অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার আরেক দফা সুযোগ দিলো মালয়েশিয়া সরকার। গত ৩০ জুন মধ্যরাতে অবৈধদের বৈধ হওয়ার ই-কার্ড প্রক্রিয়ার সময়সীমা শেষ হয়। সময় শেষ হওয়ার পরপরই মধ্যরাত থেকেই অবৈধ বিদেশি শ্রমিক আটকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ। ঐ অভিযানে গত কয়েকদিনে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ শ্রমিক আটক হওয়ার পর আবারও দেশটিতে অবস্থানরত শ্রমিকদের রিহায়ারিংয়ের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার আহবান জানিয়েছে দেশটির সরকার। এর অংশ হিসেবে দূতাবাস থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিবন্ধিত হওয়ার জন্য নতুন করে আহবান জানানো হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, গত ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ই-কার্ডের (এনফোর্সমেন্ট) মাধ্যমে ৯২ হাজার ৭শ ৯১ জন অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক নিবন্ধিত হয়েছে এবং ই-কার্ড পেয়েছে, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এ ছাড়া ই-কার্ড নিবন্ধনের সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হলেও রিহায়ারিং প্রক্রিয়া এখনো চালু রয়েছে। এ প্রক্রিয়া চলবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত দুই লাখ ৮৭ হাজার ৩শ ১১ জন বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিক নিবন্ধন করেছে। যারা এখনও নিবন্ধন করেননি তাদের দ্রুত মাই-ইজি, ভূক্তিমেঘা ও ইমান এই তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ এসব বাংলাদেশিদের আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বৈধ হতে নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। এর আগে অবৈধ শ্রমিকদের ই-কার্ডের মাধ্যমে বৈধ হয়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু ৩০ জুন র্নিধারিত সময় শেষ হওয়ার পর দেখা গেছে অবৈধ শ্রমিকদের মধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে মাত্র ২৩ শতাংশ শ্রমিক। যারা বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় গেছেন, পাসপোর্ট আছে কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে কিংবা কমপক্ষে ছয় মাস অবৈধ অবস্থায় কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে, তারা এখন রিহায়ারিং প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে বৈধ হতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে ওই ব্যাক্তির নামে কোনো অপরাধের রেকর্ড থাকা যাবে না, বয়স ৪৫ বছরের কম হতে হবে এবং পূর্বতন প্রতিষ্ঠান থেকে ইমিগ্রেশনে কোনো অভিযোগ থাকা যাবে না বলেও জানানো হয়েছে।
নিয়মাবলি ১. শ্রমিকদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বা চিঠির মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ২. ইমিগ্রেশন হতে ভিসা স্টিকারপ্রাপ্তি সাপেক্ষে লেভি শোধ করতে হবে। ৩. রিহায়ারিং কর্মসূচির আওতায় বৈধতার মেয়াদ হবে তিন থেকে পাঁচ বছর। রিহায়ারিং প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো এজেন্ট বা দালালের মাধ্যমে রিহায়ারিং করা যাবে না। তবে যারা ই-কার্ড পেয়েছেন তাদের পাসপোর্ট না থাকলে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে এবং রিহায়ারিংয়ের কাজ শেষ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল ইসলাম আরও জানান, রিহায়ারিং প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ শ্রমিকদের যে সুযোগ অব্যহত রেখেছে তা সম্পন্ন করতে দূতাবাস থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হবে। আর এজন্য শ্রমিকদের সুবিধা দিতে প্রতিমাসের তৃতীয় সপ্তাহের শনি ও রবিবার জহুরবারু, পেনাং, মালাকা, ক্যামেরুন হাইল্যন্ডসহ বিভিন্ন স্থানে দূতাবাসের মোবাইল টিম নতুন পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ ও পাসপোর্ট বিতরণ করবে। এরইমধ্যে তা চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোনোভাবেই দালালদের হাইকমিশনের আশেপাশে ঘেঁষতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে সিরিয়াল অনুযায়ী ডিজিটাল পাসপোর্ট তৈরি এবং নবায়ন থেকে শুরু করে সবই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে নিয়মানুযায়ী।
হাইকমিশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী শ্রমিকবান্ধব হওয়ায় প্রবাসীরা দ্রুত এ সেবা পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে আসা শ্রমিকরা কোনো ধরনের দালাল ছাড়াই যাতে তাদের কাজ অল্প সময়ে শেষ করে চলে যেতে পারেন, সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে । ই-কার্ডের সুযোগ হারানোর ফলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য এখন শুধুমাত্র রিহায়ারিং প্রক্রিয়া অব্যহত রয়েছে। আর এই প্রক্রিয়া চলবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
গত দু-সপ্তাহে আড়াই হাজার অবৈধ শ্রমিক আটক করার পর দেশটির সরকার আবারোও শ্রমিকদের রিহায়ারিং প্রক্রিয়ায় বৈধ হওয়ার আহবান জানালো। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বর্পূণ। কারণ মালয়েশিয়ায় ছয় লাখ অবৈধ বাংলাদেশির মধ্যে প্রায় তিন লাখ শ্রমিক এখনও এই সুযোগ নেয়নি। যদি দূতাবাস ভালোভাবে ক্যাম্পেইন ও লোকবল নিয়োগ করে দেশটিতে অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকদের এই প্রক্রিয়ায় অন্তুভূক্ত করে তাহলে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বড় এই শ্রমবাজারে বাংলোদেশি শ্রমিকদের কাজের জায়গা অনেকটাই নিরাপদ হবে।
যদি সেটা না করা যায় তাহলে অবৈধ শ্রমিকদের কারণে সেদেশে বৈধ শ্রমিকদের উপরও প্রভাব পড়তে পারে। সেই সাথে মালয়েশিয়া সরকার যদি আবার ধড়পাকড় শুরু করে তাহলে শ্রমিকদের কাজে ব্যাঘাত ঘটবে। আর অবৈধ এসব শ্রমিকদের কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে জনশক্তি রপ্তানির প্রক্রিয়া। এর ফলে রেমিটেন্সে ধীর গতি নেমে আসবে। সেই সাথে এই বিপুল শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে দিলে তাদের কর্মসংস্থান করাও কঠিন হয়ে পড়বে।
No comments:
Post a Comment