ইউরোপের দেশ পর্তুগালের সমসংখ্যক প্রায় ৪ হাজার বাংলাদেশির বসবাস নিউজিল্যান্ডে। নিউজিল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বছরে ২শ’ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ওপরে। কিন্তু সমস্যা হলো পর্তুগালে বাংলাদেশ দূতাবাস থাকলেও নিউজিল্যান্ডে আজো প্রতিষ্ঠিত হয়নি বাংলাদেশ দূতাবাস। তাসমান সাগরের ওপারে সুদূর অস্ট্রেলিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী তথা ছোট্ট শহর ক্যানবেরায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ফিজির পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের সব কাজ কর্ম করা হয়।
নিউজিল্যান্ড প্রবাসী মীর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটন ও উত্তরাঞ্চলীয় শহর অকল্যান্ডে ১ জন করে দু’জন অবৈতনিক কনসাল জেনারেল নিয়োগ করা আছে। যারা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস না থাকায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক খুব একটা ভালো নেই। তাই ব্যবসা বাণিজ্যকে আর উন্নত করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশি হাইকমিশন প্রতিষ্ঠা। মীর সাজ্জাদ বলেন, নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিদের এখন এই একটাই চাওয়া। যার দিকে বাংলাদেশ সরকারের নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন মীর সাজ্জাদ হোসেন।
বৈদেশিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র দূতাবাস না থাকার কারণেই নিউজিল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য থমকে আছে ২শ’ মিলিয়ন ইউএস ডলারে। তারা আরও বলেন, বিশাল দেশ অস্ট্রেলিয়া ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেই হিমশিম খাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন। সেখানে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের নিউজিল্যান্ডকে নিয়ন্ত্রণ কোন সুযোগই নেই ।
মীর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নিউজিল্যান্ড ভারতের সাথে মুক্ত বাণিজ্যিক চুক্তি করতে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশেরও এ সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে নিউজিল্যান্ডের হাইকমিশন প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হবে। মীর সাজ্জাদ বলেন নিউজিল্যান্ডে হাইকমিশন খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারলে একই সাথে ঢাকায়ও নিউজিল্যান্ড হাইকমিশন খোলার পথ তৈরি হবে। এর ফলে দেশের নতুন বাণিজ্য সম্ভাবণা তৈরি হবে।
অর্থনৈতিক সংকটমুক্ত ধনী দেশ নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য যেমন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে একই সাথে সেখানে বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-শিক্ষক-কৃষিবিদ তথা প্রফেশনাল লোকজনের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার জন্য মেধাবী বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের যাওয়ার পরিমানও বহুগুণে বাড়বে মনে করে মীর সাজ্জাদ সহ অনেক নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি।
মীর সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, শুধু নিউজিল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশিরাই নয় পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস প্রতিষ্ঠার যৌক্তিক দাবীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড সফরে আসা অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন আয়েবার সেক্রেটারি জেনারেল ও ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বার সিইএফবি’র প্রেসিডেন্ট কাজী এনায়েত উল্লাহ। ইউরোপের সাথে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের বাংলাদেশী কমিউনিটি পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধির অংশ হিসেবে এক সম্মেলনে এসে তিনি এ একাত্মতা প্রকাশ করেন।
মীর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দূতাবাসের মাধ্যমে শুধুমাত্র বাণিজ্য উন্নয়ন হবে তা নয়, পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডে নতুনভাবে বৈধ বাংলাদেশিদের জায়গা তৈরি হবে। তিনি আরও বলেন নিউজিল্যান্ডের কয়েকটি শহরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশি কমিউনিটি গড়ে উঠেছে। নতুন ভাবে আরও বাংলাদেশিদের প্রবেশের সুযোগ পেলে নিউজিল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের সর্ম্পক আরও উন্নত হবে। তাই অতিদ্রুত নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশি দূতাবাস প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান মীর সাজ্জাদ হোসেন।
No comments:
Post a Comment