দেশে ফিরে হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে সিঙ্গাপুরে জঙ্গি সন্দেহে আট বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত মাসে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে (আইএসএ) তাদের আটক করা হয়। তারা সবাই 'ইসলামিক স্টেট ইন বাংলাদেশ (আইএসবি)' নামে একটি গোপন সংগঠনের সদস্য।
তারা হলেন—মিজানুর রহমান (৩১), লিয়াকত আলী মামুন (২৯), সোহাগ ইব্রাহিম (২৭), রুবেল মিয়া (২৬), দৌলতুজ্জামান (৩৪), শরিফুল ইসলাম (২৭), মো. জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর (৩০) এবং ইসমাইল হাওলাদার সোহেল (২৯)। তারা সেখানে নির্মাণ ও জাহাজশিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিঙ্গাপুরে এস-পাসধারী মাঝারি পর্যায়ের দক্ষকর্মী মিজানুর গত মার্চে 'আইএসবি' নামের সংগঠনটি গড়ে তোলেন। আধাদক্ষ শ্রমিক হিসেবে ওয়ার্ক পারমিটধারী বাকি সাতজনও এতে যোগ দেয়।
এতে আরও বলা হয়, ৩১ বছর বয়সী মিজানুরের কাছ থেকে 'হামলার লক্ষ্যবস্তু' হিসেবে বাংলাদেশের কয়েকজন সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তার নামের তালিকা পাওয়া গেছে। এছাড়াও তার কাছ থেকে অস্ত্র ব্যবহার ও বোমা তৈরি সংক্রান্ত নির্দেশিকা এবং উগ্রপন্থি পুস্তিকা উদ্ধার করা হয়েছে; যেগুলোর সঙ্গে আইসিস বা আইএস (ইসলামিক স্টেট) ও আল-কায়েদা সদস্যদের ব্যবহৃত উপকরণের মিল রয়েছে।
২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সিঙ্গাপুরে 'আইএসবির' সদস্য সংগ্রহের কাজে তিনি এগুলোর ব্যবহার শুরু করেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
এর আগে সন্দেহভাজন ২৭ বাংলাদেশি জঙ্গিকে আটক করার তথ্য গত জানুয়ারিতে জানিয়েছিল সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে ২৬ জনকে পরে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
উদ্ধারকৃত তালিকা ও 'আইএসবি' প্রতিষ্ঠাতা মিজানুর—সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'আইএসবির' এই সদস্যরা বিদেশি যোদ্ধা হিসেবে আইএসে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছিল। কিন্তু ইরাক বা সিরিয়ায় যাওয়া কঠিন মনে হওয়ায় তারা বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে 'সশস্ত্র পন্থায় উৎখাত' করে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং তাকে আইএসের খেলাফতের অধীনে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিল।
বাংলাদেশে এই সংগঠনটির অন্তত দুজন সদস্য রয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, জিহাদি বইপত্র ও ধর্মের জন্য সশস্ত্র হামলা সমর্থন করায় আরও পাঁচ বাংলাদেশিকেও আটক করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে 'আইএসবির' সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
মিজানুরের বরাত দিয়ে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, 'আইসিসের' নির্দেশ পেলে তিনি যেকোনো স্থানে হামলা চালাতেন। তবে সিঙ্গাপুরও হামলার লক্ষ্য ছিল কি-না, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, 'আইএসবি' বাংলাদেশ থেকে আরও অনেককে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিল। এছাড়া সিঙ্গাপুরে কর্মরত বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে সদস্য সংগ্রহ ও অস্ত্র কেনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছিল তারা। সেই অর্থও জব্দ করেছে দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ।
এদিকে, দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আসা পাঁচ বাংলাদেশিকে গ্রেফতারের কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
তিনি জানান, সিঙ্গাপুরে জঙ্গিবাদ প্রচারণার অভিযোগে আটক ১৩ বাংলাদেশির মধ্যে পাঁচজনকে কয়েকদিন আগে ফেরত পাঠান হয়। সকালে রাজধানীর বনশ্রী এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
তারা হলেন—মিজানুর রহমান ওরফে গালিব হাসান (৩৮), রাহা মিয়া পাইলট (২৯), আলমগীর হোসেন (৩১), তানজিমুল ইসলাম (২৪) এবং মাসুদ রানা ওরফে সন্টু খান (৩১)। এ সময় তাদের হেফাজত থাকা উগ্রবাদ সম্বলিত কিছু বই ও পাসপোর্ট উদ্ধারের কথাও জানিয়েছে ডিবি।
তবে সিঙ্গাপুর সরকার আট বাংলাদেশিকে আটকের তথ্য জানালেও তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি নাকি ফেরত পাঠানো হবে সে বিষয়ে কিছু বলেনি।
No comments:
Post a Comment