১৯৯৭ সালে মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘কুলি’ ছবিতে অভিষেক সাদিকা পারভিন পপির। অভিনয় নৈপুণ্য দিয়ে তিনি সবার চোখে পড়ে গেলেন। এরপর কত ছবির যে নায়িকা হয়েছেন পপি! বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে চাহিদার শীর্ষে ছিলেন দীর্ঘদিন। বেশ পরিশ্রমী এই অভিনেত্রী তার অভিনয়ের যাদুতে আটকে রেখেছিলেন দর্শকদের। মাঝে বেশ কিছুদিন বড় পর্দায় দেখা না গেলেও এখন আবার নিয়মিত অভিনয় করছেন তিনি। আর ফিরে এসেই একসাথে কাজ করছেন নয়টি চলচ্চিত্রে। খুব দ্রুতই বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র তার মুক্তি পেতে যাচ্ছে। সাবলীল অভিনয় নিয়ে নতুন রুপে আবারও পর্দায় নিয়মিতই দেখা যাবে এই দীর্ঘাঙ্গিনী অভিনেত্রীকে। নিজের চলচ্চিত্র ভাবনা ও বর্তমান চলচ্চিত্রের অস্থিরতা নিয়ে অভিনেত্রী পপি ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন।
নাটক, বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রে এখন কী কাজ করছেন?
কালাম কায়সারের মেন্টাল নামের একটি নাটকে অভিনয় করলাম। এটি এই ঈদে একটি বেসরকারি চ্যানেলে প্রচার হবে। এছাড়া একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করবো সামনের সপ্তাহে। সেটি একটি ট্রাক্টরের বিজ্ঞাপন। আর এক সঙ্গ নয়টি ছবির কাজ করছি। ‘সোনাবন্ধু’, ‘বিয়ে হলো বাসর হলো না’, ‘মন খোজে বাঁধন’, ‘শর্টকাটে বড়লোক’, ‘দুই ভাইয়ের যুদ্ধ’ ও ‘রাজপথে’। এছাড়া ‘জীবন যন্ত্রনা’ ছবির শুটিং শেষ। মুক্তিযুদ্ধের এই চলচ্চিত্রটি এখন মুক্তির অপেক্ষায় আছে।
শিল্পী সংঘের সদস্য নির্বাচিত হলেন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
শিল্পীদের স্বার্থ সংরক্ষণে যা যা করা দরকার সব করবো। চলচ্চিত্রকে ভালবাসি। এর সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাবো।
বড় পর্দায় অনিয়মিত হয়ে পড়লেন কেন?
ভালো ছবি প্রত্যেক দিন হয়না। আমি যে টাইপের ছবি করি। সেই ধরনের ছবির মেকাররা এখন নেই। অনেকে মারা গেছেন। কেউ কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। ভালো ছবিও এখন খুব কম হচ্ছে। এসব কারণে কিছুটা কম দেখা গেছে।
আচ্ছা, শুধুই কি এই কারণ?
খুব যে কম কাজ করছি তাও নয়। আগে সারা বছর দেড়শো থেকে দুইশো ছবি তৈরি হতো। এখন তা কমে ৪০/৫০ টির মধ্যে চলে এসেছে। সেই সংখ্যা দিয়ে আরো আর্টিস্ট আছে তাদের সঙ্গে ভাগ করে বের করুন। তাহলে দেখবেন আমি ভালই ছবিতে অভিনয় করছি। আমার ভক্ত দর্শক যারা আমাকে যে ধরনের ছবিতে দেখতে অভ্যস্থ, সেই ধরনের ছবি ছাড়া আমি ছবিও করতে চাইনা। নিজের যে ইমেজ রয়েছে তা নষ্ট করতে চাইনা। তাই বেছে বেছে মান সম্পন্ন ভাল ছবিতেই কাজ করছি।
বর্তমান চলচ্চিত্রের অবস্থা কেমন বলে মনে করেন আপনি?
আগে আর্টিস্ট বেজড ভাল ছবি তৈরি হতো। কাজ করে ভাল লাগতো। এখনকার গল্প ঠিক নেই। নাটকের মতো করে ডিজিটাল চলচ্চিত্র হচ্ছে। ভাল ছবি সব সময় হচ্ছেনা।
তিনবার রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেলেন, কেমন লাগে আপনার?
এটা অনেক সম্মানের। অনেক ভাল লাগার বিষয়। স্বীকৃতি পেতে সবারই ভাল লাগে। রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেয়েছি এতবার, তার যেন কোন অসম্মান করা না হয়। তাই যেন তেন কাজ করতে পারিনা। আগের চেয়ে অনেক দায়িত্বজ্ঞানও বেড়েছে। তাই বুঝে শুনে পরিকল্পনা করে কাজ করছি।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা সর্ম্পকে বলুন।
ভবিষ্যতে সাহিত্যনির্ভর ভালো ভালো ছবিতে অভিনয় করতে চাই। নারীপ্রধান গল্পের সিনেমায় কাজ করতে চাই। আগে প্রথম যখন চলচ্চিত্রে এসেছি তখন খুব ভাল জানতাম না, বুঝতাম না। না বুঝে অনেক ধরনের ছবিতে অভিনয় করেছি। এখন সময় ও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে শিখেছি। কোন ধরনের গল্প দর্শক পছন্দ করে, কোন ধরনের গল্পে আমার কাজ করা উচিৎ। অভিজ্ঞতা থেকে এতদিন অনেক কিছু শিখেছি। সেই হিসেবেই ভবিষ্যতে কাজ করে যেতে চাই।
আপনার বিয়ে নিয়ে প্রায়ই গুঞ্জণ ওঠে, অনেকে বলাবলি করেন আপনি বিয়ে করেছেন? এটা কতটুকু সত্য?
এর কোন সত্যতা নেই। মানুষ আমাদেরকে নিয়ে গসিপ করবে, বলবে। এটা নিয়ে কিছু বলতে চাইনা। এটা স্বাভাবিক। আর বিয়ে যদি করি তাহলে সবাইকে কেন বলবো না। এটা তো কোন ক্রাইম না। আমি এমন কিছু করি না, যা মানুষের কাছ থেকে আমাকে লুকাতে হবে। বিয়ে যখন করবো তখন সবাইকে জানিয়েই করবো।
আপনার সমসাময়ীক সবাই বিয়ে করে ফেলেছে, আপনি কবে করবেন? প্রেম করছেন?
প্রেম তো করছি। (হেসে) তবে কাজের সাথে। মনের মতো কাউকে পাচ্ছিনা যার উপর ভরসা করা যায়। তাই বিয়ে করছি না। এছাড়া বিয়ের জন্যই শুধুমাত্র বিয়ে করতে চাইনা। সবাই বিয়ে করে ফেলছে তাই আমাকেও এখন তাড়াহুড়া করে করতে হবে আমি এমনটাও ভাবিনা। কাজ নিয়েও দেখবেন আমার কোন তাড়াহুড়া নেই। হুট করে বিয়ে করে ফেললাম আর দেখা গেলো বনিবনা হলো না, পরে আবার ডিভোর্স। এর চেয়ে বিয়ে না করাই ভালো, ঝামেলায় পড়তে চাইনা।
No comments:
Post a Comment