প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতি বাংলাদীদারুল আলম চৌধুরী, শিক্ষক (প্রা.) আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢাকা
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজকের পড়াশোনায় তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। বাংলা বিষয়ের ওপর পড়াশোনায় আজ তোমাদের জন্য রয়েছে শখের মৃৎশিল্প।
প্রশ্ন : মৃৎশিল্পের প্রধান উপাদান কী?
উত্তর : মাটির তৈরি শিল্পকর্মকে বলা হয় মৃৎশিল্প। এ শিল্পের প্রধান উপাদান হলো মাটি। তবে সব মাটি দিয়ে এ কাজ হয় না। দো-অাঁশ মাটি তেমন আঠালো নয়, আর বেলে মাটি ঝরঝরে_ তাই এগুলো দিয়ে মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প হয় না। মৃৎশিল্পের জন্য দরকার পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এ ধরনের মাটি বেশ আঠালো। আবার এঁটেল মাটি হলেই যে তা দিয়ে শিল্পের কাজ করা যাবে তাও নয়। এর জন্য দরকার অনেক যত্ন আর শ্রম। দরকার হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞান। প্রয়োজন কিছু ছোটখাটো যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম। মৃৎশিল্পের প্রধান উপাদান মাটি হলেও এর সঙ্গে দরকার একটা কাঠের চাকা। এই চাকায় নরম মাটির তাল লাগিয়ে নানা আকারের মাটির পাত্র ও নানা জিনিস তৈরি করে কুমোররা।
প্রশ্ন : কয়েকটি মৃৎশিল্পের নাম লিখ।
উত্তর : মৃৎশিল্প আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প। এ দেশের কুমোর সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে তৈরি করে আসছে নানা রঙের, নানা বর্ণের ও বিভিন্ন রকমের মৃৎশিল্প। আমাদের দেশের কুমোরদের তৈরি কয়েকটি মৃৎশিল্পের নাম হলো: মাটির কলস, হাঁড়ি, সরা, মটকা, বাসন-কোসন, পেয়ালা, সুরাই, জালা, পিঠে তৈরির ছাঁচ, পুতুল, ও নানারকম পশু, পাখি মাছ ইত্যাদি। এছাড়া আমাদের দেশে এক সময় গড়ে উঠেছিল অনিন্দ্যসুন্দর মৃৎশিল্প টেরাকোটা। বাংলায় অনেক পুরনো মৃৎশিল্প এ টেরাকোটা।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের কোথায় পোড়ামাটির প্রাচীন শিল্প দেখতে পাওয়া যায়?
উত্তর : হাঁড়ি-কলসি ছাড়াও আমাদের দেশে এক সময় গড়ে উঠেছিল সুন্দর পোড়ামাটির ফলকের কাজ। এর অন্য নাম, টেরাকোটা। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো এ শিল্প। বাংলাদেশের ময়নামতির শালবন বিহার। বগুড়ার মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ স্তূপ, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির ও বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে পোড়ামাটির প্রাচীন শিল্প দেখতে পাওয়া যায়। সমপ্রতি নরসিংদীর ওয়ারি বটেশ্বরে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে নানা ধরনের সুন্দর মাটির পাত্র আর ফলক।
প্রশ্ন : মাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয় কেন?
উত্তর : বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাওয়া যায় মাটির শিল্পে। এটা এ দেশের নিজস্ব শিল্প। হাজার হাজার বছর ধরে এ দেশে মাটির শিল্পের চর্চা হয়ে আসছে। এ দেশের মানুষের মন যে শিল্পীর মন, এ মাটির শিল্প তারই পরিচয় বহন করে। ময়নামতির শালবন বিহার, বগুড়ার মহাস্থানগড়, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে দেখা যায় পোড়ামাটির ফলকের নিদর্শন। তাই মাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয়।
প্রশ্ন : কথাগুলো বুঝিয়ে লিখ :
(ক) মৃৎশিল্প (খ) শখের হাঁড়ি (গ) টেরাকোটা (ঘ) টেপা পুতুল।
উত্তর : (ক) মৃৎশিল্প : মাটির তৈরি শিল্পকর্মকে বলা হয় মৃৎশিল্প। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ হলো মাটি। তবে সব মাটি দিয়ে এ শিল্পকর্ম হয় না। এর জন্য দরকার পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এ ধরনের মাটি বেশ আঠালো। তাই এই মাটি দিয়ে যত্ন আর শ্রমের মাধ্যমে তৈরি হয় মৃৎশিল্প। মাটির হাঁড়ি, কলস, সরা, বাসন-কোসন, পেয়ালা, সুরাই, মটকা, জালা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য মৃৎশিল্প।
(খ) শখের হাঁড়ি : মানুষ শখ করে পছন্দের জিনিস যে মাটির হাঁড়িতে রাখে সেই হাঁড়িকে শখের হাঁড়ি বলা হয়। শখের হাঁড়ি নানা রঙের নানা বর্ণের হয়ে থাকে। কোনো শখের হাঁড়িতে অাঁকা থাকে ফুল-পাতা, আবার কোনো শখের হাঁড়িতে অাঁকা থাকে মাছের ছবি।
(গ) টেরাকোটা : টেরাকোটা শব্দটি ল্যাটিন। 'টেরা' অর্থ মাটি আর 'কোটা' অর্থ পোড়ানো। মাটি পুড়িয়ে যে শিল্পকর্ম তৈরি হয় তার নাম টেরাকোটা। বাংলার অনেক পুরনো শিল্প এই টেরাকোটা। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো টেরাকোটা। বাংলাদেশের ময়নামতির শালবন বিহার, বগুড়ার মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধস্তূপ, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরে টেরাকোটার কাজ রয়েছে। তাছাড়া বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদেও পোড়ামাটির অপূর্ব সুন্দর কাজ রয়েছে। পোড়ামাটির এ শিল্পকর্ম বাংলার প্রাচীন মৃৎশিল্প।
(ঘ) টেপা পুতুল : মাটি দিয়ে কুমোররা অনেক জিনিস তৈরি করে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম হলো টেপা পুতুল। নরম এঁটেল মাটি টিপে টিপে যেসব পুতুল বানানো হয় তাদের বলা হয় টেপা পুতুল। অনেক রকম টেপা পুতুল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বউ-জামাই, কৃষক, নথ পরা ছোট্ট মেয়ে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)


No comments:
Post a Comment