গত সপ্তাহে নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পরে জাতিসংঘের হিসাবানুযায়ী প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা মৃত্যুর হাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন এর বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাত থেকে প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের করুণ ভাষ্য।
রাবেয়া খাতুন ছিলেন রাখাইনের কুতুপালংয়ের বাসিন্দা। নাফ নদীর বাংলাদেশ তীরে অনিবন্ধিত শরণার্থীদের একটি ক্যাম্পে তিনি সিএএনকে বলেন, আমরা দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছি, আমাদের পাহাড়, জলামাঠ, ধানক্ষেত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করেছি। আট দিন আগে রওনা দিয়ে আজকে (শুক্রবার) আমরা এখানে পৌঁছেছি।
শুধুমাত্র জীবনটি হাতে নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা মোহাম্মদ হারিণ বলেন, আমাদের কোনো খাবার নেই, পরিধান করার কাপড় নেই, আমরা ঘরহীন। সেনাবাহিনী আমাদের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে তাই আমাদের ফিরে যাওয়ারও উপায় নেই। সেখানে গণহত্যা চলছে।
রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের যে বর্ণনা উঠে এসেছে তা রীতিমত রোমহর্ষক। হামিয়া বেগম নামের এক শরণার্থী বলেন, তারা আমাদের পেটাচ্ছে, গুলি করছে এবং ছুড়ি দিয়ে হত্যা করছে। অনেক মানুষ হত্যা করা হয়েছে। অনেক নারীকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে।
মোহাম্মদ হারুণ বলেন, মিয়ানমারে অসংখ্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে শুধু রোহিঙ্গাদের প্রতিই সরকারের তীব্র বিদ্বেষ। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা মুসলিমরা কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে থাকলেও তাদের নাগরিকত্ব প্রদান করেনি দেশটি।
নবীন শুনা নামের এক শরণার্থী বলেন, সামরিক বাহিনী আমাদের ঘরের ভেতর থাকার নির্দেশ দেয়। আমরা ঘরে থাকলে সেখানে আগুন লাগিয়ে দেয়, গুলি করে হত্যা করে। সেখানে মুসলিমদের কোনো অধিকার নেই।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ২ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে। গত অক্টোবরে সহিংসতার ধাক্কায় ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করেছিল। সর্বশেষ সহিংসতা শুরু হওয়ার এক সপ্তাহে আরো ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জাতিসংঘের ধারণা।
নেক্সাস ফান্ড নামের একটি এনজিওর নির্বাহী পরিচালক স্যালি স্মিথ বলেন, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু কির এই নৃশংসতার নিন্দা না করাটা হতাশাজনক। তিনি শান্তিতে নোবেলজয়ী, এবং যা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে তিনি বৌদ্ধদের শান্তির বিষয় নিয়ে ভাবিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে নয়।
গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সরকার জানিয়েছে, গত শুক্রবার থেকে নতুন করে সংঘাত শুরু হওয়ার পরে ‘ক্লিয়ারেন্স অভিযানে’ এক সপ্তাহে ৩৯৯ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৭০ জন ‘জঙ্গি’ রয়েছে। তবে বিভিন্ন অধিকার কর্মীরা বলেছেন মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিরপরাধ নারী-পুরুষকে হত্যা করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment