের ওপর জল, স্থল ও আকাশপথে আরব দেশগুলোর দীর্ঘ অবরোধ চলছে। তবে কোথাও এক বিন্দু জৌলুসের কমতি নেই উপসাগরীয় এই ধনী দেশটির।
ছোট্ট এই দেশটি কিভাবে এত বড় একটা সংকট মোকাবেলা করছে- এ প্রশ্নের উত্তরে সালাম বলেন, কাতারের জনগণ প্রতিবেশী উপসাগরীয় দেশগুলোর নাগরিকদের চেয়ে গড়পড়তায় বেশি ধনী। এর ফলে খুব সহজেই কাতার তার দেশের বিশাল অর্থ-সম্পদ ও বন্ধু দেশগুলোর সহযোগিতায় সৌদি জোটের চাপিয়ে দেয়া অবরোধের প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে।
এরই মধ্যে কাতারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর শেখ আবদুল্লাহ বিন সৌদ আল থানি জানিয়েছেন, দেশটির রয়েছে ৩৪০ বিলিয়ন বা ৩৪ হাজার কোটি ডলারের রিজার্ভ। এছাড়া নিউইয়র্ক ও লন্ডনের মতো বড় শহরগুলোর আন্তর্জাতিক বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোতে কাতারের রয়েছে বিশাল অংকের বিনিয়োগ।
কাতার প্রবাসী সালাম আরও জানান, পোশাকের দোকানগুলোত গ্রীষ্মকালের উপযোগী হাল ফ্যাশনের পোশাকের বিক্রিও স্বাভাবিক রয়েছে। মুদি দোকানগুলোতে এখনও পর্যাপ্ত ইউরোপ ও তুরস্কের মাংস ও পনির পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া নামিদামী হোটেলগুলোতে খাবারের পাশাপাশি দর্শনার্থী ও পর্যটকদের জন্য কোমল পানীয় পাওয়া যাচ্ছে পর্যাপ্ত ।
এই কাতার প্রবাসী আরও বলেন, রাজধানী দোহায় আগের মতোই ভিড় জমাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা। পাশাপাশি আনাগোনা রয়েছে বিভিন্ন ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের। সম্প্রতি দোহার একটি জমকালো মলে ভক্তদের সাথে বিখ্যাত ফুটবল দল বার্সেলোনার খেলোয়াড় জেরার্ড পিকে, সার্গিও বাসকেটস ও জর্ডি অ্যালবা সময় কাটিয়েছেন বলেও জানান এই প্রবাসী।
এছাড়া, ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রস্তুতিও বেশ জোড়েশোরে চলছে বলে জানান তিনি। স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, আমরা কোনো ধরনের পার্থক্য বা সমস্যা অনুভব করছি না। সব জায়গাতেই স্বাভাবিক পরিবেশ চোখে পড়ছে। জীবন যাত্রার মানে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি দীর্ঘকালিন এই অবরোধ।
সালাম বলেন, এই অবরোধের মধ্যদিয়ে আরব দেশগুলো আসলে কাতারের সরকারে একটি পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলো। তবে দেশটির ৩৭ বছর বয়সী আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির প্রতি কাতারি জনগণের ব্যাপক সমর্থনের কারণে তাদের সে আশা স্পষ্টই ব্যর্থ্ হয়েছে। বরং দেশটির সব গাড়ি ও বড় বড় বিলবোর্ডগুলোতে এখন একটি লেখা চোখে পড়ছে, ‘আমরা সবাই তামিম। আমরা সবাই কাতার।’
সন্ত্রাসবাদ ও কট্টরপন্থায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর গত ৫ জুন কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। কাতারের সরকার বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এই দেশগুলো কাতারের সরকার-নিয়ন্ত্রিত আল-জাজিরা টেলিভিশন বন্ধ করা, ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কমিয়ে দেওয়াসহ ১৩ দফা দাবি পাঠায় দোহার কাছে। দুই দফায় শর্ত পূরণের সময়সীমা বেঁধে দিলেও কাতার তা মানেনি। এরপর সম্প্রতি কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার সিদ্ধান্তই নেয় সৌদি আরবসহ চার মুসলিম দেশ।
No comments:
Post a Comment