Social Icons

Thursday, May 19, 2016

এদের ধরিয়ে দিন

কলাবাগানের জোড়া খুন, লেখক অভিজিৎ রায়, ফয়সল আরেফিন দীপন, নীলাদ্রি চ্যাটার্জি নিলয়, জবি ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদসহ আট লেখক-প্রকাশক ও ব্লগার হত্যায় জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে শনাক্ত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। পুলিশ বলছে, শনাক্ত হওয়া ছয়জন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সক্রিয় সদস্য। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে তাদের ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য পাঠিয়ে পুলিশ তাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে। 'ডিএমপি নিউজ পোর্টালে'ও তাদের ছবিসহ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। যে ছয়জনের ছবি ও নাম প্রকাশ করা হয়েছে তারা হলেন_ এবিটির শীর্ষ পর্যায়ের সংগঠক শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১ ও সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২, সদস্য সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুস সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদ, শিহাব ওরফে সুমন ওরফে সাইফুল ও সাজ্জাদ ওরফে সজীব ওরফে সিয়াম ওরফে শামস। কোন হত্যার ঘটনায় কারা কীভাবে জড়িত ছিল, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছে পুলিশ। এই প্রথম উগ্রপন্থিদের তথ্যসহ ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হলো। এর আগে নববর্ষে টিএসসিতে শ্লীলতাহানি ও মতিঝিলে জামায়াত-শিবিরের ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।

পুলিশ বলছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুল ও মোহাম্মদপুরে এবিটির দুটি আস্তানায় ডিবি অভিযান চালায়। সাঁতারকুলে এবিটির সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও মোহাম্মদপুরে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল। অভিযানে কামাল ও সালাউদ্দিন নামে এবিটির দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য ও সেখান থেকে পাওয়া বিভিন্ন নথিপত্রের ভিত্তিতে ঢাকার আশকোনা ও দক্ষিণখানে দুটি আস্তানার খোঁজ মেলে। দক্ষিণখানের আস্তানাটি বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ল্যাবরেটরি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এসব অভিযানের তথ্য, মামলাগুলোর তদন্ত, এবিটি সদস্যদের গ্রেফতার করার পর পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংগঠনটির

নেতৃস্থানীয় ছয় ব্যক্তিকে শনাক্ত করা গেছে বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এবিটির এই গ্রুপটি পৃথকভাবে 'স্লিপার সেল' তৈরি করে আট লেখক-প্রকাশক ও ব্লগারকে হত্যা করে ও দুটি কিলিং মিশনে ব্যর্থ হয়। সব মিলিয়ে নয়টি ভিন্ন ভিন্ন 'অপারেশনে' অংশ নিয়েছিল তারা।

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের আগে সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া একটি ছবি গতকাল 'ডিএমপি নিউজ পোর্টালে' প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ঘটনার দিন রাত ৮টার পর অভিজিৎ ও তার স্ত্রী ডা. রাফিদা আহমেদ বন্যা হেঁটে যাচ্ছেন। তাদের অনুসরণ করছে এক যুবক। পুলিশ বলছে, তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ওই যুবকের নাম শরিফুল। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে শরিফুলসহ ছয়জন জড়িত ছিল। আর দীপন হত্যার ঘটনায় মূল কিলিং মিশনে অংশ নেয় পাঁচজন। কলাবাগানের জোড়া খুনেও অংশ নেয় পাঁচ এবিটি সদস্য।

পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সন্দেহভাজন এবিটি সদস্যদের ব্যাপারে তথ্য দেওয়ার জন্য ০১৭১৩৩৭৩১৯৪, ০১৭১৩৩৭৩১৯৮, ০১৭১৩৩৭৩২০৬ এবং ০২-৯৩৬২৬৪০ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। ফপফনংড়ঁঃয@ঢ়ড়ষরপব.মড়া.নফ.পড়স-এ ঠিকানায় ই-মেইলেও তথ্য পাঠানো যেতে পারে। তথ্যদাতার নাম ও পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে বলেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ডিএমপি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাতে ডিবির ডিসি (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ সমকালকে বলেন, নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও সিসিটিভির ফুটেজ দেখে লেখক-প্রকাশক ও ব্লগার হত্যায় জড়িত ছয়জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে আরও অনেক উগ্রপন্থি এসব হত্যার ঘটনায় জড়িত। তাদেরও শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। শনাক্ত হওয়া ছয়জনকে ধরতে আমরা জনগণের সহায়তা চাচ্ছি।

নিহত প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক এ ব্যাপারে সমকালকে বলেন, 'এখন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে লেখক-প্রকাশক ও ব্লগার হত্যার তদন্তে অগ্রগতি হয়ে থাকলে ভালো।'

এ ব্যাপারে অভিজিৎ রায়ের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় সমকালকে বলেন, পুলিশ তো একেক সময় একেক কথা বলছে। একবার বলছে অভিজিতের খুনিরা রিমান্ডে, আবার বলছে খুনিরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এর আগে তারা বলল, হত্যাকারীরা কঠোর নজরদারিতে আছে। এখন আবার হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের ছবি প্রকাশ করে পুরস্কার ঘোষণা করেছে। এখন কোনটা বিশ্বাস করব, বুঝতে পারছি না। এ দেশে কোনো হত্যার বিচার হচ্ছে না। এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে যদি প্রধানমন্ত্রী বা তার সরকার কঠোরভাবে নজর না দেয় তবে জনগণের আস্থা থাকবে না। তারপরও আশায় আছি অভিজিৎ ও অন্যান্য ব্লগার, প্রকাশক ও শিক্ষক হত্যার বিচার হবে।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, শনাক্ত হওয়া ছয় উগ্রপন্থি যাতে বিদেশে পালাতে না পারে, সে ব্যাপারে পুলিশ উদ্যোগ নিয়েছে। বিমানবন্দর ও সীমান্তে তাদের ছবিসহ তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, শনাক্ত হওয়া ছয়জন দেশে পলাতক রয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মাদ্রাসা ও কলেজের ছাত্র।

এবিটির শীর্ষ সংগঠক শরিফুল :পুলিশ বলছে, এবিটির শীর্ষ সংগঠক শরিফুল। তিনি সাকিব, শরিফ, সালেহ, আরিফ এবং হাদী-১ নামে পরিচিত। তার গ্রামের বাড়ি বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে। সংগঠনের সদস্যদের সামরিক ও আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন। বিভিন্ন অপারেশনের সদস্য নির্বাচন ও সংগ্রহে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। টিএসসিতে অভিজিৎ রায় হত্যা, গোড়ানে নীলাদ্রি চ্যাটার্জি নিলয় হত্যা, লালমাটিয়ায় আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে হত্যাচেষ্টা ও সাভারে শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যা মামলার তদন্তে তার সরাসরি উপস্থিতি এবং নেতৃত্ব দেওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। তাছাড়া শরিফুল জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা, তেজগাঁওয়ে ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নাজিমুদ্দিন সামাদ এবং কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয় হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজে তার উপস্থিতি ধরা পড়ে। তার সম্পর্কে তথ্যদাতাকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ।

কে এই সেলিম : পুলিশ জানায়, এবিটির গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সংগঠক সেলিম। ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২ নামে তিনি সংগঠনে পরিচিত। তিনি শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলেন। তার উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি, চশমা পরেন, গায়ের রঙ শ্যামলা। তার বাড়ি উত্তরবঙ্গে। প্রকাশক দীপন হত্যা, ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা, নীলাদ্রি নিলয় হত্যা, মিরপুরের স্কুলশিক্ষক হত্যাচেষ্টায় সেলিম সরাসরি জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া জবি ছাত্র নাজিমুদ্দিন এবং কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যাকাণ্ডেও তার সরাসরি উপস্থিতি ও সার্বিক নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি এরই মধ্যে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে। সেলিম এবিটি সদস্যদের সামরিক, আইটি ও কথিত জিহাদ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তার সম্পর্কে তথ্যদাতাকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

বাবুসহ একাধিক হত্যায় জড়িত সিফাত :এবিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সিফাত। তিনি সংগঠনে সামির ওরফে ইমরান নামেও পরিচিত। তার বাড়ি সিলেট অঞ্চলে। তিনি সংগঠনের সামরিক শাখার অন্যতম সদস্য। আজিজ সুপার মার্কেটে দীপন হত্যা, সাভারে শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যাকাণ্ডে তার সরাসরি অংশগ্রহণের বিষয়টি পাওয়া যায়। সিফাত এসব কিলিং মিশনের সার্বিক সমন্বয়কারী ও জড়িতদের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। তার ব্যাপারে তথ্যদাতাকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

এবিটির সামরিক শাখার সদস্য সামাদ :এবিটির সামরিক শাখার সদস্য আ. সামাদ। তিনি সংগঠনে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদ নামে পরিচিত। তার বাড়ি কুমিল্লা অঞ্চলে। প্রকাশক আহমেদ রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টার সার্বিক সমন্বয়কারী ও অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি সংগঠনের সদস্যদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ করতে আলোচনা বা বয়ানে অংশ নিতেন। তার সন্ধানদাতাকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ।

শিহাব চট্টগ্রামের বাসিন্দা :এবিটির সদস্য শিহাব চট্টগ্রামের বাসিন্দা। তিনি সংগঠনে সুমন ওরফে সাইফুল নামে পরিচিত। তিনি সংগঠনের সামরিক শাখার অন্যতম সদস্য। প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টায় তিনি সরাসরি অংশ নেন। এবিটির আরও কয়েকটি অপারেশনে তার জড়িত থাকার তথ্য পুলিশের কাছে রয়েছে বলে দাবি করা হয়। তার ব্যাপারে তথ্যদাতাকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

নানা নামে পরিচিত সাজ্জাদ :এবিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সাজ্জাদ সংগঠনে সজীব ওরফে সিয়াম ওরফে শামস নামে পরিচিত। তার বাড়ি ঢাকার পাশের একটি জেলায়। তিনি সংগঠনের সামরিক শাখার একজন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল নেতা। অভিজিৎ রায় হত্যা, নীলাদ্রি হত্যায় সরাসরি তিনি জড়িত ছিলেন বলে দাবি করছে পুলিশ। এ ছাড়া তিনি সাভারে রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যাকাণ্ডেও সরাসরি অংশ নেন। তার ব্যাপারে তথ্যদাতাকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates