Saturday, December 19, 2015
প্রিঙ্গলস চিপস
জোলির জামাই পিটের বয়স এখন ৫১। হলিউডের এই সুপার-ডুপার নায়ক ২৬ বছর আগে যখন লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন একটা ব্রেক পাওয়ার জন্য। তখন তাঁকে প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল (পি অ্যান্ড জি) প্রিঙ্গলসের বিজ্ঞাপনে ডাকল। টিভির ওই বিজ্ঞাপনে দেখা গেল, প্রিঙ্গলস চিবানো মেয়েদের আকৃষ্ট করার জন্য খালি গায়ে ঘুরছেন ব্রাড পিট । কিন্তু মেয়েরা প্রিঙ্গলসে এতই মজে ছিল যে হ্যান্ডসাম ছেলেটিকে দেখার জন্য চোখও তুলতে পারল না। প্রিঙ্গলসের তখন বিজ্ঞাপনভাষ্য ছিল, একবার ধরলে আর থামতে পারবে না। পরে আবার বলা হলো, এক কামড়েই প্রেমে পড়ে যাবে। পি অ্যান্ড জি প্রথম চিপসটি বাজারে আনে ১৯৬৭ সালে। কিন্তু এর ইতিহাস যায় আরো ৯০ বছর পেছনে। জর্জ স্পেক ছিলেন আমেরিকার এক রেস্তোরাঁর রন্ধনশিল্পী। এক গ্রাহক একদিন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই অর্ডার করলেন। স্পেক অর্ডারমতো সার্ভ করলে গ্রাহক একটা-দুইটা খেয়ে তা ফিরিয়ে দিয়ে নতুন করে বানিয়ে আনতে বললেন। কারণ সেগুলো বেশি মোটা হয়ে গিয়েছিল। স্পেকের এতে রাগ হলো। হওয়ারই কথা! প্রায় এক যুগের রান্নার ইতিহাসে কখনো এভাবে প্রত্যাখ্যাত হননি তিনি। শিক্ষা দিতেই স্পেক এবার আলু বেশি পাতলা করে কাটলেন, যেন গ্রাহক চামচ দিয়ে তুলতে না পারেন। কিন্তু ঘটল উল্টো ঘটনা। গ্রাহক হাত দিয়েই অতি আহ্লাদের সঙ্গে সেগুলো সাবাড় করলেন। ক্রমে খাবারটি এত জনপ্রিয় হলো যে পটেটো চিপস নামে মেন্যুতে ঢুকে পড়ল। ১৯৩০-এর দিকে শুধু আমেরিকায় চিপসের প্রচলন ছিল। পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চিপসের কপাল খুলে দিল। আলুর সংকট পড়লে দেশে দেশে লোকজন ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের বদলে চিপস খাওয়া শুরু করল। চকোলেটের মতোই চিপসের প্যাকেট দোকানের শেলফে জায়গা পেল। পরের ঘটনা আরো মজার। আমেরিকান সেনাবাহিনীতে ছিলেন আলেকজান্ডার লিওপা। সেটি ১৯৫০ সাল। তিনি এক ধরনের চিপস তৈরি করলেন, যেটি পাতলা করে কাটা হতো না। তৈরি হতো আলুর দম থেকে। এটি তিনি করেছিলেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের সেনা ক্যাম্পের জন্য। এতে সময়ও বাঁচত, আর চিপস বড় বড় শহর থেকে পরিবহন করতে হতো না। ১৯৬৭ সালে তাঁর এ ফর্মুলা পি অ্যান্ড জি কিনে নেয়। প্যাটেন্ট পাওয়ার পর পি অ্যান্ড জি একটি আকর্ষণীয় নাম খুঁজতে থাকে। কোনো নামই মনের মতো হচ্ছিল না। একদিন নাকি প্রিঙ্গল ড্রাইভ নামের জায়গায় গিয়ে এক কর্মকর্তার শব্দটি মাথায় ঢুকে যায়। পটেটো শব্দের সঙ্গে প্রিঙ্গলের নাকি মামাতো ভাই গোছের সম্পর্ক আছে। তাই নামটি টিকে যায়। এবার আসি প্রিঙ্গলসের লোগোর কথায়। লোগোতে ব্যবহূত হয়েছে একজন পুরুষের চেহারা। মানুষটির নাম ছিল জুলিয়াস। তাকে দেখেই লুইস রাফায়েল ডিক্রন এটি ডিজাইন করেছিলেন। জুলিয়াসের ছিল বড় মোচ, যা লোগোতেও আছে। ২০০১ সাল পর্যন্ত লোগোটিতে লোকটির ভ্রুও ছিল। বো টাইয়ের গোড়ায় আছে নাম। ১৯৯৮ সালে ঠোঁট দুটিকে লোগো থেকে সরিয়ে ফেলা হয় এবং মাথাটি আকারে একটু বড় করা হয়। চিপস মেশিনের আবিষ্কারক জিন উলফ। তিনি একজন কল্পবিজ্ঞান লেখকও। প্রিঙ্গলসের প্যাকেটটিও অন্য সবার চেয়ে আলাদা। যেহেতু এটি খুব পাতলা আর নাজুক, তাই প্লাস্টিক বা কাগজের প্যাকেটে রাখা সম্ভব নয়। প্রিঙ্গলস প্যাকেটজাত হয় একটি কৌটায়। এর ডিজাইন করেন ফ্রেডরিক বয়ার। তিনি পি অ্যান্ড জির খাদ্য সংরক্ষণ বিভাগে কাজ করতেন। কৌটার ভেতর ভাগ অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে মোড়ানো থাকে, যেন বাতাসের আক্রমণে চিপসগুলো নেতিয়ে না পড়ে। বয়ার মারা যাওয়ার আগে সন্তানদের বলে গিয়েছিলেন, যেন তাঁর অস্থির কিছু অংশ একটি প্রিঙ্গলস কৌটায় ভরে কবরে দিয়ে দেওয়া হয়। সন্তানরা তাঁর অনুরোধ রেখেছে।
Labels:
জানা-অজানা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)


No comments:
Post a Comment