জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় বর্তমান বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো। আর আমেরিকাকে নেতৃত্বদানকারী দেশগুলোর মধ্যে মেক্সিকো অন্যতম। আধুনিক বিশ্বে নিত্য-নতুন আবিষ্কার ও গবেষণায় মেক্সিকো যতটা ভূমিকা রাখছে, আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলো তা রাখতে সক্ষম হচ্ছে না। তবে স্বপ্নের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সীমান্ত ঘেষা মেক্সিকো কখনই বাংলাদেশের অভিবাসিদের জন্য আপন হয়ে ওঠেনি। ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উল্লেখযোগ্য বসতি ও গড়ে ওঠেনি এদেশে।সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাবার স্বপ্নে যারা বিভোর হোননি কেবল সে সকল বাংলাদেশিরাই মেক্সিকোর মায়ার বাঁধনে আবদ্ধ হয়েছেন, থেকে গেছেন দেশটিতে।
মেক্সিকোতে বাংলাদেশিদের বসবাস মূলতঃ ২০০০ সালের পর থেকে। ১২কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এইদেশটি গোল্ড-সিলভার-পেট্রোলিয়াম-গ্যাসসমৃদ্ধ। রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে বসবাস করেন প্রায় ১০০জন বাংলাদেশি, যাদের অর্ধেকের বেশি শহরের বিভিন্ন স্পটে ভ্রাম্যমান জামা-কাপড়ের ব্যবসার সাথে জড়িত। ভারত থেকে আসা মালামাল তাদেরকে কিনতে হয় ডাউনটাউনের পাইকারি বাজার থেকে। আইনগতভাবে তাদের এই ধরণের ব্যবসা বৈধ না হলেও ইউএস ডলারের হিসেবে গড়ে হাজার ডলার আয় করেন অনেকেই। তাছাড়া বাড়তি পরিশ্রম করে ২থেকে আড়াই হাজার ডলার ও মাস শেষে আয় করছেন কেউ কেউ।মেক্সিকো সিটিতে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাদের ‘তাজমহল’ ও ‘কাজাএলেফান্তে’ নামে দুটি রেস্টুরেন্ট ‘ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
পুরো মেক্সিকো তে অল্পসংখ্যক বাংলাদেশির বসবাস হলেও দেশটিতে অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক রফতানী বানিজ্য বাংলাদেশের। বেশির ভাগই আর এমজি বা গার্মেন্টস সামগ্রী। অন্যান্য পন্যের মধ্যে রয়েছে পাটজাত পন্য, চামড়া ও ভেজিটেবল অয়েল। তাছাড়া মেক্সিকো থেকে বেশ কিছু পণ্য আমদানী করা হয় যার মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিক সামগ্রী, বেভারেজ স্পিরিট, ভিনেগার, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রিক সরঞ্জামাদি।
এর বাইরে আইটি ফার্মসহ মেক্সিকোর গার্মেন্টস সেক্টরে বেশ কয়েক জন বাংলাদেশি কাজ করছে। মেক্সিকোর সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক কড়াকড়ি থাকলেও দেশের অভ্যন্তরে রয়েছে সুনির্দিষ্ট ইমিগ্রেশন আইন। দেশটিতে মাত্র ৬ বছর বৈধভাবে থাকলে নাগরিকত্বের তথা পাসপার্টের জন্য আবেদন করা যায়। মেক্সিকোর অন্যান্য সেক্টরে বাংলাদেশ থেকে বৈধ জনশক্তির সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম, কারণ দেশটিতে একদিকে যেমন আছে নিজস্ব বেকারত্ব, পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশ গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস ও এলসালভাদর থেকে লোকজন ভিন্ন পথে আসা-যাওয়ার মাধ্যমে মেক্সিকো জুড়ে কাজ করে থাকে। তবে কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুনাম থাকায় আগামীতে এই সেক্টরে কাজের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে।
নান্দনিক সৌন্দর্য আর চমৎকার আবহাওয়ার দেশ মেক্সিকো ভূমিকম্প প্রবণ হলেও আগামী দিনে বাংলাদেশ কমিউনিটি এখানে সম্প্রসারিত হবে, এ কথা সহজেই অনুমেয়।
No comments:
Post a Comment