আন্তর্জাতিকভাবে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ও ইরানের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাব সৌদি আরবকে নিজ স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন করে তুলেছে।
বিশ্বের বৃহত্তম রাজনৈতিক ঝুঁকি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান ইউরেশিয়াগ্রুপের ২০১৬ সালের নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে এমন কথাই বলা হয়েছে।
সম্প্রতি শিয়া শীর্ষ আলেম নিমর আল-নিমরের ফাঁসি কার্যকর করার জেরে সৃষ্ট উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢেলে সৌদি আরব ইরানের সাথে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সকল ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এমনকি ইরানের সাথে বিমান যোগাযোগ ও নাগরিকদের ইরান সফর নিষিদ্ধ করে দিয়েছে সৌদি আরব।
ইউরেশিয়া গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইয়ান ব্রেমার বলেন, ‘সৌদি আরব মারাত্নক সংকটাপন্ন এবং তারা নিজেরাও এটা জানে’।
ব্রেমার বলেন, ‘ সৌদি সাম্রাজ্য অর্থনৈতিক সমস্যা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এবং রাজপরিবারের উত্তরাধিকার নির্ধারণ নিয়ে বর্তমানে টালমাটাল অবস্থায় উপনীত।’
তিনি আরো বলেন, ‘ আইএস ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে থাকাটা সৌদির পছন্দ নয় এবং আঞ্চলিক সমস্যার জন্য ইরানকে দায়ী করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সুবিধা লাভের চেষ্টা করছে তারা। এসব কিছু সমস্যাকে আরো তীব্র করছে।’
তেলের মূল্য হ্রাস ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ফলে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যা থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর জন্যই সৌদি রাজপরিবার ইরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বলে ইউরেশিয়া গ্রুপ মনে করছে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরান ও তার মিত্রদেরকে একটি কড়া বার্তা দেয়ার জন্যই আল-নিমরের ফাঁসি দিয়েছে সৌদি।
ইউরেশিয়া গ্রুপের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সৌদির প্রধান উদ্বেগ ইরানকে নিয়ে। অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয়ায় শীঘ্রই ইরানের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং তারা আঞ্চলিক মিত্রদের আরো বেশি অর্থ সাহায্য করতে পারবে’।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের রিসার্স ফেলো আব্বাস কাদিম বলেন, সৌদি আরব ও ইরান পরস্পরের বিরুদ্ধে কখনো সরাসরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। কোনো পক্ষই সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চায় না। বরং তারা মিত্রদের ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যের সব যুদ্ধেই পরস্পরের সাথে প্রক্সি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে।
সিরিয়া ও ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধে সৌদি ও ইরান বিপরীত পক্ষকে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে আসছে। ইয়েমেনে সৌদির প্রতিপক্ষ হুথি বিদ্রোহীরা ইরানের প্রত্যক্ষ সমর্থনপুষ্ট।
অন্যদিকে সিরিযায় আসাদ বিরোধীদের সহায়তা করছে সৌদি আরব যেখানে ইরান সরাসরি আসাদকে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে।
ইউরেশিয়া গ্রুপ তাদের প্রতিবেদনের উপসংহারে বলেছে, ‘ সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও, যেখানেই ইরান প্রবেশ করছে সেখানেই সৌদি আরব বাগড়া দেয়ার চেষ্টা করে। ফলে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। আরো স্পষ্ট করে বললে, এসব পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক উভয়ক্ষেত্রে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সৌদি আরব সমস্যার অতলে তলিয়ে যাচ্ছে।’
সূত্র: হাফিংটন পোস্ট
Tuesday, January 5, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)


No comments:
Post a Comment