জাপানে বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু; শ্রমবাজারে নতুন সম্ভাবনা
মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন কারণে শ্রমবাজার ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে। সৌদি-কাতার দ্বন্দ্ব, সৌদি আরবের শ্রমবাজার সৌদিকরণসহ অন্যান্য কারণে মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও অন্য দেশগুলোর শ্রমবাজারে দৃষ্টি দেয়া এখন অনেকটাই সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সূত্র ধরেই জাপানের শ্রমবাজারের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে বাংলাদেশ। এরইমধ্যে, জাপান বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেয়া শুরু করেছে। তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি ১৭ জনের প্রথম ব্যাচটি ৩০ আগস্ট জাপান গিয়েছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) জানিয়েছে, বিদেশে চাকরি পাওয়ার লক্ষ্যে বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধনকৃতদের মধ্যে থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রাথমিক অবস্থায় ৫০ জনকে নির্বাচিত করা হয়। পরে গণিত ও জাপানি বর্ণমালা পরীক্ষা এবং শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে আইএম জাপানের প্রতিনিধিরা প্রি-ডিপার্চার ট্রেনিংয়ের জন্য চূড়ান্তভাবে ১৭ জন টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নির্বাচিত করেন। প্রি-ডিপার্চার ট্রেনিং সম্পন্নকারী ১৭ জনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১০ জন ৩০ আগস্ট জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন হিসেবে ৩ বছরের চুক্তিতে গেছেন। বাকি ৭ জন আগামি অক্টোবরে জাপান যাবেন। টেকনিক্যাল ইন্টার্নদের কর্মক্ষেত্রে সফলতা ও কোম্পানির চাহিদার ভিত্তিতে এ চুক্তি আরও ২ বছরের জন্য নবায়ন হতে পারে। জাপানের কোম্পানিগুলোর চাহিদার ভিত্তিতে ২য় ব্যাচে আরও ৩০ জন টেকনিক্যাল ইন্টার্ন পাঠানোর লক্ষ্যে এরইমধ্যে প্রাথমিক বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের প্রি-ডিপার্চার ট্রেনিং অক্টোবরে শুরু হবে। জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন প্রেরণ সংক্রান্ত এ প্রক্রিয়া জাপানের কোম্পানিসমূহের চাহিদার ভিত্তিতে অব্যাহতভাবে চলমান থাকবে। জাপানে কোম্পানি ভেদে টেকনিক্যাল ইন্টার্নরা মাসিক ৬৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। এর বাইরে অতিরিক্ত কাজের জন্য তারা আলাদাভাবে ভাতা পাবেন। ৩ বছর শিক্ষানবিশি প্রশিক্ষণ সফলভাবে সমাপ্তির পর টেকনিক্যাল ইন্টার্নদেরকে দেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠা, কর্মসংস্থানসহ নতুন ব্যবসা শুরুর জন্য সংশ্লিষ্ট জাপানের কোম্পানি ৪ লাখ টাকা করে দেবে। আর ৫ বছর শিক্ষানবিশি প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্নকারীদের কোম্পানি ৬ লাখ করে টাকা দেবে। তবে এজন্য কিছু শর্ত রয়েছে।
টেকনিক্যাল ইন্টার্নরা নিয়োগ দেয়া কোম্পানি থেকে পালিয়ে অন্য কোন কোম্পানিতে যোগ দিতে পারবে না এবং সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া যাবে না। টেকনিক্যাল ইন্টার্নরা জাপানের আইন যথাযথভাবে মেনে প্রশিক্ষণ শেষ করে দেশে ফিরলে তাদের জন্য আইএম জাপান দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। ফলে এই প্রথম ব্যাচের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে, জাপান আরও কত সংখ্যক টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নেবে। তবে বিশেষজ্ঞরা এখনই জাপানের শ্রমবাজারের ব্যাপারে অতিরিক্ত আশা না করার পরামর্শ দিয়েছেন। গত ১০ বছরে মাত্র ৩০০ টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নিয়েছে জাপান। সম্প্রতি বিদেশি কর্মী নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন আইন করায় এশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশটিতে শ্রমবাজার খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশ সরকার। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ শ্রমবাজারগুলো বন্ধ থাকা এবং বাকিগুলোতে শ্রমিক যাওয়ার হার কমে আসায় নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু হয় জাপানের বাজার নিয়ে। ২০২০ সালে জাপানের টোকিও-তে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে অলিম্পিক গেমসের আসর। এ আসর উপলক্ষে দেশটিতে প্রচুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এসময় দক্ষকর্মী পাঠিয়ে এ দেশের বাজার ধরতে চায় বাংলাদেশ। কিন্তু জাপানের শ্রমবাজারে প্রবেশ করা বাংলাদেশের জন্য কষ্টসাধ্য। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশ যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের বেশির ভাগই অদক্ষ। জাপানে এ ধরনের কর্মীর কোনো দরকার নেই। তবে বছরে যে অল্প সংখ্যক টেকনিক্যাল ইন্টার্ন দেশটি বাংলাদেশ থেকে নিয়ে থাকে, সেই সংখ্যা কিছুটা বাড়াবে দেশটি। তবে এখানেও আশার কিছু নেই। সেই সংখ্যা খুবই সামান্য।
তবে বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিতে অসামান্য উন্নতি করায় বাংলাদেশ থেকে জাপানে দক্ষ প্রযুক্তিবিদ নেয়া সম্ভব বলে মনে করছেন অনেকে। গত ২২ আগস্ট জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেটরো) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের জনসম্পদ শীর্ষক সেমিনারেও একই রকম আশা প্রকাশ করেছেন জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। সেমিনারে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মেধাবী ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ অনেক জনবল রয়েছে। তাদের জাপানি কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিয়ে জাপানে নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে, তা দুই দেশের জন্যই কল্যাণকর হবে।
No comments:
Post a Comment