ঘাতক রোগ হিসাবে স্ট্রোক সুবিদিত। আমাদের দেশে ঘাতক রোগ হিসেবে এর স্থান কত তা সঠিক জানা না গেলেও আমেরিকার মত শিল্পোন্নত দেশে তৃতীয় স্থানে, বলেছেন বিজ্ঞানীরা। আর বয়স্কদের মধ্যে গুরুতর দীর্ঘস্থায়ী পুঙ্গ অবস্থা ঘটাতেও এর জুড়ি নেই।
কখন কেন ঘটে স্ট্রোক
মগজের কোনও অংশে রক্তচলাচল রোধ হয়ে যায়, হতে পারে তা ছোট কোনও রক্তনালী অবরুদ্ধ হওয়ার জন্য। নয়ত রক্তনালী দীর্ঘ হওয়ার জন্য। এমন ঘটতে পারে যেকোনও বয়সে, তবে অজ্ঞতার কারণেই আফ্রিকান, আমেরিকান ও দক্ষিণালোকদের স্ট্রোক হয় বেশি। আশার বানী দিলেন মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট ও আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের আসন্ন সভাপতি র্যালক স্যাকো, বেশির ভাগ স্ট্রোকই প্রতিরোধ যোগ্য।
এজন্য আসামি করা হয়েছে একটি খাদ্যদ্রব্যকে। “নুনকে”। আমেরিকান খাদ্যে নুন বেশি হওয়ার জন্য স্ট্রোকে মৃত্যু বেশি হয়। নুনের সঙ্গে সম্পর্কিত উচ্চ রক্তচাপ, আর উচ্চ রক্তচাপ হলো স্ট্রোকের বড় ঝুঁকি তো বটেই। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও রেস্তোরার খাবার নুনে ভরপুর-এতো জানেন সবাই। এদেশেও এই ঘটনা চলছে। আমেরিকার চিকিত্সা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞরা তাই আমেরিকান এফডিএকে চাপ দিচ্ছেন যাতে তারা খাদ্য প্রস্তুতকারীদেরকে খাদ্যে কম লবণ যোগ করতে বাধ্য করেন। এফডিএ এতে কেমন সাড়া দেন তা দেখার বিষয়, তবে ইতিমধ্যে স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য জনগণের কাছে কিছু পরামর্শ রেখেছেন বিজ্ঞজনেরা।
নুন খাওয়া কমান
পাতে নুন না খেয়ে এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার ফাস্ট ফুড, রোস্তোরার খাবার খাওয়া কমালে হয়। লবণ কম খেতে খেতে জিব সয়ে যায়।
ধূমপান করে থাকলে ছেড়ে দিন ধূমপায়ীরা বেশি আতংকে থাকেন ফুসফুসের ক্যান্সার নিয়ে, আবার ধূমপান করলে রক্তনালীর ভীষণ ক্ষতি হয় আর স্ট্রোক হবার পথ সুগম হয়।
মদ্যপান করে থাকলেও ছেড়ে দেওয়া উচিত হাঁটুন জোরে স্ট্রোক নামক জার্নালে সমপ্রতি প্রকাশিত এক প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে, যেসব মহিলারা সপ্তাহে দু’ঘন্টা বা এর বেশি হেঁটেছেন বা হেঁটেছেন তিন মাইল প্রতি ঘন্টায়-এমন গতিতে এদের স্ট্রোক হবার ঘটনা যারা হাঁটেননি বা ধীরে হেঁটেছেন এদের তুলনায় তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কম।অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যেসব পুরুষ ব্যায়াম করেন এদের মধ্যে স্ট্রোকের ঘটনা কম।
বোস্টনের হার্ভাড মেডিকেল স্কুলের গবেষক জেকব সেটলম্যার বলেন, স্ট্রোক প্রতিরোধে শরীরচর্চা হলো বড় উপাদান।
আছে কি এমন অসুখ যা বাড়ায় ঝুঁকি- থাকলে প্রতিরোধ পদক্ষেপ নিতে হবে। তালিকার মধ্যে রয়েছে; উচ্চ রক্তচাপ, উচুমান কোলেস্টেরল, হূদক্ষতিকর কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, রক্তনালীর রোগ, স্থূলতা, হূদস্পন্দন চ্যুাতি, (এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন)। আর “স্ল্লিপএপনিয়া” স্ট্রোকের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক এ অবস্থার। তবে কেন যে, কোন কোনও লোকের স্ট্রোকের প্রবণতা বেশি, তা অজানা।
কৃতকার্য মানুষ ও দক্ষিনাদেরও কেন বেশি হয় তাও অস্পষ্ট। আলাকমার প্রফেসর জর্জ হাওয়ার্ড বলেন, থাকতে পারে অন্য কারণ; যেমন লোক সমাজের ভেতরে যা নিহিত : তাজা ফল সবজি ও ভালো স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় এক না থাকায় হয়ত এমন ঘটছে। দারিদ্র ও শ্রেণীবৈষম্য কি এর পেছেনে। প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে।
লেখক : পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম, ঢাকা
No comments:
Post a Comment