যুক্তরাজ্যে খাবার আর রসনা বিলাসে (কারিশিল্প) ব্যাপক জনপ্রিয়তা বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট গুলোর। প্রতিবছর ৩.৬ বিলিয়ন পাউন্ডের ব্যবসা হয় এই শিল্পে। আর এসব ব্যবসার আশি ভাগেরও বেশি নিয়ন্ত্রিত হয় ব্রিটিশ বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হাতে। পঞ্চাশের দশকে শুরু হওয়া এই শিল্প একদিকে যেমন যুক্তরাজ্যের মানুষের মন জয় করেছে, তেমটি এই শিল্পের সাথে জড়িত ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা পরিচয় করিয়েছে বাংলা খাবারকে। আর তার প্রমান মিলেছে কারি এ্যাওয়াডে।
আয়োজকরা জানান এই শিল্প শুধুমাত্র একটি শিল্প নয়, এটি বাংলাদেশের একটি পরিচয়ও। শুধু তাই নয়,দেশটির রাজপরিবার থেকে শুরু করে অতি সাধারণের মানুষের কাছে কারি শিল্পের কদর রয়েছে।যার কারণে এ খাতে প্রতিবছর বড় অঙ্কের বাণিজ্য করছে শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও মালিকেরা। তবে বাণিজ্য থাকলেও সমস্যা রয়েছে অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়ে।যা এবারের কারি অ্যাওয়ার্ড উঠে এসেছে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলীর বক্তব্যে। তিনি জানান, বৃটেনে কারি শিল্পকে ফুটিয়ে তুলতে কাজ করছে দক্ষ রন্ধন কর্মীরা কিন্তু ব্যবসা বাড়লেও জনবল নিয়োগের সুযোগ নেই। তার অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি ব্রিটিশ ভিসা-নীতিকে দায়ী করেছেন। এই নীতির কারণে কারি-শিল্পের কর্মী-সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ব্রিটেনের অর্থনীতির স্বার্থে কারি-শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সে জন্য রেস্টুরেন্ট কর্মী আনার সুযোগ সৃষ্টি করতে ব্রিটিশ সরকারকেই। কারি-শিল্পের চলমান সংকট নিরসনে ১০০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন সরকারের কাছে দাখিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি। নেই। যেখানে শ্রমিক আমদানি থেকে শুরু করে করে এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানির সুযোগ কথা উল্লেখ আছে। তিনি আরও জানান, কারি শিল্পে মূলত বাঙালি খাবারের পসরা বেশি থাকে। তাই বাঙালি বিশেষ করে বাংলাদেশি শ্রমিকরা এ খ্যাতে সবচেয়ে বেশি দ্রুত প্রসার ঘটাতে পারে। তাই বাংলাদেশি শ্রমিকদেরকে উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই।
কারি শিল্পের এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে এ শিল্পের সংকটের সাথে সুর মিলিয়ে লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের নেতা ভিন্স ক্যাবল বলেন, ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) গণভোটের আগে বেশ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে ইইউর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেলে এশিয়া থেকে রেস্টুরেন্ট কর্মী আনার পথ সুগম হবে। কিন্তু এখন প্রতিশ্রুতিদাতাদের ভাব দেখে মনে হয়, তাঁরা ওই ধরনের কোনো প্রতিশ্রুতিই দেননি। ভিন্স ক্যাবল জানান, তিনি স্বল্পমেয়াদি ভিসা চালু করে রেস্টুরেন্ট কর্মী আনার পক্ষে।
এ লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মিলে কাজ করবেন। বাঙালিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বারো হাজার রেষ্টুরেন্ট নিয়ে ১৯৬০ সালে গড়ে উঠা প্রভাবশালী সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএ)। প্রতিষ্ঠানটি রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা সংশ্লিষ্ট মালিক, কর্মীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। এই সংগঠনের বর্তমান সভাপতি খন্দকার পাশা জানান, কারি শিল্প এখন শুধুমাত্র একটি ব্যবসা নয়, এটি ব্রিটিশ অর্থনীতির অপরিহায একটি অংশ। লক্ষাধিক কর্মীর কর্মসংস্থান এখানে। এটি এখন শুধু বাঙালি শিল্পের নয়, বরং বিট্রেনের সংস্কৃতিতে মিশে গেছে এই কারি শিল্পের মাধুর্যতা।
সম্প্রতি বৃটিশ সরকার অলিম্পিকে বাঙ্গালী পাড়া ব্রিকলেনকে অফিসিয়াল কারি ক্যাপিটাল হিসাবে অন্তর্ভূক্তি করে। অলিম্পিকে হালাল ফুড সাপ্লাইয়ের কন্ট্রাক্টও পেয়েছিল বাঙ্গালী প্রতিষ্ঠান। তাই এবারের কারি আওয়াডে কারি শিল্প সংগঠনগুলোর দাবি সরকার চিহ্নিত সমস্যা সমাধানে আমাদের সহায়তা করুক।সেই সাথে এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানির পথ উম্মুক্ত করার আহবান জানান সংগঠনগুলো।
ব্রিটেন সরকারের আশ্বাস পেলে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে এ শিল্পকে সারা ব্রিটেনে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন নেতারা। এছাড়া কারি ব্যাবসার উপর ভ্যাট কমানো এবং ইমিগ্রেশন আইনের কড়াকড়ি একটা সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসতে সরকারের সহায়তা কামনা করেন।
No comments:
Post a Comment