বাংলাদেশে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘মুক্তমনা ব্লগার’ হত্যার ধারাবাহিক নৃশংসতা। এরপর অনেককেই হত্যা করা হয়েছে। একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ব্লগাররা। প্রাণনাশের হুমকি থাকায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তারা।
পরিসংখ্যান বলছে, ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ জন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চলে গেছেন। আরো অনেকে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে। বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম অন্তত দু’টি বিদেশি দূতাবাসের বরাত দিয়েছে জানিয়েছে, বেশ কিছু সংখ্যক ব্লগার বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।
আর যারা এরইমধ্যে বিদেশে গেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, ওমর ফারুক লুক্স, অনন্য আজাদ, শাম্মী হক, মাহমুদুল হক মুন্সি (সস্ত্রীক), মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজ। এছাড়া আরেক ব্লগার অমি রহমান পিয়ালও সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয় নিচ্ছেন বলে ফেসবুকে জানা গেছে।
নাজিমুদ্দিন সামাদের আগে সবশেষ খুনের শিকার হন নীলাদ্রী চ্যাটার্জি ওরফে নিলয়। ‘নীল নিলয়’ ছদ্মনামে তিনি লিখতেন। এর আগে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ ও ওয়াশিকুর রহমান। এসব হত্যাকান্ডের কোনটারই এখন পর্যন্ত বিচার হয়নি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ব্লগারদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জার্মানি। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন অনেক ব্লগার। তারা ঢাকায় দূতাবাসগুলোতে নিয়মিত যোগাযোগও করছেন।
এর আগে ‘ইসলামি উগ্রবাদীদের’ হুমকির মুখে থাকা বাংলাদেশি লেখকদের জরুরি আশ্রয় দেয়ার জন্য গত বছরের ২১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির কাছে চিঠি লেখে পেন আমেরিকান সেন্টারের নেতৃত্বে আটটি সংগঠনের একটি জোট। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডারস এবং ফ্রিডম হাউজ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন ব্লগার পরিচয় ব্যবহার করে রাজনৈতিক আশ্রয়ের সুযোগ নিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করতে পারে। কারন রাজনৈতিক আশ্রয়ের নামে অভিবাসনের সুযোগ নেয়ার বিষয়টি অসম্ভব কিছু নয়। এরইমধ্যে বিদেশে পাড়ি দেয়া ব্লগারদের মধ্য থেকেও এমন অভিযোগ করা হয়েছে। অনেক ব্লগার ফেসবুকে একাধিকবার স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, অনেকে ব্লগার না হয়েও বা অত্যন্ত নিম্নমানের ব্লগার হয়েও নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে আশ্রয়ের জন্য দূতাবাসে ধরনা দিচ্ছেন।
No comments:
Post a Comment