Social Icons

Tuesday, December 1, 2015

মারাত্মক ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ


  • বন্যার পানি থেকে বাঁচতে ভোলায় নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে ঢাকায় বস্তিতে আশ্রয় নেন পারুল আকতার। কিন্তু বন্যা তার পিছু ছাড়েনি। রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে স্বামী ও চার সন্তান নিয়ে তার বসবাস। এ বস্তির পাশেই একটা লেক। বৃষ্টি হলে লেকের ময়লা পানি তার ঘরে প্রবেশ করে। শুধুমাত্র খাট শুকনা থাকে। পারুল বলেন, এ রুমটাই কেবল আছে আমাদের। যা-ই হোক না কেন, এখানেই থাকতে হবে। ৭ বছর আগে ভোলা থেকে ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। তার মতো প্রায় ২ হাজার মানুষ প্রতিদিনই রাজধানীতে প্রবেশ করে। দারিদ্র্য থেকে পালাতে এ শহরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষ পাড়ি জমিয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন ঢাকায় প্রবেশের হিড়িক লেগেছে অন্য কারণে। কারণ দুনিয়ার জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে। বৃটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এসব বলা হয়েছে। নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, আসছে দশকগুলোতে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ জলবায়ু শরণার্থী পারুলের মতো একই অবস্থা বরণ করবে। সবচেয়ে বড় হতাশা হলো, অনেকে এমন সব শহরে পাড়ি জমাবে, যেগুলো পরিবর্তনরত জলবায়ু মোকাবিলায় আরও কম সামর্থ্যবান। নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মাথাপিছু মাত্র ০.৪ টন কার্বন নির্গমন করে। কার্বন নির্গমনের কারণেই জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মাথাপিছু কার্বন নির্গমনের পরিমাণ যথাক্রমে ১৭ ও ৭.১ টন। এরপরও জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ। তিন দশকের মধ্যে এ দেশের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। ২০৮০ সাল নাগাদ সাগরপৃষ্ঠ হবে প্রায় ২ ফুট উঁচু! হিমালয়ের বরফ গলবে আরও দ্রুতগতিতে, ফলে আরও ফুলে ফেঁপে উঠবে বঙ্গোপসাগর। সাইক্লোন দেখা দেবে আরও বেশি, আরও তীব্রভাবে। লবণাক্ত পানির দরুন পানযোগ্য পানি দূষিত হবে। উর্বর জমি ধ্বংস হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে এসবের অনেক কিছু ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন বাংলাদেশে মানুষের উদ্বাস্তুতে পরিণত হওয়ার বিষয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। কিন্তু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ঢাকায় যারা ভাগ্যের সন্ধানে পাড়ি জমায়, তাদের বেশিরভাগই উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দা। সেসব এলাকা ইতিমধ্যে সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি, বর্ধিত লবণাক্ততা, ধ্বংসাত্মক বন্যা ও সাইক্লোনে ভুগছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, প্রতি বছর কমপক্ষে চার লাখ মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) হিসাব মতে, ঢাকার বস্তিতে বসবাসরতদের ৭০ শতাংশই কোন না কোন পরিবেশগত আঘাতের কারণে এখানে ঠাঁই নিয়েছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ বিভাগের পরিচালক এএস মনিরুজ্জামান খান এমন ১৫০০ পরিবারের সন্ধান পেয়েছেন। এদের প্রায় সবাই পরিবেশ পরিবর্তনকে ঢাকায় আসার সিদ্ধান্তের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মনিরুজ্জামান খান বলেন, ১০ বছর আগেও যেসব এলাকায় স্বাদু পানি পাওয়া যেত, সেখানে এখন আর তা নেই। তিনি এমনও নারী, শিশুদের চেনেন, যাদের খাবার পানি সংগ্রহ করতে অতিরিক্ত ৫ ঘণ্টা হাঁটতে হতো। এ কাজ খুব ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পুরুষরাই এ কাজ করতে শুরু করে। এতে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, তাই পরিবারের আয়-উপার্জনও কমে যেতে থাকে। মনিরুজ্জামান বলেন, যদি আপনি পানি সরবরাহ করতে পারেন, তবে অভিবাসনের সমস্যাটি হয়তো আসতোই না।
শুধু বাংলাদেশই নয়। সারাবিশ্বের মানুষ স্থানান্তরের মধ্যে আছে। আফ্রিকায় খরা এড়াতে কেউ অভিবাসিত হচ্ছে অন্যত্র, আর এশিয়াতে বন্যা এড়াতে! ২০৬০ সাল নাগাদ আড়াই কোটি থেকে ১০০ কোটি মানুষ পরিবেশ অভিবাসীতে পরিণত হতে পারে। এদের প্রধান গন্তব্য হবে বিভিন্ন শহর। যুক্তরাজ্য সরকারের গবেষণা সংস্থা ফোরসাইট বলেছে, ২০৬০ সাল নাগাদ ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় প্লাবনভূমির শহরগুলোতে ১৯ কোটি ২০ লাখ মানুষ অতিরিক্ত বসবাস করবে। এ শহরগুলোর বেশিরভাগই এশিয়ায়। আবার সমস্যার আংশিক কারণ জনসংখ্যা। এশিয়ার মেগাসিটিগুলোর সংকোচনের কোন লক্ষণ নেই। বর্ধিষ্ণু সমুদ্র-উচ্চতার ফলে এ শহরগুলোতে মানুষের গমন বেড়ে যেতে পারে। ২০১১ সালের একটি গবেষণা মোতাবেক ২০৭০ সাল নাগাদ, বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ২০টি শহর উপকূলীয় বন্যার শিকার হতে পারে। এ ২০টি শহরের তালিকায় মুম্বই ও কলকাতার পরে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা। শীর্ষ দশে রয়েছে গুয়াংঝু, হো চি মিন, সাংহাই, ব্যাংকক ও ইয়াঙ্গুন। উন্নত বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ দশে স্থান পেয়েছে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি শহর। এতো চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, শহর উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবেশ অভিবাসীদের বিষয়টি মাথায় রাখার ঘটনা খুব বিরল। এছাড়া, পরিবেশ শরণার্থীদের আন্তর্জাতিক আইনানুসারে কোন আইনি ভিত্তি নেই। তাদের বিষয়ে বাধ্যতামূলক কোন বৈশ্বিক বিধিও প্রণয়ন করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা প্রত্যাশা করেছিলেন, প্যারিসে শুরু হওয়া জলবায়ু সম্মেলনে এ বিষয়টির অগ্রাধিকার থাকবে। কিন্তু পরিবেশ উদ্বাস্তুদের বিষয়টি চূড়ান্ত আলোচ্যসূচি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। 

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates