Social Icons

Wednesday, July 12, 2017

মেক্সিকোর কারাগারে বাড়ছে বাংলাদেশি বন্দির সংখ্যা


মেক্সিকো হয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় মেক্সিকোর ভূখণ্ড থেকে গত কয়েক বছরে আটক হয়েছে কয়েক হাজার বাংলাদেশি। তারা এখন মেক্সিকোর বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে, মেক্সিকোতে বাংলাদেশি বন্দির সংখ্যা দিন দিন ব্যাপকহারে বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেনমেক্সিকোর জাতীয় অভিবাসন সংস্থার (আইএনএম) কর্মকর্তারা। তারা বিষয়টি নিয়ে সে দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বৈঠকে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়া থেকে মেক্সিকোয় অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। আর এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি অভিবাসী রয়েছেন। এসব অভিবাসীদের মূল লক্ষ্য ছিলো সুযোগ বুঝে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা। এসব কর্মকান্ডের সাথে বিশেষ করে এ ধরনের অবৈধ এ মানবপাচারের সাথে বাংলাদেশ দূতাবাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে দেশটির কর্মকর্তারা। উন্নত ও সচ্ছল জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে গরীব ও খেটে খাওয়া গ্রামের এসব মানুষের কাছ থেকে ১৮-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে একটি অসাধু চক্র।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মাইগ্রেশন, মেক্সিকো (আইএনএম) এবং ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন এজেন্সি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে যথাক্রমে ১৪৯, ১৬৭, ৩২৮, ৬৯০, ৬৪৮, ৬৯৭ ও ১২০ বাংলাদেশি আটক হয়। তারা বর্তমানে মেক্সিকোর জেলে বন্দি। অন্যদিকে ইউএস বর্ডার প্রটেকশন এজেন্সির হাতে গত ছয় বছরে আটক হয়েছেন দুই হাজার চারশ’রও বেশি বাংলাদেশি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগে কয়েকটি দেশ হয়ে মেক্সিকোতে যান বাংলাদেশিরা। কখনও কখনও এর জন্য ১০-১২টি দেশও পাড়ি দেয় তারা।
মানবপাচারের রুট হিসেবে প্রথমে বাংলাদেশ থেকে প্লেনে দুবাই/ইস্তাম্বুল/তেহরান এরপর ভেনিজুয়েলা/বলিভিয়া অথবা স্প্যানিশ গায়ানা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার রুট রয়েছে আরও কয়েকটি। ভেনিজুয়েলা, ব্রাজিল, গায়ানা ও বলিভিয়া থেকে দুর্গম পথে যাত্রা করে কলম্বিয়া-পানামা-কোস্টারিকা-নিকারাগুয়া-এল সালভাদর-গুয়াতেমালা হয়ে মেক্সিকো। এরপর মেক্সিকো থেকে সুযোগ বুঝে সীমানা অতিক্রম করে স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানো সম্ভব হয়।
পাচারকারীরা সাধারণত জনবহুল এলাকা এড়িয়ে মরুভূমি, পাহাড় কিংবা জঙ্গল পথে যেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি কম সেসব রুট ব্যবহার করে থাকেন। দুর্গম এসব পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেককেই বরণ করে নিতে হয় মৃত্যু। কেউ কেউ আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসব দুর্গম পথ থেকে মার্কিন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ছয় হাজারেরও বেশি মরদেহ উদ্ধার করেছে। তবে এর মধ্যে কতজন বাংলাদেশি রয়েছে তার সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি তারা।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমানো মানুষগুলো আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের কবলে পড়ে অসংখ্য বাংলাদেশি হয়রানির শিকার হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই তারা মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে- এটিই এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। ভুক্তভোগীরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে যেতে আগ্রহীদের জিম্মি করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা হয়। অর্থ আদায়ের কৌশল হিসেবে অপরাধীচক্র অবৈধ অভিবাসীদের দু-একজনকে হত্যা করে বাকিদের ভয় দেখায়। মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে অনেকেই তাদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা যোগাড় করতে বাধ্য হয়।
ভুক্তভোগী এমন একজনের সাথে কথা হয়। সিরাগঞ্জের আমিনুল ইসলাম জানান, তার আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন তাকে সর্বশান্ত হতে হয়েছে। টাকাতো খরচ হয়েছেই উপরন্তু দালালদের হাত থেকে মুক্তি পেতে পথে বসার অবস্থা তৈরি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মেক্সিকোর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের হিসাব মতে, প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার অভিবাসী অপহরণের শিকার হয়। পরবর্তীতে মুক্তিপণের দাবিতে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। অভিযোগ আছে, মানবপাচারকারী এসব চক্রের সাথে মেক্সিকো সিটির বাংলাদেশ দূতাবাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। মেক্সিকোসিটি প্রশাসনের আয়োজনে বার্ষিক সংস্কৃতি মেলায় অংশ নিয়ে তারা দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেন। এর মাধ্যমে গরীব বাংলাদেশিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া অর্থ সাদা করে নেয় মানবপাচারের হোতারা।
এদিকে অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রমের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এখন জেল খাটছে অনেক বাংলাদেশি। আবার অনেকেই আত্মসমর্পণ করে সেদেশে আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে বিরোধী দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এমন অনেকেই ‘অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন’- এমন অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের সুযোগ নিচ্ছে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, মার্কিন অভিবাসন আদালত বাংলাদেশিদের প্রতি তেমন সদয় নয়।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে মাত্র ১৩ শতাংশ বাংলাদেশির আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ৩৮ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তাদেরও অপরাধ ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates