বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে মোট প্রবাসী-আয় এসেছে ১ হাজার ২২৫ কোটি ডলার। গত বছর একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ২৫৫ কোটি ডলার।
১১৯ কোটি ডলার এসেছে, যা আগের মাসের তুলনায় ৯ কোটি ডলার কম।
গত এপ্রিল মাসে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রবাসী-আয় বেসরকারি খাতের ভোগ বাড়াতে যথেষ্ট মাত্রায় সহায়তা করে। জিডিপি গণনায় একটি বড় অংশই আসে বেসরকারি খাতের ভোগ থেকে। তাই প্রবাসী-আয় নেতিবাচক হলে বছর শেষে জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
মির্জ্জা আজিজ আরও বলেন, ‘সাধারণত দারিদ্র্যসীমার একটু ওপরের মানুষই প্রবাসী-আয় বেশি পান। এখন যদি প্রবাসী-প্রবাহ কমে যায়, তবে ওই শ্রেণির মানুষের আবার দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবাসী-আয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১০ কোটি ডলার কম এসেছে। এরপর গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবাসী-আয় কখনো নেতিবাচক, কখনো ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে ছিল। মূলত ওই সময়ে দুটি ঈদ উৎসব ছিল, তাই রেমিট্যান্স কিছুটা বেশি এসেছে। কিন্তু গত জানুয়ারি মাস থেকে সেই ধারাবাহিকতা আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। গত চার মাসের (জানুয়ারি-এপ্রিল) প্রতি মাসেই আগের বছরের তুলনায় কম অর্থ এসেছে।
গত এপ্রিলে সরকারি খাতের সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী-আয় এসেছে ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। বেসরকারি খাতের ৩৯টি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮০ কোটি ৭১ লাখ ডলার। বিদেশি খাতের ৯টি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে—৩০ কোটি ৪২ লাখ ডলার।
প্রবাসীরা ঠকছেন: ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশে টাকার মান দীর্ঘদিন ধরেই শক্ত অবস্থানে আছে। টাকার মান বেড়েছে। এর মানে হলো, প্রবাসীরা ডলার পাঠিয়ে আগের চেয়ে কম টাকা পান। দুই বছর আগে প্রবাসীরা এক ডলার পাঠালে ৮০ টাকা পেতেন। এখন পান ৭৮ টাকা।
সেই হিসাবে, এ বছরের প্রথম ১০ মাসে ১ হাজার ২২৫ কোটি ডলার পাঠিয়ে প্রবাসীরা কমবেশি ৯৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা পেয়েছেন। দুই বছর আগে একই পরিমাণ ডলার পাঠিয়ে ৯৮ হাজার কোটি টাকা পেতেন তাঁরা। এর মানে হলো, শুধু মুদ্রা বিনিময়ের হারের কারণেই দুই বছরের ব্যবধানে আড়াই হাজার কোটি টাকা কম পেয়েছেন প্রবাসীরা।
সম্প্রতি আবার নতুন সমস্যার উদ্ভব হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে ডলারের দাম বেড়েছে। ওই সব দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্থানীয় মুদ্রাকে ডলারে রূপান্তর করে দেশে পাঠান। তাঁদের এখন আগের চেয়ে বেশি স্থানীয় মুদ্রা খরচ করে ডলার কিনতে হচ্ছে। তাই তাঁদের আগের চেয়ে কম ডলার পাঠাতে হচ্ছে।
অন্য দিকে নতুন কোন দেশে সরকার শ্রমিক পাঠাতে পারছে না। যেহেতু বাংলাদেশে বেকারত্ব বেশি সেই ক্ষেত্রে শ্রম বাজার বৃদ্ধিতে বৈদেশিক শ্রম বিনিয়োগ করে দেশীও আয় অর্জন করতে পারে ।আমাদের শ্রমিকদের বেশিরভাগ আত্মীয়-স্বজন, রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালের মাধ্যমে বিদেশে যান। তবে সরকারিভাবে সরাসরি জি টু জি (গর্ভনমেন্ট টু গর্ভনমেন্ট) পর্যায় ও সরকারের রিক্রুটিং এজেন্সি বোয়েসেলের মাধ্যমেও সীমিত আকারে বিদেশে লোক প্রেরণ হয়। সরকারি লাইসেন্সভুক্ত হাজার খানেক রিক্রুটিং এজেন্সি, যারা বিদেশে শ্রমিক প্রেরণে কাজ করেন তাদের বেশিরভাগের অবস্থান ঢাকাকেন্দ্রিক। মাঠ পর্যায় থেকে বিদেশগামীদের সংগ্রহ করতে এই সব এজেন্সিকে প্রতিনিয়ত দালাল, উপ-দালাল ও উপ-দালালের দালাল তৈরি করে ব্যবসা করতে হয়। এসব দালাল চক্র প্রায়ই মানুষকে সঠিক তথ্য না দিয়ে বিভ্রান্ত করে। বিদেশ যাওয়ার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হাতের কাছে না থাকায় মাঠ পর্যায়ে বিদেশগামীদের বিভিন্ন সময়ে দালালের দ্বারস্থ হতে হয়।
সরকার টু সরকারের মধ্যকার চুক্তির মধ্য দিয়ে যদি ব্রাজিলে শ্রমিক পাঠানো যায় তাহলে ৬০/৮০ হাজার টাকায় এক জন শ্রমিক ব্রাজিল আসতে পারবেন । বর্তমানে ব্রাজিলে প্রবাসীদের যথেষ্ট চাকুরি ও ব্যবসার সুযোগ রয়েছে । প্রবাসী-আয় বা রেমিট্যান্স বাড়াতে বাংলাদেশের সরকারের এই মুহূর্তে ব্রাজিলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও ভাল করা দরকার ।
No comments:
Post a Comment