দিন দিন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ কর্ম-পরিবেশ তৈরি হয়ে উঠছে বাহরাইনে। যেখানে একটা সময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হত। সেখানে বর্তমানে নিশ্চিত কর্মপরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ এরই মধ্যে অবৈধ বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থাও করছে দূতবাস। ফলে বেকার বাংলাদেশিদের উপর চাপও কমে যাচ্ছে।
বাহরাইনে বাংলাদেশিদের ভালো অবস্থার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন মেজর জেনারেল কে. এম. মমিনুর রহমান। তিনি বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করে। মানুষের সংখ্যা দিন দিন যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে বাড়ছে হাসপাতাল, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগ এবং রোগীদের সংখ্যা। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নার্সদের চাহিদা। ফলে বর্তমান সময়ে পুরো পৃথিবীব্যাপি নার্সিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। এ পেশায় যেমন মানব সেবার সুযোগ রয়েছে তেমনি রয়েছে ভালো ক্যারিয়ারও।
বর্তমানে বাংলাদেশের এক হাজারেরও বেশি নার্স সৌদি আরব, লিবিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১৩টি দেশে কাজ করছে। ইংরেজি জানা ও উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ নার্স গড়ে তুলতে পারলে এই খাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব হবে বাংলাদেশের জন্য।
এখন বাহরাইনে বাংলাদেশিদের মধ্যে যেমন শ্রমিক রয়েছে তেমনি রয়েছে বেশ কিছু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও ব্যাংকার। বাহরাইনের সুন্দর কর্ম-পরিবেশ ও বাংলাদেশ দূতাবাসের দক্ষতার কারণে বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগও বাড়ছে দিনকে দিন। বাহরাইনের কর্মক্ষেত্রে নার্সদের জন্য রয়েছে অনেক সুযোগ। বাংলাদেশি নার্সদের বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে হতে পারে বাহরাইন অন্যতম একটি ঠিকানা।
বাহরাইনে শ্রীলঙ্কান, ইন্ডিয়ান, ফিলিপাইনের নার্সরা কাজ করে সবচেয়ে বেশি। ঐ দেশগুলোর নার্সদের মধ্যে ফিলিপাইনের নার্সরা সবচেয়ে দক্ষ। কেননা তারা যেমন ইংরেজিতে দক্ষ তেমনি অনেক বেশি সেবা করার মানসিকতা আছে তাদের মধ্যে। বাহরাইনে নার্স হিসেবে যারা কাজ করে সেখানে দেখা যায় একজন নার্স মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকার মত উপার্জন করে থাকে।
বাহরাইনের অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় এই নার্সিং খাতে বাংলাদেশিদের কাজ করার বড় একটা সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এখানে যেটা বাধা হিসেবে দেখা দিতে পারে তা হল ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা কম থাকা। বিশেষ করে বাংলাদেশের ডিগ্রিপ্রাপ্ত নার্সরা পেশাগত দক্ষতায় বিশ্বের অনেক দেশের নার্সদের সমকক্ষ হলেও ইংরেজিতে দক্ষ না হওয়ায় সিজিএফএনএস (কমিশন অব গ্রাজুয়েটস অব ফরেন নার্সিং স্কুলস) -এর মতো আন্তর্জাতিক টেস্টিং পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ্ হতে পারছেন না।
ইংরেজিতে দক্ষ হতে পারলে বাংলাদেশি নার্স, ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যসেবা খাতের অন্যান্য পেশাজীবির বিদেশে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং তাতে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।
প্রায় ১৪ বছর ধরে বাহরাইনে বসবাস করেন ব্যবসায়ী ফারুক শিকদার। ভয়েস বাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি বাহরাইনে ব্যবসা করছি শুরু থেকেই। তবে বাহরাইনে আগে অনেক সমস্যা ছিল কিন্তু এখন পরিবেশ অনেক ভালো হয়ে উঠছে। অবৈধ বাংলাদেশির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে এখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা তৈরি হচ্ছে। যেমন বাহরাইনে নার্সিং পেশা হতে পারে বাংলাদেশি নার্সদের জন্য একটি সম্ভাবনার খাত। আমি মনে করি নার্সিং পেশায় সেবার মানের দিক দিয়ে আমাদের দেশের নার্সরা অনেক দক্ষ।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নার্সরা এখানে আসলে অনেক ভালো কর্ম পরিবেশ যেমন পাবে তেমনি অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।’ তবে একথা সত্য নার্স বা ডাক্তার হিসেবে পেশাজীবিদের জন্য দেশের বাইরে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা থাকলেও আমরা ইংরেজি ভাষায় দক্ষ না হওয়ায় তা কাজে লাগাতে পারছি না। এই ধরণের অপার সম্ভাবনাময় খাত থেকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব তেমনি বিদেশে আমাদের পেশাজীবীদের কর্মক্ষেত্রেও তৈরি হবে। সেজন্য আমাদের ভাষাগত দিক দিয়ে দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে। তবেই তা কাজে লাগানো সম্ভব হবে।
No comments:
Post a Comment