প্রভাবশালী ও উদীয়মান উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধুপ্রতিম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন বাজারগুলোতে বাংলাদেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এসব বাজারে প্রবেশ করতে পারলে বর্তমানে ২ হাজার কোটি ডলারের তৈরি পোশাকের রপ্তানি কয়েক বছরের মধ্যে দ্বিগুণ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানির প্রধান দুই বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার বাজারের মন্দা কাটলেও অর্থনীতিতে এখনও ধীরগতি রয়েছে। মন্দার কারণে এসব বাজারে চাহিদা সংকুচিত ও পণ্যের দাম কমে গেছে। তবে নতুন বাজার ধরতে পারলে রপ্তানির সম্ভাবনা আরো বেড়ে যাবে।’ বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু পণ্য সামগ্রী ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি হয়ে থাকে তার মধ্যে রয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য, গার্মেন্টসের মেশিনারিজ ও কেমিক্যাল, অ্যানিম্যাল ফ্যাট, ফার্মাসিউটিক্যালস, লোহা ও ইস্পাতের সামগ্রী। তাছাড়া অর্গানিক কেমিক্যাল, টেক্সটাইল থেকে তৈরি পণ্য, রং করার সামগ্রী, বিশেষ ধরনের সূতা, টেক্সটাইল ফেব্রিক্স, আইসি ইঞ্জিন পিস্টন। তাছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং ইকুইপমেন্ট রপ্তানি করেও বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে ইন্দোনেশিয়া থেকে।’’
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে আরো বেশ কিছু নতুন আইটেম ইন্দোনেশিয়াতে রপ্তানির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কোয়ালিটির সূতার লুঙ্গী যেমন প্লেইন সিল্ক এবং ফাইন পাবনা কটন। সিল্ক এবং কাতানের সামগ্রী ও পোশাক, পুরুষের ফতুয়া, প্লাস্টিক ও মেলামাইন পণ্য, সিরামিক ও মৃৎশিল্প, পিতলের হস্তশিল্প, কৃষি ও ডেইরি প্রোডাক্টস এবং বিশেষ করে লিচু ও আমসহ বাংলাদেশি খাদ্যসামগ্রীও আছে এই তালিকায়। ফার্মাসিউটিক্যালস সামগ্রী এবং মাংস এমনকি জীবিত গবাদিপশুও বাংলাদেশ থেকে ইন্দোনেশিয়াতে রপ্তানি করার সম্ভাবনা বাড়ছে। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়ান ব্যবসায়ীদের মাঝে বাংলাদেশী ফার্মাসিউটিক্যালস ও হালাল মাংসকে ঘিরে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ২৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়াতে কৃষি, কনস্ট্রাকশান বা যে কোন নন-স্কিল্ড প্রফেশনে যে জনবলের প্রয়োজন হয়, তা খুব সস্তায় পূরণ করা হয়ে থাকে স্থানীয় বিশাল জনগোষ্ঠী থেকে। সঙ্গতকারণে বাংলাদেশ থেকে ঢালাওভাবে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ নেই এদেশে। তবে আইটি এবং ফাইনান্সিয়াল সেক্টরে এখন নতুন দুয়ার খুলছে দেশটিতে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় সম্ভবনা করতে পারে। এরি মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু প্রফেশনাল লোকজন ইন্দোনেশিয়ার ঔষধে, আইটি, ব্যাংকিং ও এয়ারলাইন্স সহ অন্যান্য সেক্টরে কাজ করছেন। তবে ইন্দোনেশিয়া থেকে বাংলাদেশ বেশ কিছু পণ্য আমদানি করে থাকে। সেসব পণ্যের মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছে ক্লিংকার, রাবার, পামঅয়েল, খনিজ বা রাসায়নিক সার এবং পলি কার্বনেট। এসব পণ্যের অধিকাংশই দেশের শিল্পকারখানায় উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
তবে বাংলাদেশে ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এরিমধ্যে বেশ কিছু ইন্দোনেশিয়ান গার্মেন্টস কোম্পানি তাদের ফ্যাক্টরি স্থাপন করেছে ঢাকা ইপিজেডে। দেশটির সর্ববৃহৎ টেক্সটাইল মেশিনারিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘আগানসা প্রিমাতামা’ আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে তাদের ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে। এছাড়াও বড় বড় বেশ কয়েকটি বুনন টেক্সটাইল কোম্পানিও ইন্দোনেশিয়া থেকে তাদের উৎপাদন বাংলাদেশের একটি ইপিজেডে স্থানান্তর করতে আগ্রহী। একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশি মঈন তারেক ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্যের সম্ভাবনা নিয়ে ভয়েস বাংলার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশি গার্মেন্টস রিলেটেড বিভিন্ন পণ্যের বাজার প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যা সরকার ইচ্ছে করলেই কাটিয়ে উঠতে পারে। এতে করে নতুন নতুন পণ্যের বাজার হিসেবে ইন্দোনেশিয়া আমাদের জন্য অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠবে।’ ইন্দোনেশিয়া বর্তমানে বিশ্বের ১৬তম বৃহৎ অর্থনীতি এবং জি ২০-এর অন্যতম সদস্য। বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়া এশিয়ার দুটি নিকটতম দেশ এবং দু’দেশই উন্নয়নশীল পর্যায়ে রয়েছে। তাই দেশ দুটির পারস্পরিক স্বার্থে একসাথে কাজ করার ও অারোও বেশি পণ্য রপ্তানির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
No comments:
Post a Comment