মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বোরকা বা আবেয়া ব্যবসার সিংহভাগ বাংলাদেশি প্রবাসীদের দখলে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছে হাজার হাজার বাংলাদেশি। সমগ্র আমিরাত জুড়ে যতগুলো বোরকা বা আবেয়ার দোকান ও টেইলারিং সপ আছে তার আশি ভাগই বাংলাদেশি মালিকানাধীন বা বাংলাদেশিদের দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু বিগত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ভিসা বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এ ব্যবসায় জড়িত প্রবাসী ব্যাবসায়ীরা।
চাহিদা থাকা সত্বেও দেশ থেকে শ্রমিক আনতে না পেরে ভিন্ন দেশি শ্রমিক দিয়ে এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন বাংলাদেশি প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। ফলে দিনে দিনে গুটিয়ে যাচ্ছে তাদের এ ব্যবসা। তাতে কমে যাচ্ছে রেমিটেন্স প্রবাহ। লোক বলের অভাবে ধীরে ধীরে এ ব্যবসার দখল চলে যাচ্ছে ভিন্ন দেশি ব্যবসায়ীদের হাতে। মূলত এই ব্যবসায় বাংলাদেশি শ্রমিক না থাকার কারণে শ্রমের মূল্য ও আনুষঙ্গিক খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া কাজের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার যে বিষয় তা অন্য দেশি শ্রমিকদের মধ্যে থাকে না। এ বিষয়ে আরব আমিরাত প্রবাসী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সরকারের জোরালো পদক্ষেপে ভিসা চালু হলে এ ব্যবসার আবার নতুন প্রাণ ফিরে পাবে তা না হলে এই ব্যবসা বাংলাদেশিদের হাত ছাড়া হয়ে যাবে। আমিরাতের বিভিন্ন প্রদেশে যতগুলো আবেয়া বা বোরকার দোকান আছে তার অধিকাংশই আজমান, দুবাই ও শারজাহতে অবস্থিত। এসব দোকানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মরত আছেন হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি। আবার অনেকে নতুন নতুন দোকান খুলে কর্মচারীর অভাবে বিপাকে পড়েছেন অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। আবার অনেকে ভিন্ন দেশি কর্মচারী দিয়ে এসব ব্যবসা চালিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু ভিন্ন দেশি কর্মচারী দিয়ে এসব ব্যবসা চালানো মোটেই সহজ নয়।
আমিরাতের আজমান প্রদেশে আছে দুই হাজার আবেয়ার দোকান। এ প্রদেশের আল জাহারা নামক স্থানে তিন শতাধিক বাংলাদেশি বোরকার দোকান ও টেইলারিং সপ আছে। স্থানীয় আরবীসহ বিভিন্ন প্রদেশের প্রবাসীরা এখানে বোরকা বা আবেয়া আর গাউন নিতে আসেন। গুণগত মান আর মূল্যর দিক দিয়ে এখানকার বোরকাগুলো খুবই উৎকৃস্ট। এ জায়গার একাধিক দোকানের মালিক তরুণ ব্যবসায়ী সাজ্জাদুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিন সিকদার, আবদুল আজিজসহ অনেক দোকানদারের সাথে কথা বলে জানা যায় এ ব্যবসায় তাদের করুণ অবস্থা। আল জাহারার এসব ব্যবসায়ীরা জানান, ভিন্ন দেশি কর্মচারী দেশীয় দোকানে রাখাতে ঠিকমত কাজ যেমন হচ্ছে না তেমনি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের রেমিটেন্সগুলো ভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। আর এসব কর্মচারী কিছুদিন কাজও ব্যবসা শেখার পর দেশীয় দোকান থেকে ভিসা ক্যানসেল করে পার্শ্ববর্তী জায়গায় নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করে। ফলে প্রচুর লাভজনক এ ব্যবসা ধীরে ধীরে ভিন্ন দেশিদের দখলে চলে যাচ্ছে। বন্ধ ভিসা খোলা বা ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি না হলে এই ব্যবসা হাতছাড়া হয়ে যাবে অচিরেই।
প্রায় ৩৭ বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেছেন মোঃ আল মামুন সরকার। মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার কসবা থেকে আরব আমিরাতে যান ভাগ্যান্বষণে। চাকরি শেষে বর্তমানে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে আরব আমিরাতে বসবাস করছেন তিনি।বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছিল তার বীরত্বপূর্ণ অবদান। আল মামুন সরকার আরব আমিরাতে আবেয়া বা বোরকা ব্যবসার বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলেন । তিনি জানান, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে বোরকা বা আবেয়া ব্যবসার সিংহভাগ বাংলাদেশি প্রবাসীদের দখলে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছে হাজার হাজার বাংলাদেশি।সমগ্র আমিরাত জুড়ে যতগুলো বোরকা বা আবেয়ার দোকান ও টেইলারিং সপ আছে তার আশি ভাগই বাংলাদেশি মালিকাধীন বা বাংলাদেশিদের দ্বারা পরিচালিত। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এই ব্যবসাও বাংলাদেশিদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তবে আমি বিশ্বাস করি অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
আরব আমিরাতে আমাদের দূতাবাসের প্রচেষ্টায় এরই মধ্যে অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। তাছাড়া বর্তমান সরকার অনেকটাই প্রবাসী বান্ধব। তাই আবেয়া ব্যবসারও সমধান দ্রুতই। প্রবাসের অভিজ্ঞদের মতে, শীঘ্রই আমিরাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করে বাংলাদেশিদের নতুন ভিসা বা ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ চালু করে সকল ব্যবসায়ীদের সমস্যা দূর করতে পারলে আমিরাতে ব্যাবসার এ খাত উজ্জ্বল করে তোলা সম্ভব হবে।
No comments:
Post a Comment