হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি সোমবার প্রায় ৩ ঘণ্টা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের সঙ্গে কাটালেন। তিনি দুপুর ১টায় টেকনাফ উপজেলার চাকমারকুল রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখেন। শোনেন মিয়ানমারে তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কাহিনী।
রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গেও বেশ কিছু সময় কাটান তিনি। তাদের অভিজ্ঞতার কাহিনী শুনে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বিশেষ দূত অ্যাঞ্জেলিনা জোলি অবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। বাংলাদেশে এ প্রথম আসা জোলি সোমবার সকালে ঢাকায় নেমেই কক্সবাজার যান।
আমেরিকান অভিনয়শিল্পী অ্যাঞ্জেলিনা ২০১২ সাল থেকে ইউএনএইচসিআরের বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করছেন। ৩ দিনের সফরের বেশিরভাগ সময়ই জোলি কক্সবাজারে কাটাবেন।
পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের ইনানীতে পাঁচ তারকা হোটেলে ওঠেন জোলি। সেখান থেকে দুপুর ১টায় তিনি হোয়াইক্যাং ইউনিয়নে চাকমারকুল ২১ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে যান। এ সময় তিনি গণধর্ষণ ও ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি ক্যাম্পের জি, ই ও ডি ব্লকে রোহিঙ্গা বসতি ঘুরে ঘুরে দেখেন। ক্যাম্পের ডি ব্লকের কমিউনিটি সেন্টারে রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন তিনি। ডি-ব্লকের বাসিন্দা রোহিঙ্গা নেতা রশিদ উল্লাহ জানান, ‘হলিউড অভিনেত্রী ডি-ব্লকের অন্তত ৩০ রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে ধর্ষণের শিকার নারীদের বুকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। জোলি তাদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। বেশ কিছু সময় তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে কাটান। পরে বিকাল ৪টার দিকে তিনি ক্যাম্প ত্যাগ করে হোটেলে ফেরেন।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ পরিদর্শন করার কথা রয়েছে তার। সেখানে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ‘ইউএনসিআর’ ব্র্যাক, রিলিফ ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও আলোচনা করার কথা রয়েছে জোলির।
এছাড়াও ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও এনজিও পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করার কথা রয়েছে তার। একাধারে অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র নির্মাতা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ‘গার্ল ইন্টারাপটেড’র জন্য অস্কার জিতলেও তাকে বাংলাদেশের মানুষ বেশি চেনেন ‘লারা ক্রফট : টম্ব রাইডার’ ও ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ’ সিনেমার জন্য।
টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফিরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমিন এবং সরকারের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে জোলির। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ইউএনএইচসিআর কিভাবে বাংলাদেশকে আরও সহযোগিতা করতে পারে, জোলি সেসব বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
নিপীড়নের মুখে দেড় বছর আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন। সব মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়াবহ যৌন অত্যাচার ও নৃশংসতা নিয়ে তখনই অ্যাঞ্জেলিনা জোলি বিবৃতি দিয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন।
তখনই তিনি রোহিঙ্গা নারীদের পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা শুনে ঢাকায় আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জোলি তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় প্রতিটি রোহিঙ্গা নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর আগে গত বছর একই উদ্দেশ্যে কক্সবাজার পরিদর্শন করেন বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াংকা চোপড়া।
রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য ৯২ কোটি ডলার সাহায্য চেয়ে শিগগিরই একটি জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান ঘোষণা করা হবে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে মিয়ানমার এবং ২০০৬ সালে ভারত সফরেও নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে জোলির।
No comments:
Post a Comment