আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল জানিয়েছে সরকারি খাতের দুর্নীতিতে শুধু ঘুষের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে আত্মসাৎ করা হয় বছরে দেড় থেকে দুই ট্রিলিয়ন ডলার। এই অর্থ বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এই দুর্নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস ও কর রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি দারিদ্র্য টিকে থাকে বলে বুধবার প্রকাশিত আইএমএফের এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে। ‘দুর্নীতি: খরচ ও নির্মূলের কৌশল’ শিরোনামের ওই প্রকাশনায় বলা হয়, শুধু ঘুষেই এই পরিমাণ ব্যয় হলে দুর্নীতির সার্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যয় স্বভাবতই অনেক বড় হবে।
আইএমএফের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ব্যষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ের কৌশলে স্বচ্ছতা, স্পষ্ট আইনি রূপরেখা, বিচারের মুখোমুখি করার বিশ্বাসযোগ্য হুমকি ও অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখার জোরদার প্রচেষ্টা রাখার উপর জোর দিয়েছে আইএমএফ।
তিন দিন আগে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত ‘দুর্নীতিবিরোধী সম্মেলনে’ আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন ল্যাগার্দ বলেন, দুর্নীতির প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক ব্যয়ের কথা সবার জানা।কিন্তু এর পরোক্ষ খেসারত অনেক বিস্তৃত। এটা প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং আয় বৈষম্য সৃষ্টি করছে। সমাজের উপরও দুর্নীতি বিস্তর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর ফলে সরকার আস্থা হারায় এবং নাগরিকদের নৈতিক মানের অবনমন ঘটে।
কেউ কেউ ঘুষকে ‘বাণিজ্যের চাকার জন্য তেল’ হিসেবে দেখলেও আইএমএফ বলছে, এই দুর্নীতির মধ্য দিয়ে কখনও কখনও দেশ থেকে বিনিয়োগ পাচার হয়ে যায়। কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে সংস্থাটি বলছে, অ-নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরতা কখনো কখনো দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে; সঙ্গে ওইগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাতকেও উসকে দেয়।
দুর্নীতিবিরোধী কৌশলের নকশা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নে ১৮৯টি সদস্য দেশের সহায়তার ক্ষেত্রে যথার্থ প্রণোদনামূলক ও নিবৃত্তকরণ কৌশল গ্রহণের উপর জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি শক্তিশালী দুর্নীতিবিরোধী আইন ও বিচারের সক্ষমতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে গবেষণাপত্রে।তবে নীতিমালা শিথিলের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে আও সুবিধা দেওয়া হলে তাতে ঘুষের সুযোগ সীমিত হবে বলে সংস্থাটি বলছে।
ল্যাগার্দের এক নিবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স বলেছে, কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অনুমোদনের বিষয়ে একজন কর্মকর্তাকে যেখানেই ক্ষমতা দেওয়া হোক না তার অপব্যবহারের সুযোগ থাকে। ভয়েস অব আমেরিকা।


No comments:
Post a Comment