চলতি বছর আগস্ট মাস থেকে রেমিটেন্স বাড়া শুরু হয়েছে। কিন্তু নতুন শঙ্কা জাগাচ্ছে দেশের জনশক্তি রপ্তানি খাত। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এমনকি মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরেও বাংলাদেশের শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে পড়ছে। একই সাথে যোগ হয়েছে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমিক নির্যাতনের খবর। বাংলাদেশের প্রধান ১১টি শ্রমবাজারের মধ্যে চালু রয়েছে দশটি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে বহুদিন ধরে কূটনৈতিক ভাবে বন্ধ থাকা শ্রমবাজারটি খোলার ব্যবস্থা করে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু সঠিক সমাধানে এখনো পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ।
এছাড়াও বহুদিন বন্ধ থাকার পর চালু হওয়া অন্যতম শ্রমবাজার সৌদি আরবে আগের তুলনায় বেড়েছে নারী শ্রমিক নির্যাতনের পরিমান, একই সাথে জর্ডানে বাংলাদেশি নারী নির্যাতনের চিত্র ভয়ংঙ্কর। যার কারণে একদিকে কমে যাচ্ছে বিদেশে নারীদের যাওয়ার পরিমাণ অন্যদিকে কমে যাচ্ছে প্রবাসী আয়। ফলে শঙ্কা জাগছে দেশের অন্যতম শীর্ষ এই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতটিতে।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ওমান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, লেবানন, জর্দান ও লিবিয়া হচ্ছে বাংলাদেশের শীর্ষ শ্রমবাজার। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত লিবিয়ার পরিচিতি দাঁড়িয়েছে মানব পাচারের বিশেষ রুট হিসেবে। ফলে দশ দেশেই কর্মী পাঠিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। কিন্তু এ দেশগুলোতেও অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশিদের।
যদিও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দাবি বিশ্বের ১৬২টি দেশে প্রবাসীরা রয়েছে। উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপসহ নতুন ৮০টি দেশে শ্রমবাজার খোঁজা হলেও এখনও কোনো সাড়া পায়নি তারা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০ লাখ কর্মী থাকলেও বর্তমানে নতুন করে কর্মী পাঠানো বন্ধ রয়েছে দেশটিতে। এদিকে বহুদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি উন্মুক্ত হয় সৌদি আরবের শ্রমবাজার। নারী গৃহকর্মী পাঠানোর মধ্য দিযে এই বাজারটি বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় হয়ে দেখা দেয়। তবে সেখানে কাজ করতে যাওয়া নারী শ্রমিকদের মধ্যে যৌন নির্যাতনসহ শারিরীকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ প্রতিনিয়ত শোনা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত দেশটিতে কাজ করতে যাওয়া ২২ বাংলাদেশি নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাদের অনেকেই নির্যাতনের শিকার।
গত ২৫ আগস্ট দেশে ফিরেছেন সৌদিতে নির্যাতনের শিকার হওয়া চুয়াডাঙ্গার এক নারী। শরীরে পোড়া ক্ষত নিয়ে ফেরা ওই নারী জানিয়েছেন প্রতিনিয়ত নির্যাতনের এক পর্যায়ে তাকে বিমানবন্দরে ফেলে দিয়ে যান তার নিয়োগকর্তা। এরকম নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের সংখ্যা বাড়ছে সৌদি আরবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায় সৌদি আরবসহ মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ বেশ পুরনো। গত বছর সৌদি আরব থেকে ঢাকায় পাঠানো বাংলাদেশ দূতাবাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত কাজের চাপ, প্রতিশ্রুত বেতন না পাওয়া, বা নির্যাতনের শিকার হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়ছেন সেখানে কাজে যাওয়া নারী শ্রমিকরা। এসব বিষয় নিরসনে বেশ কযেকটি সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে। তবে তা বাস্তবায়নের হার সীমিত বলে একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন দেশটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ।
এছাড়া সম্প্রতি বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। বৈধ এবং অবৈধভাবে দেশটিতে যাওয়া বাংলাদেশিরা শিকার হচ্ছেন হয়রানির। কাজের ক্ষেত্র কমে যাওয়ায় তাদের আয় কমছে। এছাড়া গত জুনে চালানো সাড়াশি অভিযান ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আটক হওয়া ১০ হাজার বাংলাদেশি এখন দেশটির কারাগারে আটক রয়েছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ না নেওয়া নিয়ে রয়েছে সমালোচনা। এই সংকট উত্তরণে দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠানোর উপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি‘র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠানো গেলে প্রবাসী আয় বাড়ানো সম্ভব। তিনি ফিলিপাইনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, দেশটির ৩৫ লাখ প্রবাসী বছরে পাঠান ২৫ বিলিয়ন ডলার, আর বাংলাদেশের ১ কোটি প্রবাসী পাঠান ১৪ বিলিয়ন ডলার।
দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর কারণে তারা এই বিপুল পরিমাণ আয় করে থাকে। তাই অদক্ষ নয় দক্ষ শ্রমিকের অনেক অনেক অভাব আমাদের শ্রমবাজারে। যার কারণে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বেশি শ্রমিক না পাঠিয়ে দক্ষতাসম্পূণ শ্রমিকের প্রয়োজন। একই সাথে এ দক্ষশ্রমিকের দিকে মনোযোগ বাড়ানেরা দাবি জানান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
No comments:
Post a Comment