মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা দলে দলে আসছে বাংলাদেশে। গত শনিবার থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত প্রায় ২৭০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। এদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, নতুন পাওয়া স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাখাইন রাজ্যের রাথেডং শহরের কাছে চেইন খার লি গ্রামের অন্তত সাতশ’ বাড়িঘর আগুনে পুড়ে গেছে। পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে মুসলমান অধ্যুষিত গ্রামটি। ঘরবাড়ির ছাদ ও গাছগুলোতে আগুনে পোড়ার ছাপ স্পষ্ট।
সংস্থার ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন বলেন, নতুন স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের একটি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা যা ভাবছি ওখানে তারচেয়েও বেশি নারকীয় ঘটনা ঘটেছে। গত ২৫ থেকে ৩০ আগস্টের মধ্যে যে ১৭ টি এলাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি, নতুন ছবি এরমধ্যে একটি এলাকার মাত্র। দ্রুত সেখানে স্বাধীন পর্যবেক্ষণ দল পাঠানো জরুরি।
বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তা ভিভিয়েন ট্যান বলেছেন, এক রাতের ব্যবধানেই অর্থাত্ গত রবিবার তারা নতুন অন্তত ১৩০০০ রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করেছেন। ফলে শনিবার যেখানে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬০ হাজারের মত বলা হয়েছিল রবিবার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় অন্তত ৭৩ হাজার। এদিকে, বার্তা সংস্থা আলজাজিরা গতকাল সোমবার জানায়, ধর্ষণ, হত্যা ও অগ্নিকা্লের হাত থেকে বাঁচতে গত দশদিনে প্রায় ৯০,০০০ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে এসেছ। সোমবার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র কর্মকর্তা ভিভিয়েন ট্যান আল জাজিরাকে জানান, ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া সহিংসতার পর এ পর্যন্ত শিশু, নারী ও বৃদ্ধা মিলে কমপক্ষে ৮৭০০০ রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। তিনি বলেন, গর্ভবতী নারী, নবজাতক শিশু এবং বৃদ্ধারাও বাংলাদেশের অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয়ের আশায় ছুটে আসছেন। তাদের অনেকে গত কয়েকদিন ধরে কিছু খাননি।
ভিভিয়েন ট্যান বিবিসিকে আরো বলেন, যেভাবে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে শিগগিরই আশ্রয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের জরুরি সঙ্কট তৈরি হতে পারে।
এদিকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, আরো হাজার হাজার লোক বাংলাদেশ সীমান্তের পথে রয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে হাজার হাজার রোহিঙ্গা এসে জড়ো হয়েছে। তাদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আরো জানিয়েছে, উত্তর রাখাইন রাজ্যের পার্বত্য এলাকায় কমপক্ষে ৩০,০০০ হাজার রোহিঙ্গা আটকে রয়েছে কোনো রকম খাদ্য, পানি ও ওষুধ ছাড়া। তারা এখনো বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পথ বের করতে পারেনি।
অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প
টেকনাফ (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, কক্সবাজারের টেকনাফে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে। হোয়াইক্যং রেঞ্জের আওতাধীন রইক্ষ্যং বনবিট সংলগ্ন পুটিবনিয়া গ্রামের ফসলি জমিতে এ অস্থায়ী ক্যাম্প গড়ে ওঠেছে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের জড়ো করে ওই ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে। রোহিঙ্গারা রইক্ষ্যংয়ের পুটিবনিয়া গ্রামে দলে দলে এসে জড়ো হচ্ছেন। প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যাতে যানবাহনে করে দেশের অন্য কোনো স্থানে যেতে না পারে সেজন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এস.এম.আরিফুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গারা যেন এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেতে না পারে সেজন্য তাদেরকে নির্দিষ্ট একটি স্থানে রাখা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের গাড়িতে করে অন্য কোথাও যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, রোহিঙ্গারা যে যার মতো করে পলিথিন ও বাঁশ-গাছ দিয়ে কোনো মতে থাকার ব্যবস্থা করছেন। জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা নারীরা খোলা আকাশের নিচে রান্নাবান্নার কাজ করছেন।
টেকনাফে রোহিঙ্গা শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার
নাফ নদী হতে রবিবার এক রোহিঙ্গা শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ছেলে শিশুটির বয়স ৫-৬ বছর হবে।
তিন দালালকে দণ্ড
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তা করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত তিন দালালকে দ্ল দিয়েছে। রবিবার দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রণয় চাকমার আদালত তিন দালালের প্রত্যেককে তিন মাস করে বিনাশ্রমে কারাদ্ল প্রদান করেন।
রোহিঙ্গাদের ঈদ কেটেছে বিলে ঝিলে
মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ঈদ কেটেছে পথে ঘাটে, বিলে ঝিলে, পাহাড়ে এবং নদীর ধারে। এমন পরিণতি তারা জীবনেও কল্পনা করেনি। সেনা বাহিনী এবং পুলিশী নির্যাতনে দেশান্তরিত রোহিঙ্গাদের জীবনে এমন ঈদ আর কখনো আসেনি।
ঈদের দিনেও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা দল বেঁধে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উত্সব ঈদুল আজহার দিন নাফ নদী পাড়ি দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে গিয়েই নৌকাডুবে মা এবং মেয়ে নিহত হয়েছেন।
টেকনাফে চার দিনে ৫২ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার
কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদী এবং ঘুমধুম সীমান্ত হতে গত চার দিনে এ পর্যন্ত ৫২ রোহিঙ্গার ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ এবং বিজিবি উদ্ধারকৃত এসব লাশ জানাজা শেষে দাফনের ব্যবস্থা করেছে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment