আমি শেষ পর্যন্ত ইরাক ছেড়ে দেশে ফেরত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশ ইত্যাদি নানা অজুহাতে কোম্পানি আমাদের বেতন কাটছে। পাশাপাশি বেতন দিতে প্রায়ই অনেক দেরি করছে। এমনকি বছরের পর বছর বেতন আটকে রেখে শ্রমিকদের জিম্মি করে কাজ করাচ্ছে মালিক পক্ষ। এ অবস্থায় অনেক কর্মী ইরান ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এর ফলে অন্যদের উপর বাড়ছে কাজের কাজের চাপ। অন্যদিকে, সময় মত বেতন না পাওয়ায়, পরিশ্রমের তুলনায় বেতন কম হওয়ায় তা দিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে গেছে। যদিও এখন পর্যন্ত দেশে ঋণের বোঝা শোধ করতে পারি নাই, দেশে ফিরে গেলে সন্তানদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কিন্তু তারপরও আমি এখানে এভাবে আর থাকতে চাই না’।
ইরাকের একটি ক্লিনিং কোম্পানিতে কাজ করা বাংলাদেশি শ্রমিক ফজলুল করিম ঠিক এভাবেই ফোনালাপে প্রবাসে দুর্দশার গল্প শোনাচ্ছিলেন। তার গল্পের সাথে আরো অনেক প্রবাসীর গল্পের কোন পার্থক্য নেই। এই প্রবাসী জানান, এখানকার অবস্থা এখনো খারাপ। মাসিক বেতন অনেক দেরীতে হয়। বিল পরিশোধে দেরী হওয়ায় কোম্পানির প্রকল্পগুলোও সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ফলে কর্মী সংকটে পাঁচজনের কাজ একজনকে বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে। অনেক প্রবাসী এখন ইরান ছেড়ে যাচ্ছে এবং এ হাড় দিন দিন বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরাকের অর্থনৈতিক ভিত্তি এখনো ততোটা শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি, যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থতার রেশ পুরোপুরি কাটেনি। তারপরও বিদেশী কর্মীদের বেতন ভাতা ও ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কারোরই নেই। বৈধভাবে কর্মী গিয়ে এমন সংকট মোকাবেলা করবে এটা কল্পনার বাইরে।
অন্য আরেক ইরাক প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী সাদেক জানান, দেশে ফেরার টিকেটের টাকা যোগার করেই তিনি চাকরি ছেড়ে দেবেন। এরইমধ্যে তাদের অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে। অনেককেই আবার কোম্পানির খারাপ অবস্থার কারণে চাকরি থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে। কেউ কেউ দেশ থেকে টাকা এনে নিজের খরচে দেশে ফেরত যাচ্ছেন।
ফজলুল করিম জানান, বেতনের সাথে সাথে কোম্পানিগুলো তাদের ইকামা( কাজের অনুমতিপত্র) আটকে রেখেছে। ফলে পালিয়ে অন্য জায়গায় কাজ করার কোন সুযোগ নেই। আবার যারা কোনভাবে অন্য কোম্পানিতে কাজ যোগাড় করছে তারাও নতুন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। ইকামার কথা বলে নতুন মালিক তাদের দিয়ে ফ্রিতে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। তাই শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরতে টিকিটের টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে মাসের পর মাস ফ্রিতে কাজ করছে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা।
No comments:
Post a Comment