হিলফ আল ফুজুল : তত্কালীন আরবে কারণে-অকারণে গোত্র থেকে গোত্রে বছরের পর বছর নানা রকম লড়াই ও যুদ্ধ চলতেই থাকত। একটি যুদ্ধ মুহাম্মদ (সা.) তাঁর চাচা যুবায়ের ইবনে মুত্তালিবের সঙ্গে থেকে প্রত্যক্ষ করেন। ভাতৃঘাতী এই যুদ্ধের মধ্যে বিভিন্ন গোত্র প্রধানকে নিয়ে একটি সভা হয়। এতে মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুপ্রেরণায় হিলফ আল ফুজুল নামক একটি সংগঠনের জন্ম হয়। হিলফ আল ফুজুলের সদস্যগণ শপথ করলেন, তাঁরা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা, অত্যাচারীদের প্রতিরোধ, বিদেশিদের জানমাল রক্ষা এবং অসহায়দের সাহায্য করবেন। এই প্রথমবারের মতো হিজাজে গোত্রানুগত্যের গণ্ডি অতিক্রম করে ন্যায়ানুগত্যের সংকল্পে আন্তগোত্রীয় একটি সংঘ স্থাপিত হলো। এভাবে অক্ষরজ্ঞানহীন এক যুবক মুহাম্মদ কৈশোরে মক্কার জনপদে, সন্নিহিত পাহাড়-উপত্যকা-প্রান্তরের উন্মুক্ত চারণভূমিতে, যুদ্ধক্ষেত্রে এবং দেশ-বিদেশের বাজারে চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের কারণে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরতে সমর্থ হন। তখনো তিনি নবী হননি। ৫৯১ খ্রিস্টাব্দ : বয়স তখন ২০। কিশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করছেন মুহাম্মদ। চাচা আবু তালিবের পরামর্শে মক্কার ধনবতী নারী খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসায় নিযুক্ত হলেন। ব্যবসায় নিযুক্ত হয়ে তিনি খাদিজার প্রতিনিধি হয়ে সিরিয়া গমন করেন। ‘ইসলামী বিশ্বকোষ’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, খাদিজা (রা.)-এর প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবসা উপলক্ষে তিনি ইয়েমেনও গিয়েছিলেন। (ইসলামী বিশ্বকোষ, দ্বিতীয় খণ্ড, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ২৯৩-২৯৪) সিরিয়া যাত্রাকালে মুহাম্মদ (সা.) একটি গির্জার পাশে অবস্থিত গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। গির্জার ধর্মযাজক এ দৃশ্য দেখে মন্তব্য করেন, ‘এই গাছের নিচে নবী ছাড়া আর কেউ কখনো বিশ্রাম নেয়নি।’ (ইবনে হিশাম, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১৭৭) ইতিহাসবিদরা বলেন, ৫০০ বছর আগে হজরত ঈসা (আ.) একবার এ পথে যাত্রাকালে এই গাছের নিচে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। সে কথা স্মরণে রেখেই পাদরি উপরোক্ত মন্তব্য করেন। মুহাম্মদ (সা.) তাঁর ২৩ বছর বয়স পর্যন্ত খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। মুহাম্মদ (সা.)-এর তত্ত্বাবধানে খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসার দ্রুত প্রসার ও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দ : এ বছর রাসুল (সা.)-এর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে। মক্কার বিশিষ্ট ‘তাহেরা’ (পবিত্র) বলে পরিচিত খাদিজা (রা.), মুহাম্মদ (সা.)-এর সুচরিত্রের গুণে মুগ্ধ হয়ে বিবাহের প্রস্তাব দেন। মুহাম্মদ (সা.) এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। অথচ মুহাম্মদ (সা.) তখন মাত্র ২৪ বছরের এক তরুণ। [সূত্র : মাওলানা মমতাজ উদ্দীন আহমাদ : নবী পরিচয়, ইউপিএল, ঢাকা, ২০০০ (প্রথম প্রকাশ ১৯৬২), পৃষ্ঠা ৪১-৪২] মুফতি শফি (রহ.) এ বিষয়ে নতুন তথ্য দিয়ে বলেছেন, মুহাম্মদ (সা.)-এর বয়স তখন ছিল একুশ। কোনো কোনো ঐতিহাসিক ২৯, ৩০, ৩৭ বছর যে বলেছেন, তার কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। (মুফতি শাফি, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ২৬) পাশাপাশি খাদিজা (রা.)-এর বয়স তখন ছিল ৪০, মতান্তরে ৪৫। উপরন্তু খাদিজা (রা.) এ সময় পর্যন্ত আরো দুটি বিয়ে করেছিলেন এবং দুই স্বামীরই মৃত্যু হয়। এ ছাড়া এ দুই স্বামীর ঘরেই অন্তত চারজন সন্তান ছিল। বিবাহের প্রস্তাব গ্রহণের ক্ষেত্রে মুহাম্মদ (সা.)-এর সিদ্ধান্ত সঠিক বলে পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়। কারণ তাঁর জীবনে খাদিজা (রা.)-এর অবদান পরম আশীর্বাদ বয়ে এনেছিল। প্রথমত, তাঁর অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছিল। তবে সবচেয়ে বড় যে সমর্থনটি এ বিয়ের মাধ্যমে সংঘটিত হলো, তা হচ্ছে, খাদিজা (রা.) নবীর জীবনে নানা বিপদ-আপদে পরম অভিভাবকরূপে আবির্ভূত হলেন। এ বিয়েতে আল্লাহ তায়ালার সরাসরি ইশারা ছিল। এই সময়টা ছিল মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়ত পাওয়ার সময়। তিনি নির্জনে ধ্যানে কাটাতে শুরু করেন। এমনকি জাবালে নূর পর্বতের সুউচ্চ হেরা গুহায় যখন নবী (সা.) দীর্ঘ ধ্যানে মগ্ন ছিলেন, তখন অধিকাংশ সময় খাদিজা (রা.) মক্কা শহর থেকে ওই পর্বতের উঁচু গুহায় উঠে তাঁর জন্য খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। নবুয়ত নিয়ে যখন মুহাম্মদ (সা.) বিভ্রান্ত, সন্দিহান এবং শঙ্কিত, তখন আশ্চর্যজনকভাবে খাদিজা (রা.) তাঁকে শক্তি জুগিয়েছেন। খাদিজা (রা.)-ই প্রথম বুঝতে পারেন, মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে, ফলে তিনি সাহসের সঙ্গে স্বামীর পাশে দাঁড়ান। মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে এই সময় এমন একজন ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন ছিল। তাঁদের দাম্পত্য জীবন সর্বমোট ২৪ বছর অব্যাহত ছিল। খাদিজা (রা.)-এর মৃত্যু পর্যন্ত নবী (সা.) অন্য কোনো বিয়ে করেননি। দাসপ্রথাবিরোধী অভিযানের শুরু : নবী (সা.) মানবজাতির মুক্তির জন্য পরবর্তীকালে আল্লাহ তাআলার প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামের যেসব সনদ উপস্থাপন করেছিলেন, তা ছিল সব মানুষের জন্য সাম্য প্রতিষ্ঠা। সবাই সবার ভাই, কেউ কারো প্রভু নয়। নবুয়তপ্রাপ্তির আগে থেকেই আল্লাহ সোবহানাহু তাআলা তাঁর দিলে এই চেতনা ঢেলে দিয়েছিলেন। এর একটা প্রমাণ দেখি জায়েদ (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর একটি সম্পর্ককে কেন্দ্র করে। বিবাহের পর খাদিজা (রা.) জায়েদ ইবন হারিছা নামক তাঁর ক্রীতদাসকে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত করেন। এই প্রথমবারের মতো মুহাম্মদ (সা.) ক্রীতদাসের মালিক হলেন। আরবের দাসপ্রথা তাঁর হূদয়কে আগেই ভারাক্রান্ত করে রেখেছিল। তিনি জায়েদকে মুক্ত করে দিলেন। পরে যখন জায়েদ তাঁর পিতার সঙ্গে স্বগৃহে ফিরতে অসম্মত হলেন, তখন তাঁর দাসত্বজনিত গ্লানি মুছে দেওয়ার জন্য মুহাম্মদ (সা.) কাবায় সমবেত ব্যক্তিদিগকে সম্বোধন করে বললেন : উপস্থিত ব্যক্তিগণ! তোমরা সাক্ষী রহিলে যে জায়েদ এখন হইতে আমার পুত্র; সে আমার উত্তরাধিকারী হইবে, আমি তাহার উত্তরাধিকার পাইব। পরবর্তীকালে জায়েদ এবং তাঁহার পুত্র উসামা (রা.) মুসলিম ইতিহাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। (ইসলামী বিশ্বকোষ, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ২৯৪-২৯৫) পৌত্তলিকতাবিরোধী মন : প্রথম থেকেই মুহাম্মদ (সা.) পৌত্তলিকতাবিরোধী মনোভাবের ছিলেন। মুসনাদ ইবন হাম্বলের বর্ণনায় দেখা যায়, খাদিজা (রা.)-এর এক প্রতিবেশিনী এক রাতে মুহাম্মদ (সা.)-কে বলতে শুনেছিলেন, হে খাদিজা, আল্লাহর কসম, আমি কখনো লাত আর উয্যার পূজা করব না, আল্লাহর কসম, কখনোই তাদের অর্চনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তখন খাদিজা (রা.) বললেন, দূর হোক লাত আর উয্যা। লাত ও উয্যা ছিল আরবদের দুটি প্রতিমা, যাদের অর্চনা করে তারা ঘুমুতে যেত। আরবের সেই ঘোর পৌত্তলিকতার যুগেও ‘হানিফ’ নামে খ্যাত কিছু লোক ছিলেন, যাঁরা এক আল্লাহর বিশ্বাসমূলক লুপ্তপ্রায় ‘মিল্লাতে ইব্রাহিম’-এর অনুসারী ছিলেন এবং মূর্তিপূজার বিরোধিতা করতেন। মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্বপুরুষরা বেশির ভাগ এই মতাবলম্বী ছিলেন। ইসলামের দাওয়াতের আগে আরবে কাবা ঘরের পুনর্নির্মাণের পর কুরাইশ গোত্র তাদের কৌলীন্য এবং পৌরহিত্যের মর্যাদা বৃদ্ধির পরিকল্পনায় একটি নতুন নিয়ম চালু করল যে হজের সময় অন্যদের মতো তারা ‘আরাফাত’-এ যাবে না। হজরত (সা.) এই নিয়ম লঙ্ঘন করে আরাফাতের প্রান্তরে যান এবং কৌলীন্যগত প্রাধান্যের এমন দাবির সক্রিয় বিরোধিতা করেন। এই বিরোধিতা ছিল মুহাম্মদ (সা.)-এর একটি সাহসী পদক্ষেপ। পরবর্তীকালে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৯৮-১৯৯ আয়াতে নবী (সা.)-এর এই প্রতিবাদের সমর্থন প্রদান করা হয়। জীবনে তিনি কোনো দিন প্রতিমা পূজা যেমন করেননি, তেমনি কোনো দেবদেবীর প্রসাদ ভক্ষণ করেননি। একবার কুরাইশ পৌত্তলিকরা তাদের কোনো দেবীর নামে বলি দেওয়া পশুর গোশ্ত তাঁকে খেতে দিয়েছিল। মুহাম্মদ (সা.) প্রত্যাখ্যান করেন এবং তা খেতে অস্বীকার করেন। এভাবে নবুয়তের আগেই পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধাচরণ করে একটি বিশেষ অবস্থানে তিনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ৬১১ খ্রিস্টাব্দ : এ বছর জুন মাসের যেকোনো সোমবার দুনিয়ার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ঘটনাটি ঘটে। এদিন মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রথম পবিত্র কোরআন নাজিল হয়। জাবালে নূর পাহাড়ের হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন মুহাম্মদ (সা.)-কে একজন অলৌকিক ব্যক্তি হঠাৎ এসে বলেন, ‘পড়ুন আপনার পালনকর্তার নামে, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন রক্তপিণ্ড থেকে। পড়ুন, আপনার পালনকর্তা মহান, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না।’ এর উত্তরে মুহাম্মদ (সা.) বললেন, আমি তো পড়তে জানি না। কিন্তু আগন্তুক মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে বারবার আলিঙ্গন করতে থাকেন। মুহাম্মদ (সা.)-এর শরীর ঘেমে যায়। তিনি ভয় পেয়ে যান, আর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে ওপরোক্ত পাঁচটি বাক্য। পরবর্তীকালে তা সুরা আলাকের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ভীত ও কম্পিত মুহাম্মদ (সা.) জাবালে নূর পর্বত থেকে দ্রুত বাড়ি ফেরেন এবং অস্থিরতার সঙ্গে খাদিজা (রা.)-কে বলতে থাকেন, ‘আমাকে কম্বল দ্বারা জড়িয়ে ধরো, আমি হয়তো মরে যাব।’ খাদিজা (রা.) নবীকে আশ্বস্ত করলেন, তাঁর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু ঘটনার বিবরণে তিনিও সন্দিহান হয়ে উঠলেন। খাদিজা (রা.)-এর ভাই ওরাকা ছিলেন তাওরাত কিতাবের বিশিষ্ট পণ্ডিত। তাঁকে ঘটনা খুলে বলার পর তিনি বললেন, আগন্তুক জিবরাঈল (আ.)-ই হবেন, যিনি মুসা (আ.)-এর কাছেও এসেছিলেন। (মাওলানা মমতাজ উদ্দীন : নবী পরিচয়, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৪৩-৪৪) এভাবেই নবুয়তের ঘটনা শুরু হয়েছিল। ৬১১-৬১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অনেকটা গোপনে ইসলামের দাওয়াতি কাজ আরম্ভ হলো। এ অবস্থায় প্রথম যাঁরা মুসলিম হলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন : ১. খাদিজা (রা.) (নারীদের মধ্যে প্রথম), ২. আলী (রা.) (বালকদের মধ্যে প্রথম), ৩. আবু বকর সিদ্দিক (রা.) (বয়স্কদের মধ্যে প্রথম), ৪. জায়েদ ইবনে হারেছা (রা.) (দাসদের মধ্যে প্রথম)। এদের মধ্যে সবার আগে আবু বকর সিদ্দিক (রা.) পাঁচজনকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে প্রথম দিনই নবী (সা.)-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করান, তাঁরা হলেন : ১. যোবাইর ইবনে আওয়াম (রা.), ২. ওসমান ইবনে আফফান (রা.), ৩. আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.), ৪. তালহা (রা.), ৫. সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)। ৬১৫ খ্রিস্টাব্দ : নবুয়তের চতুর্থ বছরে মুহাম্মদ (সা.)-কে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয় : হে চাদর (বা কম্বল) আবৃত নবী উঠুন (মানবজাতির উদ্দেশে) সাবধানবাণী প্রচার করুন আপনার পালনকর্তার বড়ত্ব ঘোষণা করুন। (সুরা মুদাসসির, আয়াত ১-৩) প্রকৃতপক্ষে, তত্কালীন আরব সমাজের বাস্তব সমাজচিত্র পৌত্তলিক চরিত্রের। সব বিষয়েই এরা শিরক করত এবং মূর্তি পূজা ছিল এদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। আর এ কাজের ধর্মনেতা ছিল নবী (সা.)-এর বংশ ও বৃহত্তর পরিবারের লোকেরাই। ফলে নিজের আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দেওয়ার মধ্য দিয়ে নবী (সা.)-এর তাবলিগ শুরু হলো।
লেখক : সিনিয়র উপ-প্রধান তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদপ্তর
Thursday, May 19, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment