বিশ্বব্যাপী স্যার রিচার্ড বার্টন বিখ্যাত জন স্পেকের সাথে নীল নদের উৎসের খোঁজে আফ্রিকা ভ্রমণের জন্য। ভাষাবিদ্যায় দক্ষতা, মানচিত্র অঙ্কনবিদ্যায় পারদর্শিতা, ভূগোলবিদ্যায় অসামান্য দখলের কারণে তাকে ‘সকল কাজের কাজী’ সম্বোধন করা হয়। তিনি লেখালেখিও করতেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় পঁচিশটির উপরে ভাষা জানা ছিল তার। আঞ্চলিক ভাষাসহ যার সংখ্যা দাঁড়ায় চল্লিশের মতো।
তবে তিনি একটি সম্প্রদায়ের কাছে আরো ভালোভাবে পরিচিত তার মক্কা ভ্রমণের কাহিনীর কারণে। তিনি আফ্রিকা ভ্রমণের আগে প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে মক্কায় হজ্ব পালন করেন! আর লক্ষ্যণীয়ভাবে তিনিই প্রথম অমুসলিম যিনি কিনা সফলভাবে মক্কায় তীর্থযাত্রী হিসেবে প্রবেশের সুযোগ পান। যদিও নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাকে মুসলিম তীর্থযাত্রী ছদ্মবেশ নিতে হয়েছিল। তবে ব্যাপারটা ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা সে সময় মক্কা ছিল অমুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ শহর। আর তার ছদ্মবেশ সম্পর্কে জানাজানি হয়ে গেলে তার বিরাট ক্ষতির সম্ভাবনা ছিলো।
এ যাত্রার আগেও তাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। মুসলিম ঐতিহ্যের সাথে নিজেকে সফলভাবে মানিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। ভাগ্যক্রমে তিনি আরবিতে অকপটে কথা বলতে পারতেন। আর ভারতে সেনাবাহিনীতে কাজ করার সময় ইসলাম সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই শিক্ষা নিয়ে রেখেছিলেন তিনি। কিংবদন্তী অনুযায়ী, মুসলিম ছদ্মবেশটাকে আরো বেশি নির্ভরযোগ্য করার জন্য তিনি নিজের খৎনা পর্যন্ত করান! তবুও তার ভ্রমণ অতটা সহজ ছিল না। ১৮৫৩ সালে ব্রিটিশ আর্মি থেকে ছুটির অনুমতি নিয়ে মিশর হয়ে মক্কার দিকে তার ভ্রমণ শুরু হয়। পথিমধ্যে তার দলটি অনেকবার দস্যু দল দ্বারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়। এতসব বিপদ সত্ত্বেও বার্টন সফলভাবে হজ্ব সম্পন্ন করেন এবং দেশে ফিরে তার ভ্রমণ নিয়ে বইও লিখেন, যা ঐ সময়ে তাকে ইউরোপের বেশ জনপ্রিয় বানিয়ে দেয়।
No comments:
Post a Comment