কাতার ‘সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা’ অভিযোগ তুলে গত ৫ জুন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইয়েমেন ও মিশর দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এর ফলে কাতারের জন্য বন্দীদশা তৈরি করতে গিয়ে বিপাকে পরেছে সৌদির মিত্র অন্যান্য রাষ্টগুলো। বিশেষ করে যারা কাতার থেকে বিভন্ন পণ্য আমমদানি করতো তাদের এক ধরনের সংকটের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পণ্য ও জিনিসপত্রের অভাবে জীবন যাত্রার মান ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। সৌদি মিত্র হিসেবে পরিচিত রাষ্ট্র বাহরাইনের অবস্থান ছিলো কাতার বিরোধী। তারাও কাতারের সাথে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।
অথচ কাতার থেকে এই দেশটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাশাপাশি নির্মাণ কাজের বিভিন্ন উপকরণ ও আমদানি করতো। নিয়মিত এই আমদানি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে সেখানকার ব্যবসায়ীরা। অনেকেই মনে করছেন দ্রুত এই সংকট নিরসণ সম্ভব না হলে দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব পরতে পারে ব্যবসা বাণিজ্যেও। বাহরাইন প্রবাসী বাংলাদেশি আলাউদ্দিন বলেন, বাহরাইনে প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেক। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক গার্মেন্টস বা অন্যান্য সেক্টরে কাজ করেন। আর বেশিরভাগই নির্মাণ শিল্পের সাথে জড়িত। এই সেক্টরে প্রায় ৮০শতাংশ বাংলাদেশি যুক্ত আছে। বাহরাইন প্রবাসী এই নির্মাণ উপকরণের ব্যবসায়ী বলেন, কাতারের সাথে দ্বন্দের ফলে নির্মাণ ব্যবসায়ীরা এক ধরনের সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।
আগে কাতার স্টিলের ব্যাপক চাহিদা ছিলো মালিকদের কাছে। এখনও সেই চাহিদা আগের মতই আছে। তবে আমদানি না থাকায় বাহরাইনে পাওয়া যাচ্ছে না কাতার স্টিল। ফলে নির্মাণ সামগ্রীর গুরুত্বপূর্ণ এই উপাদানের অভাবে অনেক বন্ধ রাখছেন তাদের নির্মাণ কাজ। আর একজন নির্মাণ শিল্পের ব্যবসায়ী হিসেবে এটা আমার কাছে খুবই হতাশার বিষয়। আলাউদ্দিন জানান, সম্প্রতি খবরের কাগজ বা অন্যান্য মাধ্যমে কাতারের অভ্যন্তরীণ কোন সংকট না থাকার কথা বারবার জানা যাচ্ছে। তাদের মজুদ সম্পদ এবং সামর্থ্যের কারনে কাতারে হয়তো তেমন কিছু হচ্ছেনা। কিন্তু যারা কাতার কেন্দ্রিক আমাদানী নির্ভর দেশ তাদের জন্য এ সংকট অবশ্যই গভীর উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এই প্রবাসী ব্যবসায়ী বলেন, আগে কাতার থেকে সবজী ও অন্যান্য নিত্য দ্রব্য আসতো। স্থানীয় বাজারে সেগুলো স্বাভাবিক মূল্যে কিনতে পারতাম। কিন্তু এখন সরবরাহ বন্ধ থাকায় স্বল্প জিনিস চড়া মূল্যে কিনতে হচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, প্রবাসীসহ প্রায় সবাইকেই উচ্চ মূল্যে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সৌদি আরব এবং তার মিত্র দেশগুলোর সাথে গত কয়েকমাস ধরে কাতারের যে বিরোধ চলছে সেটা অবসানের জন্য হঠাৎ করেই কাতারের আমির সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্সের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। কাতারের আমির সৌদি আরবকে আলোচনার আহবান জানিয়ে বলেছেন সৌদি আরব এবং তার মিত্র দেশগুলো কাতারের কাছে যেসব দাবী তুলে ধরেছে সেগুলো নিয়ে তারা আলোচনায় আগ্রহী। সৌদি আরবের বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, ‘টেলিফোন আলাপের সময় কাতারের আমির আগ্রহ প্রকাশ করেছেন চারটি দেশের দাবি নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসার।’ বিষয়টি নিয়ে সৌদি আরব বাকি তিনটি দেশ- বাহরাইন, মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কথা বলবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারের নেতাদের সাথে আলাদাভাবে কথা বলার পর দুই দেশের মধ্যে এ টেলিফোন আলাপ হয়েছে। হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের হুমকি মোকাবেলার জন্য সে অঞ্চলে আমেরিকার মিত্র দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। সৌদি আরবসহ চারটি দেশ কাতারের কাছে যেসব শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সংবাদ-ভিত্তিক চ্যানেল আল-জাজিরা বন্ধ করা এবং ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা। কিন্তু এসব শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কাতার।
No comments:
Post a Comment