উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস বিরোধী আঞ্চলিক সম্মেলন করতে চান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা উপস্থিত থেকে এই সম্মেলনে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ে একাত্মতা ঘোষণা করবেন। নরেন্দ্র মোদী এই সম্মেলনে বাংলাদেশকে সহ-উদ্যোক্তা হিসাবে রাখতে চান।
ভারতের গোয়ায় গত ১৬ অক্টোবর মধ্যরাতে ব্রিকস বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলনের সাইড লাইনে দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে উল্লিখিত সন্ত্রাস বিরোধী সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হয়। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরাসরি এই প্রস্তাব দেন বলে উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর উগ্রবাদ বিরোধী নতুন এই উদ্যোগে বাংলাদেশের অবস্থান ইতিবাচক বলে সূত্র জানায়। তবে বাংলাদেশ ও ভারত যদি শেষ পর্যন্ত এই সম্মেলন আয়োজনের দিকে অগ্রসর হয় তাহলে কোন কোন দেশ এতে যোগ দিবে তা নিয়ে এখন নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আলোচনা চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নীতিনির্ধারক ইত্তেফাক প্রতিনিধিকে জানান, উগ্রবাদ বিরোধী আঞ্চলিক সম্মেলনে পাকিস্তান থাকছে না এটা নিশ্চিত। সার্ক এর মতো একমাত্র আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান এখন অকার্যকর। ৯ ও ১০ নভেম্বর ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত হয়ে গেছে। ভারত, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল সম্মেলন বর্জন করেছে। বর্জনকারী এসব দেশই নরেন্দ্র মোদীর প্রস্তাবিত সম্মেলনে যোগ দিতে পারে। তবে এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত আঞ্চলিক সম্মেলন এখনো ধারণা পর্যায়ে থাকলেও কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার অন্তত: আরো চারটি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। পাশাপাশি পর্যবেক্ষক হিসাবে অন্য অঞ্চল ও মহাদেশের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিত্ব এই সম্মেলনে থাকতে পারে। গোয়ায় অনুষ্ঠিত দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী সন্ত্রাস বিরোধী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের নেতাদের কাছে বাংলাদেশের সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ বিরোধী পদক্ষেপের সফলতার কথা তুলে ধরার কথা জানান মোদী। মোদী এরপর শন্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার কথা জানান। সেজন্যই উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণকারী এই অঞ্চলের শান্তিকামী দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করতে সম্মেলনের প্রস্তাব দেন বলে সূত্র জানান। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, ভারতে নিযুক্ত হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন। অন্যদিকে ভারতীয় পক্ষে আরো ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশে হাইকমিশনার প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিল্লী সফর ৩-৪ ডিসেম্বর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩ ও ৪ ডিসেম্বর নয়াদিল্লীতে দ্বিপাক্ষিক সফর করবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণেই এই সফর। ২০১৫ সালের জুন মাসে নরেন্দ্র মোদী ঢাকা সফর করেন। তার ফিরতি সফর হিসাবে শেখ হাসিনার নয়াদিল্লী যাবেন। আসন্ন সফরে দুই দেশের মধ্যে কি কি বিষয় আলোচিত হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ঢাকা ও নয়াদিল্লীর কর্মকর্তারা সফরের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন। সফরে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নিয়ে সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা হতে পারে। অনিষ্পন্ন কোনো ইস্যু আসবে কিনা কর্মকর্তারা এখনো সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন। পাঁচ বছর ধরে ঝুলে থাকা অভিন্ন তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে কোনো অগ্রগতি হবে কিনা সে ব্যাপারে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ তিস্তার ব্যাপারে আশাবাদী। বলটি এখন নয়াদিল্লীর কোর্টে। তারাই এ ব্যাপারে জানাবেন ও ভূমিকা রাখবেন। বাংলাদেশের কিছু বলার বা করণীয় নেই।
একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রস্তুতির জন্য ঢাকা থেকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের একাধিক টিম নয়াদিল্লী যাবেন। তখনই সফরসূচি ও অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত হবে।
No comments:
Post a Comment