Social Icons

Friday, October 14, 2016

ব্রাজিলে কেমন আছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা



 চলুন সাও পাওলো, পারানা, ব্রাসিলিয়া, রিও দি জেনেরোসহ বিশাল দেশ ব্রাজিলের বিস্তীর্ণ জনপদে, যেখানে জীবন যুদ্ধে ব্যস্ত আছেন প্রায় ৩ হাজার বাংলাদেশি।

কেমন আছেন ব্রাজিলের বাংলাদেশিরা, ভালো-মন্দের দিনলিপিতে কি তাদের প্রাপ্তি, সমস্যা-সম্ভাবনার কথা জানতে বিভিন্ন শহরের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের কেউ হয়তো ২০১১ সালে  ব্রাজিলে এসেছেন পার্শ্ববর্তী দেশ বলিভিয়া হয়ে, আবার কেউ হয়তো ২০-২৫ বছর ধরে আপন নিবাস করে নিয়েছেন পেলে-নেইমারের দেশকে। এমন এক দেশে তারা আছেন আজ সংখ্যায় ৩ হাজার হলেও অদূর ভবিষ্যতে তা ২০ লাখ হওয়ার অফুরান সম্ভাবনার দেশ ব্রাজিল।


ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চায়না ও সাউথ আফ্রিকার সমন্বয়ে গড়া আন্তঃমহাদেশীয় অর্থনৈতিক ফোরাম ব্রিঙ (ইজওঈঝ)-এর অন্যতম দেশ ব্রাজিলকে সুদূরপ্রসারী টার্গেট করেই ২০১২ সালে রাজধানী ব্রাসিলিয়াতে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ দূতাবাস। ব্রাসিলিয়াতে ৫শ’র মতো বাংলাদেশির বসবাস করতেন। এখন অবশ্য কমে ৩০/৪০ জনে চলে এসেছে। শিল্পনগরী পারানা ও তার আশপাশের এলাকাগুলোতে হাজার দেড়েক আর বানিজ্যিক রাজধানী সাও পাওলোতে বসবাস আরো প্রায় হাজার খানেক বাংলাদেশির। বাকিরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন পুরো ব্রাজিলজুড়ে এমনকি অনেক প্রত্যন্ত জনপদেও।

ঢালাও ইমিগ্রেশনের তেমন কোনো সুযোগ না থাকায় ‘এ্যাসাইলাম’ তথা রাজনৈতিক আশ্রয়ের মাধ্যমেই দেশটিতে বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন শতকরা ৯৯ ভাগ বাংলাদেশি।  

বর্তমানে ৯৯ ভাগ বাংলাদেশী ব্রাজিলের পার্মানেন্ট নাগরিক। তারা ব্রাজিলের পার্মানেন্ট কার্ড ব্যবহার করে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়ায়। 
তবে যাদের জরুরি ব্রাজিলের পার্মানেন্ট কার্ড দরকার তারা 
 এই সময়ের মধ্যেই সুযোগ খুঁজে নেন ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’ বা চুক্তিভিত্তিক বিবাহের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বৈধ হওয়ার।  কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের জন্য চুক্তিভিত্তিক পাত্রীকে ইউএস ডলারের হিসেবে ১ থেকে ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত ক্যাশ পেমেন্ট করতে হয়, ভাগ্য ভালো হলে বিনা পয়সায়ও কর্ম সম্পাদনের কিছু নজির আছে এখানে। তবে সব কিছুই নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট মেয়ে বা ভদ্র মহিলাকে রাজি করানোর ওপর। অন্যান্য দেশের মতো ব্রাজিলেও লাখ ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে রেসিডেন্স কার্ড পাওয়ার প্রথা চালু আছে, যদিও এর সুফল কোন বাংলাদেশি পেয়েছেন বলে জানা যায়নি। 


অবাক বিষয় হলেও সত্য, প্রায় ৩ মিলিয়ন তথা ৩০ লাখ লেবানিজের বসবাস ব্রাজিলে। মূলতঃ তাদের কল্যানেই শিল্পনগরী পারানাসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে গড়ে উঠেছে হালাল ফুড ইন্ডাস্ট্রির এক বিশাল জগত। এক হাজারের ওপর বাংলাদেশি কর্মরত আছেন পারানা অঞ্চলের এই সেক্টরে, যাদের থাকা-খাওয়া-লন্ড্রি ফ্রির পর মাসান্তে হাতে আসে ৬ থেকে ৯০০ ইউএস ডলার। বাংলাদেশিদের কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম ও সততার প্রশংসা করেছেন পারানা অঞ্চলের বেশ কয়েকজন মালিক।

ব্রাসিলিয়ার ৫০০ বাংলাদেশির মাঝে হাতে গোনা কয়েকজনের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট ব্যবসা থাকলেও অধিকাংশই বিভিন্ন শিল্পকারখানায় সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন।

বাণিজ্যিক রাজধানী সাও পাওলোতে যে হাজার খানেক বাংলাদেশি আছেন তাদের শতকরা ৯৯ ভাগই ব্যবসা-বানিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত। তবে এর জন্য তাদেরকে মালপত্র গাড়িতে ভরে যেতে হয় দূর দূরান্তে পূর্ব নির্ধারিত বিভিন্ন মেলায়। ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটারও তাদের পাড়ি দিতে হয় প্রতিনিয়ত। ব্যবসা করার জন্য ব্রাজিলে স্কুলে গিয়ে ব্যবসার ওপর পড়াশোনা করে পাশ করা সাপেক্ষে সার্টিফিকেট বা লাইসেন্স নিতে হয় না। রিফিউজি স্টেটাস নিয়ে বাংলাদেশে যাওয়া-আসা সম্ভব না হলেও চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য চোখ বন্ধ করেই করা যায় বছরের পর বছর। অবশ্য চুক্তিভিত্তিক বিবাহ পরবর্তি রেসিডেন্স কার্ড পাওয়ার মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে রিফিউজি স্টেটাসের, যাওয়া-আসার সুযোগ তৈরি হয় বাংলাদেশে।

চাকরির জগত থেকে দূরে থেকে যারা ব্যবসায়ির খাতায় নাম লিখিয়েছেন, তারাই খুব ভালো আছেন অর্থনৈতিকভাবে। নিয়ম অনুয়ায়ী ব্রাজিলিয়ান প্রভাবশালী লোকজন মেলা বা বাজারের ইজারা নিয়ে থাকে প্রশাসনের কাছ থেকে এবং তাদের কাছ থেকেই ৩ থেকে ৪ দিনের জন্য বিশেষ মূল্যে পোস্ট কিনে নিতে হয় বাংলাদেশিদের। আলাদা করে সরকারকে টেক্স দিতে হয় না এবং প্রক্রিয়াগতভাবে তাদের ব্যবসার শুরুটা এক্ষেত্রে বৈধতার মাপকাঠিতে সাময়িক স্বীকৃত হলেও যেসব আইটেম তথা মালের ব্যবসা বাংলাদেশিরা করেন তা নিয়েই যতো ঘাপলা।


ব্রাজিলে দূর দূরান্তের মেলায় যেসব বাংলাদেশিদের ব্যবসা জমজমাট, তাদের প্রায় সবারই আইটেম দুই নম্বর মাল, অর্থাৎ নাইক-এ্যাডিডাস সহ বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল প্রোডাকশনের রকমারী পন্যসামগ্রী। দেখতে এবং ব্যবহারে অরিজিনাল পণ্যের মতো হওয়াতে রীতিমতো ‘হট বিজনেস’ এই সেক্টরে, যার টোটাল প্রোডাকশনও ব্রাজিলেই। চাইনিজদের স্টাইলে বাংলাদেশিরাও কয়েকটি ফ্লোরসহ ভবন ভাড়া নিয়ে দিনরাত প্রোডাকশনে যায় এ ক্ষেত্রে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে হয় যথারীতি, তবে মেলায় ১ বার যদি মাল পুলিশ নিয়ে যায়, তা পরের ২ মেলাতেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব।

পার্টনারশিপে ব্যবসা করলে চোখ বন্ধ করেই মাস শেষে আসে মিনিমাম ১ হাজার ইউএস ডলার আর অংশীদারিত্ব বাদ দিয়ে চোখ-কান খোলা রেখে একক ব্যবসায় মাসে ১০ হাজার ইউএস ডলারও খুব কঠিন নয়। সাও পাওলোর ডাউনটাউনে ‘ব্রাইস’ এলাকাটি যেন ‘বুড়িগঙ্গার ওপাড় জিঞ্জিরা’। এককথায় ‘ক্রাইম জোন’। সব হয় এখানে, পাওয়া যায় সব কিছুই। ব্রাইস-এর অন্ধকার জগতে অন্যান্য দেশিদের সাথে অবাধ বিচরণ বেশ কিছু বাংলাদেশির। মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্থানীয় পুলিশের একটি অংশ নিয়মিত কমিশন পেয়ে থাকে সাও পাওলোর ‘জিঞ্জিরা’ খ্যাত ‘ব্রাইস’ এরিয়া থেকে।

বাংলাদেশের সাথে ৯ ঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। শুধু সাত সমুদ্র তের নদী নয়, দেশটিতে আসতে মহাসাগরও পাড়ি দিতে হয় বাংলাদেশিদের। ব্রাজিল-বাংলাদেশ দু’দেশসহ অন্যান্য দেশে আছে দালালদের সুবিন্যস্ত নেটওয়ার্ক। ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে একসময় ঢাকা থেকে ফ্লাইটে প্রথমে নিয়ে আসা হতো প্রতিবেশী দেশ বলিভিয়াতে, তারপর চালান করা হতো ব্রাজিলে। ২০১২ সালে একসাখে প্রায় ৪ হাজার বাংলাদেশি পৌঁছে বলিভিয়াতে। তবে বেশ কিছু অঘটনের পর আগেকার রুট আপাততঃ বন্ধ আছে এখন। তারপরও লোকজনের আসা থেমে নেই। বর্তমান রুট অনুয়ায়ি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে দুবাই হয়ে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে ট্রানজিট নিয়ে ফ্লাইটেই চলে যেতে হয় মধ্য আমেরিকার দেশ পানামাতে। সেখান থেকে পোর্ট অব স্পেন পরবর্তি গায়ানার জর্জটাউন হয়ে একাধিক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আবার ফিরে আসতে হয় হয় ‘লাস্ট ডেস্টিনেশন’ ব্রাজিল।

ব্রাজিল পৌঁছানোর পর রিফিউজি কার্ডের জন্য আবেদন করাসহ অর্থের বিনিময়ে অন্যান্য আনুষাঙ্গিক সার্ভিসও দিয়ে থাকে দালালরা ।  অনেক কাঠখড় পুড়িয়েই শুধু নয়, বিশাল চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ধীরে ধীরে ব্রাজিলে গড়ে উঠছে বাংলাদেশ কমিউনিটি। অন্ধকার জগত পেরিয়েই হয়তো একদিন আলো জ্বলে উঠবে ফুটবলের দেশ ব্রাজিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝেও।












No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates