উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের কপালে। তাদের মতে, চীন চাইলেই উত্তর কোরিয়ার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারত। কিন্তু পাকিস্তান আর উত্তর কোরিয়া উভয়ের পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের প্রচেষ্টায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে চাচ্ছে না বেইজিং।
ভারতের আশঙ্কার বিষয় হল, উত্তর কোরিয়ার এইসব সফল অস্ত্র পরীক্ষায় পরোক্ষভাবে লাভবান হচ্ছে পাকিস্তান।
পরমাণু অস্ত্র ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছে পাকিস্তান। এমনকি ওয়ারহেডের সংখ্যায় ভারতকেও ছাপিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই ২২০০ কিলোমিটার রেঞ্জের ‘আবাবিল’ ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা করেছে পাকিস্তান, যাতে রয়েছে MIRV অর্থাৎ যা নাকি একটি মিসাইলেই একাধিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। ভারতের অগ্নি সিরিজের ব্যালিস্টিক মিসাইলেও এই ক্ষমতা থাকবে।
বলা বাহুল্য, কিছুদিন আগেই জাপান সফরে গিয়ে অরুণ জেটলি উত্তর কোরিয়ার এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেন। জাপান এই ব্যাপারে আরো বেশি চিন্তিত। তবে ভারতের ক্ষেত্রে চিন্তার বিষয় হল পাকিস্তান। কারণ চীন চাইলে উত্তর কোরিয়ার মত পাকিস্তানকেও এই কাজে সাহায্য করতে পারে। আর বিষয়টি মোটেও অজানা নয় যে কয়েক দশক ধরে এই দুই দেশকে প্রচ্ছন্ন মদত দিয়ে আসছে চীন। বেইজিং-ই প্রথম পাকিস্তানকে ইউরেনিয়াম ডিভাইসের ডিজাইন দিয়েছিল। এমনকি চীনের মাটি থেকে একটি পাকিস্তানের একটি নিউক্লিয়ার ডিভাইসও পরীক্ষা করা হয় ১৯৯০ তে। উত্তর কোরিয়ার মিসাইল টেকনোলজিতেও সাহায্য করেছে চীন।
জানা যায়, এক গোপন চুক্তিতে পাকিস্তান উত্তর কোরিয়াকে দিয়েছিল পরমাণু অস্ত্রের প্রযুক্তি আর বদলে পিয়ংইয়ং ইসলামাবাদের হাতে মিসাইল প্রযুক্তি তুলে দেয়। যেমন, পাকিস্তানের ১৫০০ কিলোমিটারের ‘ঘৌরি-আই’ মিসাইল আসলে উত্তর কোরিয়ার ‘নদং’ মিসাইলের ধাঁচেই তৈরি।
আবারো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে যাচ্ছে উ.কোরিয়া
আরো একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। এমনটাই দাবি প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়ন বৃহস্পতিবার বলেছেন, ৯ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আগামী শনিবার আবারো আর একটি আর্ন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষা করতে চলেছে উত্তর কোরিয়া।
আরো একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। এমনটাই দাবি প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়ন বৃহস্পতিবার বলেছেন, ৯ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আগামী শনিবার আবারো আর একটি আর্ন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষা করতে চলেছে উত্তর কোরিয়া।
সোলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। পুরোপুরি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হতে উত্তর কোরিয়ার আর হয়তো খুব বেশি সময় লাগবে না।’’
এই প্রসঙ্গেই লি নাক-ইয়নের দাবি, ‘‘কেউ কেউ মনে করছেন ৯ তারিখ আর একটি আইসিবিএম পরীক্ষা করবে উত্তর কোরিয়া। ওদের এই বেপরোয়া অবস্থান ঠেকাতে দ্রুত বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।’’
বৃহস্পতিবারই দিনের গোড়ায় আমেরিকা থেকে বিতর্কিত ক্ষেপণাস্ত্র থাড-এর চারটি অতিরিক্ত লঞ্চার এসে পৌঁছেছে সোলের তিন শ' কিলোমিটার দক্ষিণে সিওংজু-র ঘাঁটিতে। এই নিয়ে এলাকায় বিক্ষোভও হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সামরিক সক্রিয়তা অনেকেই মানতে না পেরে প্রতিবাদ জানান, পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েও পড়েন। তবে যে কোনো মূল্যে উত্তর কোরিয়াকে ঠেকাতে সোল বদ্ধপরিকর।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের সাথে আজ সাক্ষাৎ করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-র। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উদ্যোগে রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তকে ইস্টার্ন ইকনমিক ফোরাম উপলক্ষে সেখানে গেছেন দুই রাষ্ট্রনেতা। বৈঠকের পরে তারা বলেন, ‘‘আলোচনার চেয়ে এই মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার উপরে কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সময় এসেছে।’’
একই সুর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর গলাতেও। বেইজিংয়ে আজ তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার উপরে জাতিসঙ্ঘ যদি আরো নিষেধাজ্ঞা চাপায়, তাতে সমর্থন জানাবে চীন। তবে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন বরাবরই উত্তর কোরিয়ার মিত্র। তাই নিরাপত্তা পরিষদে উত্তর কোরিয়ার উপরে যদি সত্যিই নতুন নিষেধ আরোপের কথা ভাবা হয়, তা হলে স্থায়ী সদস্য চীন আদৌ তাতে সায় দেবে না ভেটো দেবে, তা স্পষ্ট নয়।
যদিও সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, ‘‘কোরীয় উপদ্বীপে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে চীন মনে করছে, জাতিসঙ্ঘের যথাযথ পদক্ষেপ করা উচিত। তবে আমরা মনে করি এই সঙ্কট সমাধানে নিষেধ বা চাপ তৈরি করা অর্ধেক রাস্তার মতো। রাস্তাটা শেষ হওয়া উচিত আলোচনা এবং আপস মীমাংসায়।’’
লাদেনের মতোই কিমকে হত্যা পরিকল্পনা নেভি সিলের
টার্গেট কিল কিম। সেই লক্ষ্যেই পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে ইউ এস নেভি সিল। আমেরিকার এই নৌ কমান্ডো বাহিনীর হাতে আগেই নিহত হয়েছেন ওসামা বিন লাদেন। ব্রিটিশ সংবাদপত্র টাইমস জানাচ্ছে এই খবর।
টার্গেট কিল কিম। সেই লক্ষ্যেই পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে ইউ এস নেভি সিল। আমেরিকার এই নৌ কমান্ডো বাহিনীর হাতে আগেই নিহত হয়েছেন ওসামা বিন লাদেন। ব্রিটিশ সংবাদপত্র টাইমস জানাচ্ছে এই খবর।
রাতের অন্ধকারে আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে গুলি করে মেরেছিল নেভি সিল। পরে সাগরে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয়েছিল। একই কায়দায় উত্তর কোরিয়ার সর্বময় শাসক কিম জং উনকে সরিয়ে দিতে তৎপর নেভি সিল। এর জন্য তারা দক্ষিণ কোরিয়ার কমান্ডোদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
পরমাণু বিস্ফোরণ ও লাগাতার যুদ্ধের হুমকি দেয়া কিম জং উন এই মুহূর্তে ওয়াশিংটনের আতঙ্কের কারণ। কিমের যুদ্ধংদেহী রূপে আতঙ্কিত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিলের টার্গেট- কিল কিম।
পিয়ংইয়ংয়ের হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে যখন উত্তর কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা যখন তুঙ্গে তখনই এই খবর প্রকাশ করেছে টাইমস সংবাদপত্র।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সং ইয়ং মু-কে উদ্ধৃত করে এই সংবাদপত্রের দাবি, কিম জং উনকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা চলছে। আগামী ডিসেম্বর মাস থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার কমান্ডোরা নেমে পড়বে কিমকে হত্যার কাজে।
উ.কেরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার শেষ পরিণতি কী?
উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। দেশ দুটি সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে কি না তাই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র। হুমকি পাল্টা-হুমকির এই পরিস্থিতির শেষ কোথায় তা কেউ জানে না। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এর সম্ভাব্য কিছু পরিণতি।
উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। দেশ দুটি সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে কি না তাই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র। হুমকি পাল্টা-হুমকির এই পরিস্থিতির শেষ কোথায় তা কেউ জানে না। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এর সম্ভাব্য কিছু পরিণতি।
প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ : সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টার প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের নতুন একটি তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। এর ফলে উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিপরীত প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণের চিন্তা বাদ দিয়ে উল্টো অভ্যুত্থান কিংবা বিদ্রোহ করে বসতে পারে। এই নীতির নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ারও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দেশজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছে সরকার। সামরিক তৎপরতামুক্ত এলাকার মাত্র ৪০ মাইল দূরেও রয়েছে এর অবস্থান। আগাম কোনো হামলা কিম জং উনকে নিরস্ত্রীকরণে ভালো ফল দেবে না বরং প্রতিশোধ নিতে তিনি বেসামরিক লোকদের ওপর হামলা চালাতে পারেন।
সীমিত শক্তি প্রয়োগ : উত্তর কোরিয়াকে শাস্তিমূলক বার্তা পাঠানোর জন্য একটি জোরালো অবরোধ আরোপ করা যেতে পারে, যার মধ্যে থাকতে পারে শক্তি প্রয়োগও। তবে অবশ্যই সেটি হতে হবে প্রতিরক্ষামূলক আগাম হামলার চেয়ে কম মাত্রার। এর মধ্যে থাকতে পারে পরবর্তী আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র বা পারমাণবিক পরীক্ষা ক্ষেত্রে বোমা হামলা। তবে এ ক্ষেত্রে বড় একটি ঝুঁকি হচ্ছে উত্তর কোরিয়া হয়তো সীমিত শক্তি প্রয়োগ ও সর্বাত্মক যুদ্ধের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে তা নিবৃত করা কঠিন এবং তারা সব বিপজ্জনক অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে।
উত্তর কোরিয়াকে নেতৃত্বশূন্য করা : উত্তর কোরিয়াকে নেতৃত্বশূন্য করা যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সমর পরিকল্পনার একটি অংশ। শোনা যাচ্ছে, শুধু এ কাজের জন্য দক্ষিণের একটি বিশেষ বাহিনীও রয়েছে। তবে এটি একটি ভুল পরিকল্পনা হতে পারে। বিশ্বে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জোরালো নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকা লোকদের অন্যতম কিম জং উন। আবার তাকে হত্যা করা হলে তার চেয়েও উগ্র কেউ ক্ষমতায় বসবে না এমন নিশ্চয়তা নেই। সেটি হলে যুদ্ধ আরো ত্বরান্বিত হবে।
অর্থনৈতিক চাপ জোরদার : ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন দেশে পরিণত হয়েছে উত্তর কোরিয়া। চলতি সপ্তাহেও দেশটির ওপর নতুন কিছু অবরোধ আরোপ করেছে জাতিসঙ্ঘ। এগুলো আরো জোরদার করতে প্রয়োজন চীনের অংশগ্রহণ; কিন্তু তাতে দেশটির সরকার পতন হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা বেইজিংয়ের। বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করার ‘অপরাধে’ চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর অবরোধ আরোপের আহ্বান জানাচ্ছেন মার্কিন ভাষ্যকাররা; কিন্তু তাতে পাল্টা-ব্যবস্থা নিতে পারে চীন। সেটি হলে সঙ্কটে পড়বে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক। অধিকন্তু এটি আরো স্পষ্ট যে, এতে চোরাচালানের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকা কিম সরকারের মনোভাব পাল্টে যেতে পারে।
আনুষ্ঠানিক আলোচনায় ফিরে আসা : বারাক ওবামা প্রশাসনের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া ছয় জাতি আলোচনায় ফিরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই উত্তর কোরিয়ার। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, পিয়ংইয়ং তাদের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করলে এবং আলোচনার মাধ্যমে পারমাণবিক কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে রাজি হলেও তারা কেবল আলোচনায় বসবে। উত্তর কোরিয়া রাজি নয় এই শর্তে। উত্তর কোরিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেয়া হলেও তা বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে কর্মসূচিতে প্রভাব ফেলবে। আরো অনেক দেশ তখন উত্তর কোরিয়ার পথ অবলম্বন করতে পারে।
উভয়পক্ষের সংযম : চীন ও রাশিয়া একটি প্রস্তাব দিয়েছে যাতে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা সামরিক মহড়া বন্ধ রাখলে উত্তর কোরিয়াও বন্ধ রাখবে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা। এতে অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়ার আত্মরক্ষামূলক সামরিক কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে কতটা আন্তরিক তা স্পষ্ট নয়।
নিঃশর্ত আলোচনা : উত্তর কোরিয়াবিষয়ক মার্কিন বিশেষজ্ঞ সেগফ্রেইড দুই পক্ষকে দ্রুত নিঃশর্ত আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি পরিদর্শন করে আসা এই বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন তা না হলে ছোট কোনো উসকানিতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
উ.কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সঙ্কট কতটা উদ্বেগের?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার হুমকি এমনভাবে মোকাবেলা করা হবে যা বিশ্ব এর আগে কখনো দেখেনি।
আর উত্তর কোরিয়ার হুমকি, তারা প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন দ্বীপ গুয়াম দ্বীপে হামলা চালাবে, যেখানে প্রায় এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষ বসবাস করে।
এ সবকিছুই ঘটছে যখন উত্তর কোরিয়া এমন একপ্রকার পারমাণবিক বোমা তৈরিতে সফল হয়েছে, যে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রে সংযোজন করা যাবে।
ফলে পুরো বিষয়টি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র আর তার মিত্রদের। একটি পুরাদস্তুর যুদ্ধ বেধে যা্ওয়া সম্ভাবনা কতটা? কতটা বিপদ অপেক্ষা করছে সামনে?
