‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার বাদ মাগরিব রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
সোমবার সকালে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন নূরজাহান বেগম। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তিনি ফ্লোরা নাসরিন খান ও রিনা ইয়াসমিন মিতি নামের দুই মেয়ে ছাড়াও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
গত ৫ মে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এ গুণী ব্যক্তিত্বকে। অবস্থার অবনতি হলে ৭ মে শনিবার নূরজাহান বেগমকে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে) রাখা হয়। পরবর্তীতে তিনি ‘লাইফ সাপোর্টে’ ছিলেন ।
তিনি বাংলার প্রথম নারীদের সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকার সম্পাদক। সাহিত্য ক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে আনার লক্ষ্যে তিনি ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই কলকাতা থেকে পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৫০ সাল থেকে বেগম পত্রিকা ঢাকায় প্রকাশিত হতো।
এর আগে বিকেলে গুলশান ১-এর জামে মসজিদে মরহুমার দ্বিতীয় জানাজা এবং পুরান ঢাকার শরত্ গুপ্ত রোডে ‘খাতুন কুটির’র আঙিনায় প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মরহুমার স্বজন, শুভানুধ্যায়ী ও প্রতিবেশীরা অংশ নেন। এর আগে, রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নূরজাহান বেগমের মরদেহ ‘খাতুন কুটিরে’ নিয়ে আসা হয়।
এদিকে উপমহাদেশের নারী সাংবাদিকতার পথিকৃত্ নূরজাহান বেগমের মরদেহে সর্বস্তরের জনতার শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়। সোমবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তার মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়া হয় এবং ৫টা পর্যন্ত মরহুমার কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এই শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এ সময় কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জমান নূর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলা একাডেমির মাহপরিচালক শামসুজ্জমান খান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি লেখক-প্রকাশক মফিদুল হক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ মরহুমার কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
নারী সাংবাদিক সাহিত্যিক নূরজাহান বেগম ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুর জেলার চালিতাতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সওগাত পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিনের কন্যা। ১৯৫২ সালে কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
নূরজাহান বেগম ১৯৪২ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে তিনি আইএ এবং ১৯৪৬ সালে একই কলেজ থেকে তিনি বিএ পাস করেন।
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নারীবিষয়ক সাপ্তাহিক পত্রিকা 'বেগম'র সম্পাদনায় সূচনালগ্ন থেকে জড়িত ছিলেন তিনি। প্রায় ছয় দশক ধরে বেগম পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন নূরজাহান বেগম। এতদ্দেশে নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য নূরজাহান বেগম বহু পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৯৭ সালে তিনি রোকেয়া পদক পান।
এছাড়া, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, লেখিকা সংঘ, কাজী জেবুন্নেসা-মাহবুবউল্লাহ ট্রাস্ট, রোটারি ক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে তিনি পদক লাভ করেন।
সাহিত্যক্ষেত্রে মেয়েদের এগিয়ে আনার লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই কলকাতা থেকে বেগম পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৯৫০ সালে এটি ঢাকায় চলে আসে। ‘বেগম’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল। তবে চার মাস পর থেকেই পত্রিকাটির সম্পাদনা শুরু করেন নূরজাহান বেগম।
সাহিত্যিক ও সাংবাদিক নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, স্বাস’্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স’ানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেন, ডেপুটি স্পীকার এডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, চীপ হুইফ আ স ম ফিরোজ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন।
No comments:
Post a Comment