সুইসাইড (আত্মহত্যা)। উনি তো বলেন নাই, এটা অ্যাক্সিডেন্ট (দুর্ঘটনায় মৃত্যু)। অপশন তো ওপেন।' সাধারণত ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা মৃত্যুর ধরন ওই তিনটির মধ্যে যে কোনো একটিকে উপস্থাপন করে থাকেন।
মৃত্যুর কারণও কি আগের মতোই সুনির্দিষ্ট করা যাচ্ছে না_ বৃহস্পতিবার এ প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি। ডা. কে পি সাহা বলেন, ময়নাতদন্তে ২-৫ শতাংশ মৃত্যুর কারণ এ রকম সুনির্দিষ্ট করা যায় না। প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও যায়নি। দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও মৃত্যুর কারণ সুনির্দিষ্ট করা যাচ্ছে না_ এমনটাই আভাস মিলেছে তিন সদস্যের চিকিৎসক দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর ধরন ও কারণ স্পষ্ট করে প্রকৃতি লেখা হয় সামান্য ব্যাখ্যা দিয়ে। ধরন ও কারণ প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে লেখা না হওয়ায় প্রকৃতিও ব্যাখ্যা করা হয়নি।
এদিকে ডা. কে পি সাহার এই 'উনি তো' হচ্ছেন প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. শারমিন সুলতানা শাম্মী। যার বিরুদ্ধে আলামত গোপনের অভিযোগ করেছে সিআইডি। প্রথম ময়নাতদন্ত সম্পন্নের দু'দিন পর থেকে আর গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কোনো কথাই বলছেন না ডা. শাম্মী। তার পক্ষে সব কথা বলছেন বিভাগীয় প্রধান ডা. কে পি সাহা। সেই থেকে রহস্য দানা বাঁধছে। অপেক্ষাকৃত নবীন চিকিৎসককে দিয়ে ওই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা নিয়েও নানা গুঞ্জন রয়েছে। লাশ উত্তোলনের পর ৫০ দিন পেরিয়ে গেলেও দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন কেন দেওয়া হচ্ছে না_ এ নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। সিআইডির তিন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়া ডিএনএ প্রতিবেদন চাওয়াকে কালক্ষেপণ হিসেবেই দেখছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সিআইডি বলেছে, ওই প্রতিবেদন আসামি শনাক্তে কাজে লাগবে। ময়নাতদন্তকারী কর্তৃপক্ষ কেন চাইছে, তা তাদের বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে ডা. কে পি সাহা বলেন, 'অপরাধ তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় খুন হয়েছে, ধর্ষণ হয়েছে, তাদের ধরতে তো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন নেই। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তো আদালতে লাগবে।' তিনি আরও বলেন, 'তাহলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে এত কথা কেন।'
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরেনসিক বিভাগকে ডিএনএ প্রতিবেদন দেবে না বলে সিআইডি থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মো. ইব্রাহীম চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ওই ডিএনএ প্রতিবেদন আদালতের সম্পদ ও এখতিয়ার। ১৪ মে ডা. কে পি সাহা সিআইডিকে ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে এ চিঠি দেন। একই বিষয় জানতে চেয়ে ডা. কে পি সাহা সিআইডিকে এর আগে দু'বার তাগাদা দিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন।
প্রথম ময়নাতদন্তে ধর্ষণের কোনো আলামত পাননি চিকিৎসক। অথচ সিআইডি তনুর পরনে থাকা অন্তর্বাসের ডিএনএ পরীক্ষায় তিন পুরুষের শুক্রাণুর আলামত পেয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন সিআইডি কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান। এ কথা বলতে গিয়ে তিনি এও জানিয়েছিলেন, ধর্ষণের আলামত নিশ্চিত হতে আমরা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। আমি দেখা করে ও লিখিতভাবে ভেজাইনাল সোয়াবের সংরক্ষিত নমুনা পৃথকভাবে আমাদের পরীক্ষাগারে পাঠানোর জন্য আদালতকে অবহিত করে তাদের কাছে যাই। ময়নাতদন্তকারী কর্তৃপক্ষ পরীক্ষায় আলামত না পাওয়ায় নমুনা সংরক্ষণ করেননি বলে জানিয়ে দেন। ড. নাজমুল করিম খান অবশ্য এও জানিয়েছিলেন, ওই নমুনা ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণের আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বাধ্যবাধকতা নিয়ে চিকিৎসকরা অবশ্য দ্বিমত করেছেন।
২০ মার্চ রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে কুমিল্লা সেনানিবাসের পাওয়ার হাউস এলাকার কালা ট্যাঙ্কি সংলগ্ন রাস্তার কালভার্টের পশ্চিম পাশের ঝোপ থেকে সোহাগী জাহান তনুর (১৯) মরদেহ উদ্ধার করেন তার বাবা।
No comments:
Post a Comment