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ নিয়ে এখনি ততটা আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। তারা কিছু যুক্তিও তুলে ধরেছেন-
১. কোনো পক্ষই যুদ্ধ চাইছে না। কারণ কোরিয়া উপদ্বীপে একটি যুদ্ধ কারো জন্যই সুবিধা আনবে না।
উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতাসীনদের প্রধান লক্ষই হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকা। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি যুদ্ধ বেধে গেলে ক্ষমতার আসন নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে।
বিবিসির যুদ্ধ বিষয়ক সংবাদদাতা জোনাথন মার্কুস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আর উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হলে তা আরো বড় আকারে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে তা উত্তর কোরিয়ার জন্য হবে আত্মঘাতী। আবার ঠিক এই কারণে তড়িঘড়ি পারমানবিক অস্ত্রের মালিক হতে চাইছে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জঙ-উন। কারণ আর যাই হোক, তিনি লিবিয়ার গাদ্দাফি বা ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের ভাগ্য বরণ করতে চান না।
আবার যুক্তরাষ্ট্রও সহজে উত্তর কোরিয়ায় হামলা চালাবে না। কারণ তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া বা জাপানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যুদ্ধে অনেক প্রাণহানি ঘটবে, বিশেষ করে সাধারণ আমেরিকান আর সৈনিকদের। সর্বোপরি, ওয়াশিংটন এমন কোন ঝুঁকিতে যেতে চায়না, যার ফলে আমেরিকান ভূখণ্ডে কোন পারমানবিক হামলা হতে পারে।
২. শুধু কি কথার লড়াই?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে যেভাবে হুমকি দিয়েছেন, সেটা একজন প্রেসিডেন্টের জন্য ব্যতিক্রম। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র পুরোদমে যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে।
মার্কিন একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, উত্তেজক কথাবার্তা বাড়ছে মানে এই নয় যে, আমাদের অবস্থানও বদলাচ্ছে।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার, দুই দফা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর, জাতিসংঘের মাধ্যমে অবরোধ আরোপের সেই পুরনো পথেই পথেই হেঁটেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এখনো কূটনীতিকরা আশা করছেন, রাশিয়া আর চীনের সহায়তায় উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনা যাবে।
যদিও কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, এরকম উত্তেজক পরিস্থিতিতে কোন ভুল বোঝাবুঝি থেকেও একটি যুদ্ধ বেধে যেতে পারে।
৩. আগেও এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিজে ক্রাউলে যেমনটা বলেছেন, ১৯৯৪ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্র একবার সশস্ত্র যুদ্ধের কাছাকাছি চলে এসেছিল। তখন পারমানবিক কমপ্লেক্সে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষককে প্রবেশে বাধা দিয়েছিল দেশটি। তবে কূটনীতি দিয়েই তা সমাধান করা হয়েছে।
এরপর অনেক বার যুক্তরাষ্ট্র, জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়ায় হামলার হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। কিন্তু সেগুলো কখনো বাস্তব হয়নি।
আর এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে পাল্টা হামলার হুমকি দিচ্ছেন, তাও একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের আচরণের পক্ষে যুক্তিসঙ্গত নয়। এটাই যা একটু আশংকার যে, তিনি হঠাৎ করে কোন কাণ্ড ঘটিয়ে বসবেন কিনা। তবে তার এ ধরণের কোন কাজে নিশ্চয়ই তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বাধা দেবেন।
আর তাই ট্রাম্পের এরকম ব্যতিক্রমী আচরণের কারণে করো উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই বলেই মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
আর তাই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়াও আগাম একটি যুদ্ধের আশঙ্কায় খুব একটা উদ্বিগ্ন নয়।
একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলছেন, এখনো পরিস্থিতি সঙ্কট সময়ে পড়েনি। আশা করা হচ্ছে, শান্তিপূর্ণভাবেই বিষয়টির সমাধান হবে। এটাই হচ্ছে আশাবাদের বিষয়।
No comments:
Post a Comment