পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর মোতায়নের দাবি জানালো হলেও ওই রকম পরিস্থির আলমত দেখছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অফিস ত্যাগের সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছি, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ রাখার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করি এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করি। এ নিয়ে শনিবার আইনশৃঙ্খলা বৈঠকও করেছি। সেখানে সারাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। সমস্ত সংস্থার প্রতিবেদন বিবেচনা করে দেখেছি, সেনাবাহিনী মোতায়েন পরিস্থির আলামত দেখা যায়নি বা সৃষ্টি হয়নি। তবে আমরা পরিস্থির উপর নজর রাখছি। জনগণ যাতে নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন এবং ভোট দিতে পারেন তার ব্যবস্থা করবো।
বিরোধী দল লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে উদ্বিগ্ন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সব দলের প্রার্থীরাই সুন্দরভাবে সাচ্ছ্যন্দে প্রচারণা করছেন। কোথাও অনিয়ম হলে আমরা ব্যবস্থাও নিচ্ছি। ইতিমধ্যে মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা রয়েছেন, তারা ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের জানাচ্ছেন।
প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার অর্থদণ্ডও দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও জরিমানা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল করছি। কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অনিয়মকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলেও আমরা জবাবদিহিতা করছি। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
রকিব উদ্দিন বলেন, উন্নত বিশ্বে কোনো বাহিনীই মোতায়েন করা হয় না। সেখানে পুলিশও মোতায়েন করা হয় না। আমাদের এখানে অনেক আগে থেকেই মোতায়েন করা হয়। কেননা, এখানে রাজনৈতিক উন্নয়ন হয় নাই। ইন্ডিয়াতেও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আশাকরি, আমাদের এখানেও রাজনৈতিক উন্নয়ন হবে। তখন রাজনিতিকরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলবেন, হাসি ঠাট্টা করবেন। কিন্তু কেউ কারো মাথায় বাড়ি দেবেন না। এখানেও রাজনীতিতে গুণগতমানের উন্নয়ন হবে বলে আশাকরি। তখন আমরাও কোনো বাহিনী মোতায়েন করবো না।
সাংবাদিকরে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারাও নিরপেক্ষ থেকে বস্তনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করবেন। ইসির অনুমোদিত বৈধ সাংবাদিকরাই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। কিন্তু বেশিক্ষণ ভোটকেন্দ্রে থাকতে পারবেন না। অন্যদের সুযোগ করে দেবেন। এছাড়া গোপন কক্ষে প্রবেশ করা যাবে না, ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া যাবে না, ছবি তোলা যাবে না।
শরীয়তপুরের বিএনপির ৫ মেয়রপ্রার্থীর অভিযোগ : শরীয়তপুরের ৫টি পৌরসভার বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে হুমকি প্রদান ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। গতকাল নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে তারা এসব অভিযোগ করেন।
শরিয়তপুর পৌরসভার মেয়রপ্রার্থী একেএম নাসির উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, সরকার দলীয় প্রার্থী ও তার লোকজন নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছে। তারা জনগণকে বলছে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
তারা আরও প্রকাশ করছে যে, নির্দেশ অমান্য করলে পরিনাম ভয়াবহ হবে। ২৫ তারিখের পর বিএনপির কোনো নেতাকর্মী মাঠে থাকবে না। সকাল ১০টার মধ্যে সব ভোট কাটা হয়ে যাবে।
জাজিরা পৌরসভার মেয়র প্রার্থী সিকদার মো. ইকবাল অভিযোগ করেছেন, সরকার দলীয় লোকজন তার কর্মী-সমর্থককে প্রকাশ্যে নির্বাচন পরিচালনা না করার জন্য নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছে।
ভেদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়রপ্রার্থী বিএম মোস্তাফিজ অভিযোগ করেন, স্থানীয় সরকার দলীয় এমপি নাহিম রাজ্জাক নির্বাচনী এলাকায় মিটিং ও নির্বাচনী প্রচার অভিযান চালাচ্ছেন। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারকে অবহিত করলেও কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। একই অভিযোগ করেছেন ডামুড্যা পৌরসভার মেয়রপ্রার্থী মো. আলমগীর হোসেন।
নড়িয়া পৌরসভার মেয়রপ্রার্থী মো. রেজাউর রহমান অভিযোগ করেছেন, সরকারদলীয় লোকজন ও ক্যাডাররা তার বাড়িতে মোটরসাইকেল বহরে মহড়া নিয়ে হুমকি ও
ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। তার কর্মী-সমর্থকরা কোথাও কোনো পোষ্টার লাগাতে ও লিফলেট বিলি করতে পারছে না। স্বয়ং সরকার দলীয় এমপি ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার বিষয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন। যেখানে স্বয়ং সরকার দলীয় এমপি নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সেখানে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে তার অভিযোগ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারেননি বলে ওই প্রার্থী তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
মনোনয়ন বাতিল হয়নি কলারোয়ার সেই প্রার্থীর : সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে ‘অবৈধভাবে’ একজন মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণের অভিযোগে সেখানকার রিটার্নিং অফিসারকে বরখাস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে সেই প্রার্থীর প্রার্থিতা বহাল রেখেছে নির্বাচন কমিশন। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন সেখানকার স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী মো. আরাফাত হোসেন। নির্বাচন কমিশনে করা ওই অভিযোগে বলা হয়, রিটার্নিং অফিসার মো. আবুল হোসেন টাকার বিনিময়ে আমিনুল ইসলাম লাল্টুর প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেন। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করা লাল্টুর পদত্যাগপত্র মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের তদন্তে যা প্রমাণিত হয়েছে। তবে দুর্ভাগ্যজনক কারণে ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনে স্বার্থে লাল্টুর মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান আরাফাত হোসেন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment