বাংলাদেশে এখন সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে শতাধিক মেডিকেল কলেজ। এরপরেও কিছু শিক্ষার্থী প্রতিবছর এমবিবিএস করতে যাচ্ছে বিদেশে। আর এক্ষত্রে এখন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের দেশ চীন। ভালো-মন্দ মিলে চীনে এমবিবিএস এর সুযোগ সুবিধা কেমন এ নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট মত-পার্থক্য। চীনে ডাক্তারি পড়াশোনা কেমন তার আগে চীনে পড়াশোনার পরিবেশ সম্পর্কে জানা যাক। চীন এখন উন্নয়নের মহাসড়কে দিন দিন তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের নতুন লক্ষ্য হলো শিক্ষাক্ষেত্রে সারা বিশ্বে শীর্ষের দিকে থাকা। চীনে বিশ্বের অনেক দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে পড়তে আসছে। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে শুরু করে যা প্রাচ্য-প্রতীচ্য হয়ে আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত।
এখনে যেমন রয়েছে সুযোগ-সুবিধা তেমনি রয়েছে বেশ কিছু অসুবিধাও। এখানে পড়পশোনা হয় সেমিস্টার সিস্টেমে, যা বাংলাদেশের প্রফেশনাল পরীক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। বছরে দুটো করে মোট দশ সেমিস্টার, সাথে এক বছরের ইন্টার্ণ-মোট ছয় বছরের কোর্স। সেমিস্টার সিস্টেম হওয়াতে পাশ করা অধিকতর সহজ। বাংলাদেশের মতো একেবারে পুরো সিলেবাস পরীক্ষা দিতে হয় না। চীনে সবগুলা অনুমোদিত মেডিকেল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব হাসপাতাল। তাছাড়া আন্তর্জাতিক র্যাংকিংও ভালোই। টিউশন ফি একবারে দিতে হয় না। প্রতি বছর বছর দেয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে তা ৪-৬ লাখ টাকা।
পড়াশোনার সুন্দর পরিবেশ, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, কো-কারিকুলাম এক্টিভিটিজও প্রচুর। সেশন জট বলে কিছু নেই। অপরাধওখুব কম, আইন খুব কড়া। পরীক্ষায় ফেল করলেও রয়েছে আবারও পরীক্ষা দেয়ার সুবিধা। বাংলাদেশের মতো বিভিন্ন আইটেম কার্ড, টার্ম এসব নাই, ভাইভাও খুব সীমিত। মিডটার্ম আর ফাইনাল এই দুটি পরীক্ষা শুধু। আর যদি মান নিয়ে কথা বলতে হয়, সেক্ষেত্রে এখানে যদি চাইনিজ ভাষা শিখতে না পারা যায় তাহলে শিক্ষকদের সাথে আলাপ আলোচনায় অনেক ঝামেলা হয়। সব চেয়ে মারাত্মক সমস্যাটা হয় হাসপাতালে গিয়ে, সেখানে না পারা যায় রোগীর হিস্ট্রি নিতে, না পারা যায় শিখতে। বাংলাদেশের সাথে তুলনা করলে, হাতে কলমে শেখার সুযোগ বাংলাদেশে অনেক অনেক বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চীন থেকে পড়ে আসা বাংলাদেশের নোয়াখালির একজনের সঙ্গে কথা হয় ভয়েস বাংলার। তিনি বলেন, যারা চীনে আসতে চায় একটু গভীর ভাবে ভেবে দেখা উচিত। তবে ইদানীং যে সমস্যাটি সবচেয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে তা হলো চীন থেকে পাশ করে যাওয়ার পর বিএমডিসি একটি পরীক্ষার আয়োজন করে রেজিস্টার করার জন্যে। এই পরীক্ষায় অবশ্যই পাশ করতে হয় যারা বিদেশে এমবিবিএস করে। ছয় মাস পর পর এই পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষায় পাশ করা অনেক কঠিন। এই পরীক্ষা অনেকের জন্যে এক বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এই পরীক্ষায় পাশ করার পরেও আরো একবছর ইন্টার্নশিপ করতে হয়। তখনই মিলবে বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন।থারপর হাতে কলমে করা যাবে ডাক্তারি। যাদের স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া এবং বাংলাদেশে ক্যারিয়ার গড়া, যারা ভাবছেন বিদেশে গিয়ে এমবিবিএস করবেন তাদের উচিত এসব বিষয় ভালো ভাবে জেনে সিদ্ধান্ত নেয়া। প্রকৃতপক্ষে যারা বাংলাদেশ থেকে চীনে পড়তে আসছে, দু’একজন বাদে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অবস্থাই খুব খারাপ।
No comments:
Post a Comment