ইউরোপ বাংলাদেশিদের জন্য এক স্বপ্নের ঠিকানা। আর সেই স্বপ্নের দেশের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে শিল্প সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যবাহী দেশ ডেনমার্ক। প্রায় ৬০ লাখ জনসংখ্যার এই দেশে বাংলাদেশি রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। তবে অধিকাংশেরই শুরুটা ছিলো অনেক কষ্ট আর সংগ্রামের। সেই কষ্টের পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ন তারা এখন বেশ ভালোই আছেন ডেনমার্কে। যারা আজ থেকে ২০ বছর আগে গিয়েছে দেশটিতে, তাদের শুরুটা আর এখন যারা যাচ্ছেন তাদের শুরুর গল্প অনেক ভিন্ন।
ভিনদেশিদের জন্য গ্রিন কার্ড কিংবা স্থায়ী বসবাসের সুযোগ আগের তুলনায় কঠিন করেছে ডেনমার্ক সরকার। বাংলাদেশের পত্রিকায় প্রায়ই বিজ্ঞাপন আসে ‘ডেনমার্কে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ’। বিজ্ঞাপনের ভাষা আর বাস্তবতায় পার্থক্য অনেক। স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যারা যাচ্ছেন তারা পড়ালেখার পাশাপাশি কাজের সুযোগ পাবেন, তবে তা মাসে ৮০ ঘন্টা।
ক্লাসে উপস্থিতি শতকরা ৯০ ভাগ আবশ্যক। আর তা না হলে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ম অনুযায়ী ঐ ছাত্রের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারে। তাতে করে দেশে ফেরা ছাড়া আর কোন দরজা খোলা থাকেনা বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। এরই মধ্যে যদি কেউ ইউরোপিয়ান জীবন সঙ্গী খুঁজে নিতে পারেন, তার ভবিষ্যত ভিন্ন।
ইউরোপিয়ান স্বামী বা স্ত্রীর সুবাদে ডেনমার্কে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে পারেন, তবে তাতেও সময় লাগবে ৫ থেকে ৮ বছর। তবে ইউরোপিয়ান স্বামী-স্ত্রী যোগাড় করাটাও সহজ নয়, তার জন্য গুনতে হবে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। আর ভরন-পোষন তো আছেই। ।
অন্যদিকে, অনেক বাংলাদেশি ডেনমার্কে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। সেই রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার সুযোগও যেন দিন দিন ক্ষীন হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশিদের জন্য। শতকরা একজনেরও কম বাংলাদেশি ডেনমার্কে রাজনৈতিক আশ্রয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। এর মাঝেও আশার আলো ছড়াচ্ছে বাংলাদেশি ডাক্তাররা।
ডাক্তারদের জন্য ডেনমার্কে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ এখনও উন্মুক্ত। আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশি ডাক্তাররা দুই বছরের ভিসা পান পরিবার নিয়ে ডেনমার্কে বসবাসের। এই সময়ের মধ্যে ভাষা শিক্ষা কোর্স শেষ করতে হয় ডাক্তারদের, আর পরিবারের অন্য সদস্যরা পান কাজের সুযোগ। ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি ডাক্তারদের দিতে হয় মেডিকেলের আরেকটি পরীক্ষা। এই দুটি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হলেই কাজের অনুমতি পাবেন ডাক্তাররা।
তারপরও ডেনমার্কে যাচ্ছেন নতুন নতুন বাংলাদেশি। তাদের অধিকাংশই ইউরোপের অন্য কোন দেশের মাইগ্রেন্ট। ইউরোপের ভিন্নদেশ দেশ থেকে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে ডেনমার্কে যাচ্ছেন তারা। ডেনমার্কে গিয়ে তারা কাজের সুযোগ পান এবং আবেদন করতে পারেন স্থায়ী বসবাসের। আগের চেয়ে কঠিন হলেও এভাবেই ডেনমার্কে স্থায়ী হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। আর এতে সময় লাগছে ৫ থেকে ৮ বছর।
No comments:
Post a Comment