সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্সের কাছে ৯ উইকেটে হারলো তামিম ইকবালের চিটাগং ভাইকিংস। রাইডার্স ও ভাইকিংসের লড়াই দিয়ে শুরু হয়েছিল বিআরবি প্রিমিয়ার লীগের তৃতীয় আসর। প্রথম লড়াইয়ে ঢাকায় রংপুরের কাছে ভাইকিংসরা হেরেছিল ২ উইকেটে। সেই ম্যাচে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও ঘরের মাঠে কোন প্রতিরোধও গড়তে পারেনি তামিম ইকবালের দল। এর মাঝে ভাইকিংসরা খেলে ফেলেছে ৬টি ম্যাচ আর হাতে জয় ধরা দিয়েছে মাত্র একটি। তাই বাকি চার ম্যাচে টানা জিতলে হয়তো চলতি আসরে সেমিফাইনাল খেলা সম্ভব হবে দলটির। যে দলে তিলকারত্নে দিলশান, সাঈদ আজমল, কামরান আকমল, মো. আমিরদের মতো বিদেশী তারকা আছে সেই দলের কেন এমন টানা হার! ৬ ম্যাচের পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে দেখা যায় বল হাতে একমাত্র মোহাম্মদ আমির ছাড়া আর কোন বিদেশি ব্যাট হাতে দলের জন্য তেমন কোন অবদান রাখতে পারেননি। ব্যাট হাতে দলের সেরা চারজনই দেশি ব্যাটসম্যান- তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, নাঈম ইসলাম ও ইয়াসির আলী। তামিম ইকবালের ভাইকিংসের সঙ্গে ওপেন করতে আসা লঙ্কান ক্রিকেট হিরো দিলশানের ৬ ম্যাচে সংগ্রহ ২০.৩৩ গড়ে মাত্র ১২২ রান। নেই কোন ফিফটিও। বাকি বিদেশিদের অবস্থাতো আরও করুণ। যে কারণে সংবাদ সম্মেলনে দলের ক্রিকেটারদের ব্যর্থতা নিয়ে বলেছিলেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি তো ক্রিকেটার কেনে, পারফরমেন্স কিনতে পারে না। ক্রিকেটে ভালো-খারাপ হতেই পারে। এটা নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু আমি চাইবো ওরা যেন দায়িত্ব নিয়ে খেলে।’
তামিম ইকবালের এ আক্ষেপটা গতকালও পূরণ হয়নি। দলের কোন ক্রিকেটারই দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেনি। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে স্কোর বোর্ডে জমা পড়ে মাত্র ১১১ রান। এর মধ্যে নির্ধারিত ২০ ওভারে হারায় ৮টি উইকেট। সর্বোচ্চ ৩৬ রান আসে তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে। তামিম ইকবাল মোট ছয় ম্যাচে ৩২.৬৬ গড়ে করেন ১৯৬ রান। দিলশানের গতকাল অবদান মাত্র ১৮ রান। আরাফাত সানির বলে বোল্ড হওয়ার আগে কামরান আকমলের সংগ্রহ মাত্র ১২ রান। ২ ম্যাচে তার মোট সংগ্রহও মাত্র ১২ রান। স্বদেশী সাকলাইন সজীবের বলে আউট এনামুল হক বিজয়। তার ব্যাট থেকে আসে ১৪টি রান। ৮০ রানে তিন উইকেট পতনের পর দলের হার ধরতে আসেন আরেক বিদেশী উমর আকমল। সোমবার দুবাইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ করেন। আর ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে সেখান থেকেই চলে আসেন ঢাকায়। এরপর হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রামে। দলের পরাজয় এড়াতে লম্বা সফরে ক্লান্ত উমর আকমলকে মাঠে নামিয়ে দিলেও ৮ বল খেলে তার সংগ্রহ ১ রান। এরপর জিয়াউর রহমান ৩ রান করে আউট হলে ১৬ বলে সমান সংখ্যক রান করে অপরাজিত থাকেন নাঈম ইসলাম। গতকাল ভাইকিংসের হয়ে মাঠে নামেননি ৩ ম্যাচে ৬০ রান করা জীবন মেন্ডিস। এছাড়াও জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক এল্টন চিগুম্বুরাও সর্বশেষ ম্যাচে সন্দেহ জাগানিয়া বোলিং করে দল থেকে বাদ পড়েন।
বল হাতেও রংপুরের বিপক্ষে কোন প্রতিরোধই গড়তে পারেনি ভাইকিংসদের দেশি-বিদেশি কোন বোলারই। আগের ৫ ম্যাচে ৮ উইকেট নেয়া পাকিস্তানের পেসার মো. আমির গতকাল থাকেন উইকেট শূন্য। দলের একমাত্র উইকেটটি পেয়েছেন বাংলাদেশের পেসার শফিউল ইসলাম। এ পর্যন্ত ৬ ম্যাচে তার শিকার ৭টি উইকেট। দেশীয় বোলারদের মধ্যে সফল শুধু এই পেসারই। দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও জহুরুল ইসলাম অমি ১০২ রানের জুটি গড়ে রংপুরের জয়কে সহজ করে দেন। শফিউলের বলে অমি তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ দেন। তবে তার আগে ৪৪ বলে ৪৭ রান করেন ৪টি চার ও একটি ছয়ের মারে। অন্যদিকে বিপিএল’র প্রথম ফিফটি তুলে নেন সৌম্য সরকার। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৮টি চার ও ১টি ছয়ের মারে ৫৬ বলে ৫৮ রান করে। ভাইকিংসের আরেক তরুণ তারকা বোলার তাসকিন আহমেদ এখনও নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে পারেননি। চার ম্যাচে তার শিকার মাত্র ১টি উইকেট। গতকালও তিনি ছিলেন উইকেট শূন্য। এছাড়াও দিলশান, আসিফ, নাঈম ইসলাম একটি উইকেটও নিতে পারেননি।
বিদেশি বোলারদের মধ্যে চিগুম্বুরা ২ ম্যাচে ২টি, সাঈদ আজমল ৩ ম্যাচে ৩টি, দিলশান ৬ ম্যাচে ১টি উইকেট নিতে সক্ষম হয়েছেন। অবশ্য এখনও দলের কোচ মারভান আতাপাত্তু বিশ্বাস করেন তাদের সেমিফাইনালে খেলা সম্ভব। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে হলে অবশ্যই দলের সব বিভাগ ও দেশি-বিদেশি শক্তিকে শেষ চারম্যাচে নিজেদের সেরাটাই উজাড় করে দিতে হবে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment