বৃহস্পতিবার সংসদে দেওয়া বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন, শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড পরিচালনা, প্রাক প্রাথমিক স্তরে ৩৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এছাড়া ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা, উপবৃত্তি ও স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু রাখা, নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়া, টেকসই ও মানসম্মত মাধ্যমিক শিক্ষার সম্প্রসারণ, ৬৩ হাজার শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, জরাজীর্ণ বিদ্যালয় সংস্কারে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূর ও উচ্চশিক্ষার প্রসারে সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।
বহু বছর পর ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি শিক্ষকদের কল্যাণে 'বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবসর সুবিধা বোর্ডে'র অনুকুলে ৫০০ কোটি টাকা এনডাওমেন্ট ফান্ড এবং ১০০ কোটি টাকা এককালীন অনুদান প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণ ফান্ডের অনুকূলে এককালীন ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এ দুটি তহবিলে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার। অর্থের অভাবে বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষকরা বছরের পর টাকার আশায় হন্যে হয়ে ঘুরছেন। তাদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে সুসংবাদ।
প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আসন্ন বাজেটে শিক্ষা খাতে মোট ৪৯ হাজার ১০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিগত সময়ের হিসাবে সামগ্রিক শিক্ষা খাতে এটাই সর্বোচ্চ বরাদ্দ। শিক্ষায় এ বরাদ্দ চলতি বছরের তুলনায় ১১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে শিক্ষা খাতে (শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়) মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৩১ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। এই অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৩৭ হাজার ১০৬ কোটি টাকা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। এবার উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় মিলে বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মিলে শিক্ষা খাতকে বিবেচনা করা হয়। তবে গত বছরের মতো এবারও প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কেও একীভূত করে 'শিক্ষা ও প্রযুক্তি' খাত করা হয়েছে। শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতেই বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ। এ খাতে ৫২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা ছিল প্রস্তাবিত বাজেটে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৬ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফির সঙ্গে সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট আরোপ ছিল গতবছর বাজেটের আলোচিত ঘটনা। ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের মুখে তা বাতিল করা হয়। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ ধরনের কোনো ভ্যাট আরোপ করা হয়নি। তবে ব্যাপকভাবে জনপ্রত্যাশা থাকলেও শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি, শিক্ষাখাতে নতুন প্রকল্প গ্রহণের কোনো আশ্বাস প্রস্তাবিত বাজেটে দেওয়া হয়নি।


No comments:
Post a Comment