Tuesday, May 10, 2016
মায়ের ধারণা : গান না গাওয়ায় তনুকে হত্যা
কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি অনুষ্ঠানে গান না গাওয়ার অপরাধে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন পরিবারের সদস্যরা। তনুর মা আনোয়ারা বেগম দাবি করছেন, গান না গাওয়ায় তনুকে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডের পর বাসা থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অ্যালবাম নিয়ে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সিআইডি কার্যালয়ে ঢোকার আগে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তনুর মা আনোয়ারা বেগম এ কথা বলেন। এদিকে তনুর বাবা-মা, ভাই ও সহপাঠীসহ ৯ জনকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি’র উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত সহায়ক দল। এক প্রশ্নের জবাবে তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহি জাহিদের বাসায় আমার মেয়ে টিউশনি করত। ওই সুবাদে তাদের সঙ্গে তনুর পরিচয় ছিল। এরপর থেকে সেনানিবাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও গান গায়। গত ১৭-১৮ মার্চ সেনানিবাসের একটি অনুষ্ঠানে তনুর গান গাওয়ার কথা ছিল। তনু শ্রীমঙ্গল অন্য একটি অনুষ্ঠানে যাবে তাই গান গাইতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। পরে গান না গেয়ে তনু ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্যদের সঙ্গে শ্রীমঙ্গলের চা বাগান ও লাউয়াছড়া উদ্যানে যান। এত দিন পর কেন এ কথা বলছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তনুর মা আনোয়ারা বেগম আরও বলেন, মেয়েকে হারিয়ে আমরা পাগলপ্রায়। মেয়েটির সঙ্গে আমার বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক ছিল। বাসার যে কক্ষে যাই, সেখানেই তার স্মৃতি। তাই সব কথা সব সময় মনে আসে না। এখন বিচারও পাচ্ছি না, সান্ত¦নাও পাচ্ছি না। তাই মেয়ে হত্যার বিচারের জন্য আল্লাহর দিকে তাকিয়ে আছি। তনুর বাবা-মা, ভাই ও সহপাঠীসহ ৯ জনকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি’র উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত সহায়ক দল। আজ মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়ে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল। এর আগে সকালের দিকে সিআইডি-ঢাকার বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দের নেতৃত্বে তনু হত্যা মামলার তদন্ত সহায়ক দলটি কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে আসেন। জানা যায়, আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিআইডি-ঢাকার বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দের নেতৃত্বে পরিদর্শক গোলাম মাওলাসহ উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত সহায়ক দলটি ঢাকা থেকে কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে পৌঁছেন। বিকালের দিকে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, ছোট ভাই নাজমুল হোসেন, চাচাতো বেন লাইজু জাহান, সহপাঠি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ২য় বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান, শামীম ও তনুর সাথে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনকারী স্থানীয় শিল্পী সোনিয়া সাহা ওরফে শান্তা, শিল্পী সারোয়ার আহমেদ রাসেল, নুরুল ইসলাম খোকনকে সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। রাত সোয়া ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা úর্যন্ত সিআইডি’র জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল। তবে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে সিআইডি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। গত ৭ মে দিনভর সিআইডি কুমিল্লা কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করেছেন তনুর বাবা ইয়ার হোসেন ও মা আনোয়ারা বেগম। তারা মেয়ে হত্যা মামলার অগ্রগতি জানতে এসেছিলেন। তারা অফিসে এসে কোনো আশার বাণী নিয়ে বাসায় ফিরতে পারেননি। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, মেয়েকে হারিয়েছি। মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারলে মনে শান্তি পেতাম। সিআইডি অফিসে গিয়েছি মামলার খবর নিতে। সেখানে জানানো হয়েছে, তারা কাজ করছেন। আরো সময় লাগবে। আমি আল্লাহর নিকট বিচার দিয়ে রেখেছি, আল্লাহ বিচার করবেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার জয়েন্ট সেক্রেটারি মাইমুনা আক্তার রুবী বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি করা হচ্ছে যেনো তনু হত্যা অন্য একটি ঘটনার নিচে চাপা পড়ে যায়। তনু হত্যার বিচারে মানুষ আন্দোলন করেছে, তনু হত্যার বিচার না হলে বাংলাদেশের মানুষের নৈতিক পরাজয় হবে। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি আলী আকবর মাসুম বলেন, প্রথম থেকেই তনু হত্যা মামলা নিয়ে দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো আন্তরিক নন। তা না হলে দুইবার ময়নাতদন্ত করতে হয় না। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এতো দিন সময় লাগতো না। সাগর-রুনির মামলার মতো এটিও অনিশ্চয়তার পথে হাঁটছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, ডিএনএ রিপোর্ট পেলে একসাথে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয়া হবে। তবে কবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেয়া হবে সে বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। উল্লেখ্য, ২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা সেনানিবাসের বাসার নিকট থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করেন তার বাবা ইয়ার হোসেন। পরদিন ২১ মার্চ দুপুরে কুমিল্ল¬া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ২১ মার্চ তনুর বাবা কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতদের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলা পুলিশ, ডিবি হয়ে সিআইডির হাতে যায়। প্রথম ময়নাতদন্তে তনুকে ধর্ষণের আলামত এবং মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য ৩০ মার্চ তনুর লাশ কবর থেকে তোলা হয়। তনুর মৃত্যুর ৫১ দিনেও হত্যাকারী শনাক্ত হয়নি। এদিকে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ৪০ দিনেও পাওয়া যায়নি।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)


No comments:
Post a Comment