রমজান মাসে বাংলাদেশে ইফতারের অন্যতম আকর্ষণ নানারকম ভাজা-পোড়া এবং মাংসের তৈরি কাবাবসহ নানা উপাদেয় খাদ্য।
ইফতারের খাবারের জন্য বিখ্যাত বাজার হিসেবে পরিচিত পুরনো ঢাকার চকবাজারের স্থানীয়রা বলেন, ইফতারে এধরণের খাবারের চল আছে শত-শত বছর ধরে।
রমজান মাসে বিকেল হলেই চকবাজারের চারদিকে হাঁকডাক, ব্যস্ত চকবাজারের রাস্তার ওপরেই আরো ব্যস্ত ইফতারের খাবারের দোকান।
গোটা মুরগি, খাসির পা, নানারকম কাবাব, ফলমূল, নানাধরনের পানীয়সহ খাদ্যের তালিকাটা বেশ লম্বা।
বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে ইফতারের খাবারে বৈচিত্র্য রয়েছে। ইফতারে মুখরোচক খাবারের দিকে এধরণের আকর্ষণকে কখনো কখনো অসংযমী বলে সমালোচনা করা হলেও ইফতারে সাধ্য অনুযায়ী বিশেষ আয়োজনের কমতি করেন এমন মানুষ খুব কম।
কিন্তু বাংলাদেশে ইফতারে যে খাদ্যাভ্যাস সেটি আসলো কোথা থেকে?
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, মোগল আমল থেকে এই ঐতিহ্যটি তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে এটি বাড়ছে এখন এটি আরো বেড়েছে। ইফতারটা কিন্তু এখন আমাদের সংস্কৃতির একটা বড় অঙ্গ।
চকে যারা ইফতারি বিক্রি করেন তাদের অনেকেরই এটি পারিবারিক ব্যবসা।
আমার দাদারা বিক্রি করেছে, নানারা বিক্রি করেছে এখন আমরা বিক্রি করতাছি। বলেন বংশপরম্পরায় চকবাজারে ইফতার বিক্রি করে আসা মিন্টু মিয়া।
বাপ-দাদারা বলছে নওয়াবদের বাবুর্চির কাছ থেকে উনারা শিখছে। উনাদের কাছ থেকে আমরা শিখছি।
মিন্টু মিয়া বলেন, ঢাকায় এখন চকবাজারের বাইরেও ইফতারের খাবার বিক্রির অন্যান্য কেন্দ্র গড়ে উঠলেও চকের ব্যবসায় কোন ভাটা পড়েনি।
শুধু খাবারে বৈচিত্র্যই নয়। একসময় ইফতারি করার ধরণেও ছিল ভিন্নতা।
পুরনো ঢাকার প্রবীণ একজন বাসিন্দা মোহাম্মদ ইকবাল ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলছিলেন, আগে বিভিন্ন বাসা থেকে ইফতারি পাঠানো হতো মসজিদে মসজিদে, আর সেখানে সেই ইফতারি খাওয়ার জন্য জড়ো হতো এলাকার নানা বয়সী মানুষ।
ষাটোর্ধ্ব ইকবাল বলেন, ছোট থাকতে আমরা মসজিদে রুমাল নিয়া যাইতাম। রুমাল ভইরা আমাদের অনেক ইফতারি দিতো।
সময়ের সাথে সাথে পুরনো ঢাকার বাইরেও ঢাকায় তৈরি হয়েছে আরো অনেক ইফতারির বাজার। মোঘল ঐতিহ্যের খাবারের পাশাপাশি যোগ হয়েছে বৈচিত্র্য। তারপরও চকবাজারের একটি ভিন্ন আবেদন এখনো রয়ে গেছে। হয়তো সবসময়ই থাকবে। (বিবিসি বাংলা)
Wednesday, June 15, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)


No comments:
Post a Comment