Social Icons

Thursday, July 13, 2017

সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্রে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা


অনেকের কাছে স্বপ্নের দেশ আমেরিকা। আবার কারো জন্য আমেরিকার প্রবাস জীবন তিক্ত অভিজ্ঞতাময়। আমেরিকার জীবন যাপনের নানা জটিলতার মধ্য দিয়েই বেড়ে চলেছে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি অভিবাসীর বাস। সাম্প্রতিক হিসাবে এ সংখ্যা হয়তোবা আরো বেড়ে যাবে। বিশ্বের অন্য দেশের অভিবাসীদের মতো বাংলাদেশ থেকেও মানুষ মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমিয়েছে উন্নত জীবনের আশায়। তবে বলার অপেক্ষা রাখে না, এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের অভিবাসীদের চেয়ে বাংলাদেশিদের জীবনমান অনেক নীচে। এক্ষেত্রে এশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বাস করা মানুষকে ‘মডেল মাইনরিটি’ হিসেবে ধরা হলেও তাদের মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থা সত্যিকার অর্থেই খারাপ।
মুক্তিযুদ্ধের শেষে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ পাড়ি দেওয়া শুরু করে আমেরিকায়। প্রথম দিকে বেশ কিছু মানুষ রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করে। পরবর্তীতে শিক্ষাগত কারণে কিছু মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পায়। তাছাড়া ডাইভারসিটি ভিসা তথা ডিভি লটারির সূত্র ধরেও অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পায়। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। মূলত বাংলাদেশিরা এশিয়ান আমেরিকান ইমিগ্রান্টদের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র। ভারতীয়, চীনা কিংবা পাকিস্তানিদের তুলনায় বাংলাদেশিদের আয় প্রায় অর্ধেক।
বাস্তবতা হলো যুক্তরাষ্ট্রের জীবন যাত্রায় বাংলাদেশিদের অবস্থান দারিদ্র্য সীমার নিচে। শ্রমবাজার হিসেবে তারা বেশির ভাগই কাজ করে লো সেক্টরে। বাংলাদেশিরা সাধারণ চাকরি থেকে শুরু করে নির্মাণ খাত, পরিবহন ও যাতায়াত কিংবা নিরাপত্তা যে ক্ষেত্রেই কাজ করছে না কেন, খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। তাছাড়া যারা সরকারী চাকরি করে তাদের বেতনের অবস্থাও খুব ভাল নয়। আমেরিকার গিফটশপে বাংলাদেশি দোকানদার যেমন দেখা যায় তেমনি নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস কিংবা যেকোনো বড় শহরে গেলে ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবেও দেখা যায় অনেক বাংলাদেশিকে। লস অ্যাঞ্জেলেসের অনেক গ্যাস স্টেশন কিংবা মদের ভাটিতে সেলস ক্লার্ক হিসেবেও দেখা যায় বাংলাদেশিদের। তবে একথাও সত্য বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল কিংবা চিকিত্সাবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে সম্মানজনক কাজে করছেন।
ডিভি লটারির মাধ্যমে যারা যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন সেখানে গিয়েও তাদের অবস্থা খুব একটা উন্নত হয়েছে, তা বলা যাবে না। তবে এর বাইরে যারা শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন, তারা পাস করে বের হওয়ার পর সহজেই বেশ ভালো চাকরি পাচ্ছেন। উচ্চপদের চাকরি না পেলেও, তাদের বেশির ভাগই মধ্যম মানের বেশ ভালো পদে কাজ করছেন। তাই আমেরিকায় অপেক্ষাকৃত নিম্ন জীবনমানের কর্মজীবী শ্রেণীর পাশাপাশি মধ্যবিত্তদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আলাদা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ হিসেবে আমেরিকায় বাস করা বাংলাদেশিরা তাদের সাংস্কৃতিক সত্ত্বাকে অনেক কষ্টে হলেও স্বতন্ত্র রাখতে পেরেছে। আমেরিকায় যেসকল বাংলাদেশিরা আছে তাদের বেশির ভাগই মুসলমান, তবে অল্প কিছু হিন্দুও রয়েছে।
বাংলাদেশের ঐতিহ্য ধরে রাখায় সেখানে যাওয়ার পরেও তাদের পরিবার থেকে গেছে পিতৃতান্ত্রিক। তবে সেখানে বাংলাদেশিদের বসতিগুলো গড়ে উঠেছে অনেকটা ছিটমহলের আদলে। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হেইটস কিংবা এলমহার্স্টের কথা। ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে ‘লিটল বাংলাদেশ’ কিংবা হ্যামট্র্যামকে গড়ে ওঠা ‘বাংলা টাউন’ তো রয়েছেই। এর বাইরে মিশিগানের প্রচুর ঝাল আর সুগন্ধে মন মাতানো খাবারের কথা তো বলাই যায়। সেখানকার চিত্তাকর্ষক দেশী পণ্যের দোকান আর চিরচেনা সংগীতের সুরমূর্ছনার কথা না বললেই নয়।
বাংলাদেশ থেকে যারা আমেরিকায় গেছে, তারা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অঙ্গসংগঠন যেমন আমেরিকায় রয়েছে, তেমনি এর বাইরে বিভিন্ন জেলা, বিভাগ ও আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকেও সেখানে গিয়ে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়। দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা তথা ফোবানা এ ধরনের বিভিন্ন সংগঠন ও কমিউনিটি অর্গানাইজেশনের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেছে। তারা নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি বহু সংস্কৃতির দেশ আমেরিকায় বাংলাদেশি সংস্কৃতির গুরুত্ব ছড়িয়ে দিচ্ছে। তারা নিজেদের কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে প্রায় প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
এসব অনুষ্ঠানে অনেক নন্দিত বাংলাদেশি অভিনয় শিল্পী, গায়ক, সঙ্গীতজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেকে অংশ নেন। এর বাইরে আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে সেখানে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়। অন্যদিকে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ আর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস বেশ বর্ণিল আয়োজনে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো বছরজুড়ে যে অনুষ্ঠান আয়োজন করে, সেগুলো অন্য রকম মাত্রা লাভ করে এ সময়টায় এসে। এর বাইরে আমেরিকা প্রবাসী মুসলমান সম্প্রদায় দুই ঈদে একত্রিত হয়, হিন্দুরা পূজাও আয়োজন করে।
অন্যদিকে, আমেরিকার ছোট ছোট শহরগুলোতে বাংলাদেশি জনসংখ্যা বাড়ছে, তা নিঃসন্দেহে আশাবাদী হওয়ার মতো। এর বাইরে নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, আটলান্টা কিংবা বোস্টনেও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে বাংলাদেশিদের সংখ্যা। ক্রমান্বয়ে আমেরিকার রাজনীতিতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের সম্ভাবনা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সাউথ এশিয়ান হিসেবে একেকটি জাতির যে পরিচয়, সেখানে খাবার, পোশাক-আশাক আর সংস্কৃতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদিক থেকে চিন্তা করলে অভিবাসী বাংলাদেশিরা খুব একটা পিছিয়ে নেই। ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন বাংলাদেশিদের সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর এসব আগামী দিনগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে তারই জানান দিচ্ছে।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates