বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকরা যেমন নির্যাতিত হচ্ছে। তেমনি বাংলাদেশি অদক্ষ শ্রমিকদের চাহিদাও কমে যাচ্ছে। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যসহ মধ্য পূর্ব এশিয়ার দেশগুলেতে অনেক টাকার বিনিমেয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকরা যাচ্ছে। কিন্তু যাওয়ার পর যেমন কাজ পায় না; আবার কাজ পেলেও যা বেতন পায় তাতে নিজেই চলতে পারে না। ফলে বাংলদেশের বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে গুরতর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
এ বিষয় নিয়ে কথা হয় একজন জনশক্তি রপ্তানী ব্যবসায়ী আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে। তিনি জনশক্তি রপ্তানীকারকদের সংগঠন বায়রার সহ-সভাপতি। তিনি ভয়েস বাংলাকে জানান, ‘ বাংলাদেশের শ্রমবাজার সংকুচিত হচ্ছে এ কথা যেমন সত্য তেমনি আবার প্রসারিত হচ্ছে একথাও সত্য। পৃথিবীতে কোন দিন মানব সম্পদের চাহিদার শেষ হবে না। মূলত ইদানিং চাহিদার ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। এক সময় মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে খেটে খাওয়া শ্রমিক শ্রেণির চাহিদা ছিল বেশি। কিন্তু সেই পরিবেশ এখন আর নেই। বর্তমানে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত লোকের চাহিদা বেড়েছে। এখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাচ্ছে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন লোক। তাই বলা যায় বাজার শেষ হয়ে যাচ্ছে এটা ঠিক নয়; বরং শ্রমবাজার প্রসারিত হচ্ছে।
দেশের বাইরে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে বেশি টাকা নিয়ে লোক পাঠানো ও এক কাজের কথা বলে আরেক কাজ দিয়ে লোক পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে বায়রার ব্যর্থতা আছে কিনা বা থাকলে তা কতটুকু? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করি না আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এ ধরণের ঘটনা ঘটলে দেখা যায় প্রতারণার সাথে যারা জড়িত তাদের আমরা চিনি না । তারা আমাদের সদস্যও না। তবে বায়রা চেষ্টা করছে দক্ষ জনবল তৈরির। বায়রার মাধ্যমে ট্রেনিং সেন্টার গঠন হয়েছে। বায়রা চেষ্টা করছে স্বচ্ছভাবে কর্মী বিদেশে পাঠাতে। আমরা এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি বায়রার কোন সদস্য কোন ধরণের প্রতারণার সাথে জড়িত থাকে না।
এখন দক্ষ জনবল বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রত্যেক রিক্রুটিং এজেন্সি নিজ নিজ দায়িত্বে অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিদেশে শ্রমবাজার প্রসারের ক্ষেত্রে সব সময় সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আব্দুল হাই আরো বলেন, বর্তমান পৃথিবীর বাস্তবতায় যে দেশে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন লোক যত বেশি সেই দেশ তত উন্নত। আমাদের দেশের জন্যও এ বিষয়টি সত্য। আমাদের বেকার জনসমষ্টিকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। কেননা আজকের পৃথিবীতে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানের মত উন্নত দেশগুলোতে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবলেন ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে এইজ কেয়ার ক্যাটাগরির প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
তিনি জানান, এজন্য আমরা চেষ্টা করছি কারিগরি শিক্ষপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সংগঠিত করতে। শুধু মাত্র সরকারের ওপর নির্ভর করে থাকলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব না। তাছাড়া আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের দক্ষ জনবলের চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। একটি বিষয় আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। যেমন বর্তমানে আমাদের রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গিয়েছে। আমাদের প্রবাসী বন্ধুদের পরিশ্রমের ফল তাদের পাঠানো রেমিটেন্স আমাদের দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের এ অগ্রযাত্রার জন্য ব্যাংকিং সেক্টরকে এ খাতে সহযোগিতা করা উচিত। খুবই দুঃখজনক হলেও সত্য যারা পরিশ্রম করে শরীরের রক্ত পানি করে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। তাদের প্রতি আমরা খুব বেশি কৃতজ্ঞ না।
আব্দুল হাই বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিদেশে জনবল পাঠানোর ক্ষেত্রে ব্যয় নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সেই টাকাতে জনবল পাঠানোর। বর্তমানে সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যে যারা যাচ্ছে তারা চাকরিও পাচ্ছে ভালো আছে। একটা কথা আমি বলতে পারি সৌদিতে ফ্রি ভিসার নামে যারা গিয়েছে তারা এখন চাকরি খুঁজছে। এখানে কেউ ভাই বা বোনদের মাধ্যমে ভিসা নিয়ে যাচ্ছে। এটা বায়রার বাইরে।
মেহবুবা আফতাব সাথী একজন গণমাধ্যম কর্মী। তিনি ২৩ বছর ধরে সৌদিতে বসবাস করছেন। তিনি ভয়েস বাংলাকে বলেন, দেশের বাইরে শ্রমবাজারে আমাদের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে হবে আমাদের নিজেদের। আমাদের দক্ষ জনবল তৈরি করে পাঠাতে হবে বাইরে। এ জন্য আমাদের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে দাযিত্বশীল হতে হবে। প্রয়োজনে চার পাঁচজন রিক্রুটিং এজেন্সি মেলে একটি করে ট্রেনিং সেন্টার গড়ে তুলতে হবে। তাদের কাজ শেখাতে হবে যে কাজ নিয়ে যাবে তারা বিদেশে। তাছাড়া ন্যুনতম যোগাযোগে সক্ষম করতে কর্মীদের ইংরেজি শেখাতে হবে।
No comments:
Post a Comment