ইউরোপের পথে যাত্রা করা শরণার্থী শিশুদের যাত্রাপথে মারধোর ও ধর্ষণের শিকার হতে হয়। কখনও তাদের শ্রমিক হতে বাধ্য করা হয়। সেইসঙ্গে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরার ঝুঁকিতো রয়েছেই। মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘পথে প্রতি পদে বিপদ’ শিরোনামে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে শিশুরা এসব ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “যাত্রাপথের প্রতিটি পদক্ষেপ ভয়ঙ্কর বিপদে পরিপূর্ণ। তার ওপর এখন পর্যন্ত ইউরোপে প্রবেশ করা প্রতি চারটি শিশুর মধ্যে একটি শিশু বাবা-মা বা অভিভাবক ছাড়াই ইউরোপের পথে পা বাড়িয়েছে।”
লিবিয়া থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করা শিশুদের ক্ষেত্রে এই অনুপাত আরও ভয়াবহ। সেখানে ১০টি শিশুর মধ্যে প্রায় নয়টি শিশুই একা যাত্রা করেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানায়, এ বছর ৪ জুন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ৬২ হাজার শরণার্থী ইউরোপ পৌঁছেছে, যাদের এক তৃতীয়াংশই শিশু। ইউনিসেফের তথ্য মতে, এখনও প্রায় দুই লাখ ৩৫ হাজার শরণার্থী লিবিয়ায় এবং ৯ লাখ ৫৬ হাজার শরণার্থী সাহেলে অবস্থান করছে, যারা সমুদ্র পেরিয়ে ইউরোপে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, “মানবপাচারকারীরা যে নারী ও শিশুদের তাদের মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে, এর পক্ষে শক্ত প্রমাণ আমাদের হাতে আছে।” “ইতালির সমাজকর্মীদের দাবি, যাত্রাপথে ছেলে এবং মেয়ে উভয় শিশুদেরই যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়। লিবিয়ায় অবস্থানকালে তাদের জোর করে পতিতাবৃত্তিতে নামানো হয়। আবার অনেক কন্যাশিশু ইতালি পৌঁছানোর পর ধর্ষণের শিকার হয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ে।”
শরণার্থী বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুরস্কের মধ্যে চুক্তির কারণে ওই পথে শরণার্থী আগমন খানিকটা কমে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। কিন্তু এখনও অনেক শরণার্থী আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। আবার ইউরোপের শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রগুলোতে জায়গা না হওয়ায় অনেক শিশুকে ডিটেনশন সেন্টার বা পুলিশি হেফাজতে বন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান জেইদ রাদ আল হুসাইন গ্রিস ও ইতালিতে শরণার্থীদের আটকের বিষয়টি ‘উদ্বেকজনকহারে বাড়ছে’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বিশেষ করে শিশুদের আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন মূল্যায়নে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।
ইউনিসেফের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইউরোপের কিছু কিছু দেশে শিশুদের আশ্রয়ের আবেদন মূল্যায়নে দুই বছর বা তার অধিক সময় লেগে যায়।
ইউরোপে শরণার্থীদের খেলার মাঠ, পরিত্যক্ত সেনা ব্যারাক অথবা অস্থায়ী কোনো শিবিরে রাখা হয়। সেখানে শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায় না। অনেক শিশুর মধ্যে বিদেশ আতঙ্ক দেখা দেয়। অনেকে অন্যদের ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের শিকার হয়।


No comments:
Post a Comment