Social Icons

Wednesday, August 30, 2017

স্বাধীন আরাকানের স্বপ্ন, রুখে দাঁড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানে অন্তত ৮০ বিদ্রোহীসহ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কয়েক দশক ধরে চলা রোহিঙ্গা নির্যাতনের পর এবার মিলছে প্রতিরোধের আভাস। শুধু পালিয়ে বেড়ানো নয়, অস্ত্র হাতে রুখে দাঁড়াচ্ছেন রোহিঙ্গারা। খবর ডয়চে ভেলে।
গত ২৫ আগস্ট ভোরে বিদ্রোহীরা অন্তত ৩০টি পুলিশ ও সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত ১২ জন সদস্য তাতে নিহত হন। এরপর থেকে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় নিপীড়ন ও নির্যাতন। সীমানা পেরিয়ে আবারও দলে দলে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেন রোহিঙ্গারা। তবে বরাবরের মতোই বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ফেরত পাঠাচ্ছে রোহিঙ্গাদের। ফলে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে আটকা পড়েছেন শত শত রোহিঙ্গা। তবে এবার শরণার্থীদের ঢলে একটু পরিবর্তন দেখছেন বিজিবি সদস্যরাও।
অন্যবার পুরো পরিবারসহ রোহিঙ্গারা পালিয়ে এলেও এবার শরণার্থীদের দলে পুরুষদের সংখ্যা একেবারেই কম বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন, পুরুষদের কী হয়েছে, আমরা তাদের (রোহিঙ্গা নারীদের) জিজ্ঞেস করেছিলাম। আমাদের জানানো হয়েছে লড়াই করার জন্য পুরুষরা রয়ে গেছে। নতুন সহিংসতায় পালিয়ে আসাদের ভাগ্য সহায় না থাকলেও সন্তানসম্ভবা হওয়ায় আয়েশা বেগম স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশে কক্সবাজারের একটি ক্যাম্পে। তবে ষষ্ঠ সন্তানের জন্ম দেখতে পারছেন না তার স্বামী। রোহিঙ্গাদের হয়ে যুদ্ধ করার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইনেই রয়ে গেছেন তিনি। তিনি জানান, ‘আমাদের তিনি (আয়েশার স্বামী) নদী পাড়ে এনে বিদায় দিয়েছেন। বলেছেন, বেঁচে থাকলে দেখা হবে স্বাধীন আরাকানে, মারা গেলে বেহেশতে।
আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি আর্মি (এআরএসএ)। অক্টোবর হামলার দায় স্বীকারের পর থেকেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পরিচিত হয়ে উঠেছে এআরএসএ। দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নির্যাতনের শিকার হলেও সাধারণ রোহিঙ্গারা এতদিন সহিংসতা এড়িয়ে চলছিল। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে এবং চলমান সেনা অভিযানের পর সাধারণ রোহিঙ্গারাও হাতে তুলে নিচ্ছেন অস্ত্র। মিয়ানমারে গত অক্টোবরে ৯ পুলিশ হত্যার অভিযোগ ওঠে এক রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।
তারপর থেকে সেদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর আবারও দমন-পীড়ন শুরু হয়। ফলে সত্তর হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা যেসব ক্যাম্পে বসবাস করেন, সেগুলোর একটি এই কুতুপালং। সীমান্তে আসা রোহিঙ্গা নেতা শাহ আলম জানান, আশপাশের তিন গ্রাম থেকে অন্তত ৩০ জন যুবক ‘স্বাধীনতার যুদ্ধে’ যোগ দিয়েছে এআরএসএতে।
তিনি প্রশ্ন করেন, ‘তাদের কী-ইবা করার ছিল! পশুর মতো খুন হওয়ার চেয়ে লড়াই করে মারা যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন তারা। মিয়ানমারের নেতা অং সান সু চি এআরএসএকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন বলে উল্লেখ করেছেন। সংগঠনটির বিরুদ্ধে শিশু যোদ্ধা ব্যবহারের অভিযোগও করেছেন তিনি। তবে এআরএসএ এ ধরনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবেই এখন বিশ্বজুড়ে এআরএসএকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত করানোর উদ্যোগ নিয়েছে মিয়ানমার সরকার। কঠোর বিবৃতি এবং এআরএসএ’র গুলিতে নিহত বেসামরিক নাগরিকদের ছবি প্রকাশ করে বিশ্বে জনমত গড়ে তোলারও চেষ্টা চালাচ্ছে মিয়ানমার। কিন্তু পাল্টা প্রচার চালাচ্ছে এআরএসএ-ও। শুধু মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যেই নয়, বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের কাছেও পৌঁছে গেছে যুদ্ধের ডাক। এআরএসএ বিদ্রোহীদের ভারি অস্ত্র বলতে কিছুই নেই। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে ছুরি, ঘরে তৈরি বোমা এবং আগ্নেয়াস্ত্র। ফলে মিয়ানমারের সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে কতটুকু টিকতে পারবে বিদ্রোহীরা, সে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
কিন্তু তাতে দমছেন না রোহিঙ্গারা। সীমান্তে এএফপিকে এক রোহিঙ্গা যোদ্ধা জানিয়েছেন, আমাদের শত শত যোদ্ধা পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে। আমরা আরাকানকে রক্ষায় শপথ নিয়েছি, সেটা চাকু এবং লাঠি দিয়ে হলেও আমরা করব। কুতুপালং ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা যুবকের মন্তব্য ছিল এমন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের তরুণরাও চিন্তা করছেন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার। আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি, প্রথম সুযোগেই আমরা সীমান্ত অতিক্রম করব। হাজেরা বেগম তিন ছেলেকে নিয়ে গত মাসে সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসেছেন। তার আরও দুই ছেলে রয়ে গেছেন যুদ্ধ করবেন বলে। বাংলাদেশে আসার এক সপ্তাহের মধ্যে তার আরেক ছেলেও যোগ দেন লড়াইয়ে।
এএফপিকে তিনি বলেন, ‘ওরা (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) আমাদের এমনিতেই মারবে। এরা (এআরএসএ) আমাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। আমি আমার ছেলেদের পাঠিয়েছি স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের উত্সর্গ করেছি, আরাকানের জন্য।’

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates