তেলের উৎপাদন নিয়ে সৌদি আরব ও ইরানের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক সংঘাতের পাশাপাশি এবার তেলযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজের (ওপেক) সম্মেলন সামনে রেখে এই আশংকা আরও জোরদার হয়ে উঠেছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভিয়েনায় ওপেকের ১৩ সদস্য রাষ্ট্রকে নিয়ে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা নাগাদ সম্মেলনের ফলাফল জানানোর কথা রয়েছে। সম্মেলন ব্যর্থ হলে তেলবাজারে আবার অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। তেলের উপযুক্ত দাম পেতে উৎপাদন কমানোর বিকল্প নেই। তবে পরমাণু চুক্তির পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় তেল রফতানি বাড়াতে চায় ইরান। অন্যদিকে ওপেকের সর্ববৃহৎ তেল উৎপাদক দেশ সৌদি আরব তার উৎপাদন কমাতে রাজি নয়। ওপেকে সৌদির সবচেয়ে বেশি তেল উৎপাদনে প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও সংস্থাভুক্ত ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইরান ছাড়া বাকি সবাই দুর্বল রাষ্ট্র হওয়ায় প্রতাপশালী সৌদি আরব ও তার উপসাগরীয় মিত্রদের বিরুদ্ধে কেউই কথা বলতে পারছে না। এ অবস্থায় সামগ্রিক স্থিতিশীলতা আনতে তেল উৎপাদনে কোটা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে তেহরান। ওপেক সম্মেলনের আগে সৌদি আরব জানিয়েছে, তারা তেলবাজারে অস্থিতিশীলতা চায় না। তেল উৎপাদনের সীমারেখা নির্ধারণে রিয়াদ কোনো প্রস্তাব দেবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সৌদির নতুন তেলমন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ বলেন, ‘যখন প্রয়োজন হবে তখন করব।’ তিনি জানান, আলোচনার টেবিলে ইরান কোনো প্রস্তাব আনলে মনোযোগ দিয়ে তা শুনবেন তিনি। বিশ্লেষকদের মতে, দাম বাড়ানোর জন্য ওপেকের মোট তেল উৎপাদন কমাতে আগ্রহী সৌদি আরব। তবে নিজের স্বার্থে দেশপ্রতি কোটার কথা বলছে না। শুধু সামষ্টিক উৎপাদন সীমারেখা ঠিক করতে চাচ্ছে। এতে মোট উৎপাদনের সিংহভাগই থাকবে সৌদির দখলে। কেননা এই পদ্ধতিতে কোন দেশ কতটুকু উৎপাদন করবে সেটার সুষ্ঠু মীমাংসা করকে চায় না রিয়াদ। কিন্তু ইরান চায় প্রত্যেকের কোটা ঠিক করে দিতে। একইসঙ্গে এতকাল অবরোধের আওতায় থাকায় ইরানি অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে তার তেল উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ বাড়াতে চায় তেহরান। ইরান বলছে, পশ্চিমাদের অবরোধ আরোপের পূর্বে তেহরান যে পরিমাণ তেল উৎপাদন করত, সেই অবস্থায় ফিরে যেতে। দেশটির তেলমন্ত্রী বিজান জানগানেহ বলেন, আমরা ‘সামষ্টিক উৎপাদন সীমারেখা নির্ধারণ’ মানব না। আমরা চাই দেশপ্রতি তেল উৎপাদনের কোটা পদ্ধতি। তার মতে, কোটা পদ্ধতি ছাড়া তেল উৎপাদনের সীমারেখা ঠিক করার কোনো অর্থ নেই। বর্তমানে ওপেকের সর্বমোট তেল উৎপাদন দৈনিক ৩ কোটি ২৫ লাখ ব্যারেল। এর মধ্যে ইরানের উৎপাদন মাত্র ৩০ লাখ ব্যারেল। তেহরান চায় কোটা পদ্ধতিতে তাদের উৎপাদন ৪৭ লাখে উন্নীত করতে। অন্যদিকে সৌদি আরব দৈনিক ১ কোটি ১০ লাখ ব্যারেলের বেশি তেল উৎপাদন করে থাকে। ইরানকে শাস্তি দিতে তেল উৎপাদন তারা রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে। এবারের সম্মেলন ব্যর্থ হলে সৌদি আরব তেল উৎপাদন আরও বাড়াতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। দুই বছর ধরে তেলের বাজারে ধারাবাহিক দরপতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সম্প্রতি যা ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিু। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তেলের দাম দাঁড়ায় ব্যারেলপ্রতি মাত্র ২৭ ডলার। এতে চরমভাবে ধসে পড়ে তেলনির্ভর দেশগুলোর অর্থনীতি। বর্তমানে এ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়ে দাম ৫০ ডলারের বেশি হয়েছে। এখন রিয়াদ তার উপসাগরীয় মিত্রদের নিয়ে নিজেদের সুবিধামতো তেল উৎপাদনের একটা সীমারেখা নির্ধারণ করতে চাচ্ছে। সামগ্রিক উৎপাদনে লাগাম টানার জন্যই ওপেকের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ওপেক শীর্ষ সম্মেলনে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ঐকমত্যের অভাবে সেবার কোনো সমঝোতা হয়নি। ওই সম্মেলন মুখথুবড়ে পড়ার পরেই জানুয়ারিতে তেলের দাম সর্বনিুে চলে এসেছিল। তেলের বাজার অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ভেনিজুয়েলার তেলমন্ত্রী ইউলোগিয়া দেলপিনো বলেন, ওপেককে শক্ত হাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে সংস্থাটির একটা ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল। তবে সৌদি মোড়লে খবরদারি এড়িয়ে ওপেক বাস্তবসম্মত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
ওপেকের তেল খতিয়ান (দৈনিক ব্যারেল)
দেশ উৎপাদন (২০১৫, মিলিয়ন) রিজার্ভ (২০১৪, বিলিয়ন)
সৌদি আরব ১০.০২ ২৬৬.৬
ইরান ২.৮ ১৫৭.৫
ইরাক ৪.০৮ ১৪৩.১
কুয়েত ২.৫১ ১০১.৫
কাতার ০.৬৮ ২৫.২
আরব আমিরাত ২.৭ ৯৭.৮
ভেনিজুয়েলা ২.৪ ৩০০
এঙ্গোলা ১.৭৮ ৮.৪
লিবিয়া ০.৪ ৪৮.৪
ইন্দোনেশিয়া ০.৬৯ ৩.৭
Friday, June 3, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)


No comments:
Post a Comment